ঘুষ বনিজ্য অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে হরিণাকুন্ডুর সেই শিক্ষা অফিসার অবশেষে শাস্তিমূলক বদলী

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

ঘুষ বানিজ্য অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম নূর এ এলাহীকে অবশেষে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন ক্রমে শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রশাসন ২ এর মোঃ সানাউল্লাহ স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলা শিক্ষা অফিসে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়।

 

সদ্য পিইসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র প্রতি ৫ টাকা ও বিনামুল্যে বই বিতরনে স্কুল প্রতি ৪০ টাকা হারে রেট ফেলে ঘুষ আদায় করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর্ণীতির তথ্যবহ সংবাদ দৈনিক গ্রামের কাগজসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ায় তাকে শাস্তিমূলক বদলী করে শিক্ষা অধিদপ্তর। বদলীর খবর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক সমাজসহ ভুক্তভুগীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।

 

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার এস এম নূর এলাহীর কারনে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছিল এ দপ্তরটি। টাকা ছাড়া কোন কাজ হত না এ দপ্তরটিতে। টাকা না পেলে জেলা শিক্ষা অফিসের বরাত দিয়ে রাজনৈতিক সুপারিশসহ নানা তালবাহানা করা হয়। ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিক্ষকগন বিভিন্ন ধরনের হুমকি, চাকুরী হারানোর ভয় এবং হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেত না। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক সমাজ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, গত তিন বছর আগে হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নূর এ এলাহী যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ¯øীপের টাকা থেকে কমিশন, স্কুল সংস্কারের টাকা থেকে কমিশন, শিক্ষকদের ট্রেনিং দিতে ঘুষসহ এমন কোন খাত নেয় যে তিনি দুর্নীতি করেন না। সদ্য পিইসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র প্রতি ৫ টাকা ও বিনামুল্যে বই বিতরনে স্কুল প্রতি ৪০ টাকা হারে রেট ফেলে ঘুষ আদায় করা হয়েছে।

 

শিক্ষকদের বদলি করতে তিনি স্থানভেদে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ভুক্তভুগীরা জানান। তার অসদাচারণের কারণে দুজন সৎ কর্মকর্তা হরিণাকুন্ডু কর্মস্থল থেকে বদলী হতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান কর্মস্থলে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আঃ মান্নান নামের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসে ৬/১০/১৬ থেকে ১১/১০/১৬ পর্যন্ত তাকে কর্মস্থলে ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত পান। বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকার কারনে ওই কর্মকর্তা তাকে অনুপস্থিত করে দিতে বলেন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে অনুপস্থিত করে দেন।

 

অভিযোগ রয়েছে, হরিণাকুন্ডু শিক্ষা অফিসার হিসেবে গত ৩/১১/১৬ তারিখে নূর এ এলাহী পুনরায় দায়িত্ব নেন এবং শিক্ষকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেন। শিক্ষকদেরকে সবসময় আতংক গ্রস্ত করে রাখেন ও চাকরি খেয়ে নেবেন বলে হুমকি দেন। ভয়ে শিক্ষকরা ঠিকমত পাঠদান করতে পারতেন না। তার সমস্ত অপকর্ম শিক্ষকরা ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করতেন। নূর এ এলাহীর মত একজন কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষার এক মূর্তিমান আতংক বলে হরিণাকুন্ডুর শিক্ষকগণ মনে করেন। গত ১৮/১২/১৬ তারিখে শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় একজন সহকারী শিক্ষক ওই দুর্নীতিবাজ এলাহীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। ওই সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওই শিক্ষককে উপজেলা ছাড়া করবেন বলে হুমকিও দেন।

 

এ ছাড়াও সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের দিয়ে সমাপনী পরীক্ষার কাজ করার কথা থাকলেও তার পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন। পরীক্ষার নাম্বার এন্ট্রিও শিক্ষকদের দিয়ে করিয়েছেন।

 

৪ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও তাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি এবং শিক্ষকদেরকে দিয়ে সমাপনী পরীক্ষার গুরুত্বপুর্ন কাজগুলো করানো হয়েছে। হরিণাকুন্ডু শিক্ষা অফিসে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাকে বাগে নিতে তিনি অনিয়ম করার পথ দেখিয়ে দিতেন। এসব করে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।

 

অভিযুক্ত এ শিক্ষা কর্মকর্তা নূর এ এলাহীর বদলীর বিষয়ে জানতে জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমানের কাছে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.