মোঃ নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারের অলিগতিতে গড়ে উঠছে ভেজাল খাবারের কারখানা । এসব ভেজাল কারখানা থেকে প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সেই ভেজাল খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী রূখতে অপারগ কক্সবাজারের বিএসটিআই অফিস। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অফিস হয়েছে কক্সবাজারে প্রায় ৪ বছর হতে চলেছে। খাদ্যপণ্যের গুনগত মান দেখে বাজারজাত করতে অনুমতি দিয়ে থাকে এই অফিস। এরই মধ্যে কক্সবাজার অফিস থেকে খাবার তৈরির ও লবণ কারখানাসহ অন্যান্য মিলিয়ে অনুমোদন দিয়েছে ১৭৪টি। যার অধিকাংশ লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। তবে এখন অনেকেইে ঘওে বসে বিভিন্ন ধরনের মরিচের গুড়া , হলুদের গুড়া, সরিষার তৈলসহ বেশ কিছু খাদ্যপণ্য বাজারজাত বা ব্যবসা করে যাচ্ছে। সেদিকে কোন প্রকার নজর না থাকার কারণে তাদের গুনগত মান কেমন নিশ্চিত নয়। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সাথে কয়েকটি অভিযান ছাড়া তেমন কোন কাজ চোখ পড়ছেনা বলে জানা গেছে। ২০১৯ সালে কক্সবাজার বীরমুক্তিযোদ্ধা মাঠ সংলগ্ন বিশালাকার অফিস ভবন দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও মাঠ পর্যায়ে তাদের কাজ তেমন চোখে পড়ছেনা। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএসটিআই অফিসে উপপরিচালকসহ ১১জন পদসংখ্যার জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ৬জন দিয়ে পুরো জেলার খাদ্যের মান যাচাইয়ের কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অফিস কৃর্তপক্ষ। কক্সবাজার লবণশিল্পে অধিকাংশ লবণ তারখানা মালিকের বিএসটিআই অনুমোদন নাই। জনবল কম থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভেজাল খাদ্য ব্যবসায়ীরা অবাধে তাদের ভেজাল খাদ্য সামগ্রী বাজারজাত করে যাচ্ছে। তবে বিএসটিআই অফিস সুত্রে জানা গেছে, তারা জেলা প্রশাসনের সাথে নিয়ে বাজাওে ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় অভিযান চালিয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিএসটিআই অনুমোদনহীন পণ্য। যা পর্যটন এলাকা ঘিরে ব্যবসা করে আসছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র।শহরের বেশ কয়েকটি বেকারীর দোকান নিয়মিত পাউরুটি, বিস্কুট, ও সমিতিপাড়া এলকায় কারথানা কওে আচার,চকলেটসহ বেশ কিছু ভেজাল খাদ্য সামগ্রী বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া বাজাজাত করে আসছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কক্সবাজারের পর্যটন এলাকা কলাতলীর লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্টসহ বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখা গেছে বিএসটিআই অনুমোদন নেই এমন পণ্য বিক্রি করতে।
তবে এসব প্রতিরোধ করতে বিএসটিআই উপপরিচালকের কোন ধরনের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জনবল সংকট আছে বলে জানান। এদিকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ভেজাল আচার ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ভেজাল আচার তৈরি করে পর্যটন নগরীর বিভিন্ন আচারের দোকানে ছড়িয়ে দিয়েছে বার্মিজ আচার বলে। তাদের টার্গেট কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের বার্মিজ মোডকে হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে ভেজাল আচার। কক্সবাজারের সমিতিপাড়া, লারপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকাসহ বেশ কয়েক জায়গায় তারা কাজ করছে। কক্সবাজারে বিক্রিত আচার ও চাঁটনী সহ বিভিন্নজাতের আচার সামগ্রী বার্মিজ বলে চালিয়ে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের ব্যবসায়িক লাভের জন্য আসল আচার মওজুত না করে স্থানীয়দের তৈরী করা আচার দিয়ে পর্যটকদের বোকা বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। স্থানীয়দের তৈরী আচার সহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কমদামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে তারা এখন বার্মিজ মার্কেটসহ সৈকত এলাকার সব দোকানে স্থানীয়দের তৈরী করা আচার চাঁটনী মওজুদ করা শুরু করেছে। প্রস্তুতকারীরা করোনার কারনে বেশ কয়েকবছর পর্যটন এলাকা বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি পর্যটন এলাকা চালু হলে পর্যটকটরাও কক্সবাজারে আসতে শুুরু করেছে। আর এই্ সুযোগ হাতে নিতে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নকল আচার ও চাটনী তৈরী করে বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে ভেজাল আচার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তৎপরতা ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ভেজাল আচার তৈরির কারখানা মালিক ও বিক্রেতাদের আটক পরবর্তী সাজা দেয়া হলেও কিছুদিনের জন্য তৎপরতা বন্ধ হয়। পরক্ষনে পর্যটন মৌসুমের শুরুতে বেড়ে যায় এদের তৎপরতা। পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই বিক্রির জন্য এসব ভেজাল আচার তৈরির কারখানায় এবং আচার বিক্রির দোকানগুলোতে মজুদ করা হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকার হরেক রকমের ভেজাল আচার।
সৈকতের লাবণী পয়েন্টের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেটে, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলি পয়েন্ট, বার্মিজ মার্কেট,ও শহরের বিভিন্ন মার্কেটে, হোটেল মোটেল জোনসহ পর্যটক সমাগম এলাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল আচার। এসব আচারের স্থায়িত্ব রক্ষার নামে ব্যবহৃত হচ্ছে রং, কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর ফরমালিন। বার্মিজ মার্কেট, সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট ও হোটেল-মোটেল জোন ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক দোকানে এসব ভেজাল আচার মজুদ করে রাখা হয়েছে।
ঢাকা থেকে আসা শুভ নামের একজন পর্যটক জানান, আমি এখানে এসেছি গত দুইদিন আগে। এসে বার্মিজ মার্কেট থেকে ৪ প্যাকেট আচার কিনি। তারপর হোটেলে গিয়ে আচার খুলে দেখি, সবগুলো আচারে কেমন যেন গন্ধ হয়ে গেছে। খেতে গিয়ে দেখি সব গুলোই বিস্বাদ। প্রতিটা আচারের প্যাকেটের ভিতরেই বালুতে ভর্তি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতেই রয়েছে বেশ কটি ভেজাল আচার তৈরির কারখানা। এদের মধ্যে আছে,সমিতিপাড়া করিমের কারখানা , বাহারছড়ায় আমিনের ১টি,লারপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নোঙ্গর মাদকাসক্ত কেন্দ্রের উত্তর পাশে মোঃ ইউনুচ, ঝিলংজা দক্ষিণ ডিককুলে মোঃ পুতু, শহরের বন্দনপাড়ায় (সমিতিপাড়া) বাটপার জসিম উদ্দিন, লারপাড়া বাসটার্মিনালের দক্ষিণপাশে নেজাম উদ্দিন, লারপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন নোঙ্গর মাদকাসক্ত কেন্দ্রের উত্তর পাশে মোঃ রহিম, , লারপাড়ায় মো ঃ ফরহাদ, পূর্ব লারপাড়ায় নুরুল আজিম, কলাতলি (গৈয়ামতলি ) এলাকায় নুরুল আলম, খুরুস্কুল ও সৈকতপাড়ায় মোঃ হাফেজ সহ আরো বেশ কয়েকজন বাসা ভাড়ায় কিংবা নিজস্ব বাড়িতে কারখানা খুলে ভেজাল আচার তৈরি করে দেদারছে সরবরাহ দিচ্ছে।
তবে কক্সবাজারে দায়িত্বরত বিএসটিআই এর উপপরিচালক আব্দুল হান্নান জানান, জনবল কম থাকার কারণে আমাদের মাঠে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এসব অনুমোদনহীন ফুড কারখানার বিরোদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সরকারি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা যা মূলত সেবা ও পণ্যের গুণমান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গঠিত। বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও অনেকেই তা মানছে না । ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের জারীকৃত অধ্যাদেশ ৩৭-এর মাধ্যমে সেন্ট্রাল টেস্টিং ল্যাবরেটরী এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস ইন্সটিটিউশনকে একীভূত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি পণ্য বিপণন ও শ্রেনীবিন্যাস পরিদপ্তরটিও বিএসটিআই’র সঙ্গে একীভূত হয়।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.