নেতার নাম ভাঙিয়ে খাল দখল !

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদরের বুক চিড়ে প্রবাহিত হয়েছে কহলখালী খাল। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি মাতামুহুরী নদীর সাথে ভোলা খালের সংযোগ ঘটিয়েছে। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের অন্তত দুই হাজার একর কৃষি জমিতে সেচ ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাষনে অতিগুরুত্বপূর্ণ এটি। কিন্তু সম্প্রত দুষণে প্রাণ হারাতে বসেছে এই খাল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পেকুয়া আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে কহলখালী খাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বয়ে গেছে। খালের উত্তর পাশে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক ভবন গুলোর বর্ধিত অংশ খালের ওপর গিয়ে পড়েছে। দক্ষিণ পাশে নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক দুটি ভবন খাল দখল করেই গড়ে ওঠছে। এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে খালের প্রস্থ। বাকি অংশে ময়লা আবর্জনা জমে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

পেকুয়া বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোছাইন বলেন, কহলখালী খালের দক্ষিণ পাশে রিয়েল টেক রিয়েল এস্টেট ও ইম্পালস প্রোপার্টিস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান পৃথক দুটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছে। এরমধ্যে স্থানীয় সাংসদ জাফর আলমের নাম ভাঙিয়ে খাল দখল করছে ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েল টেক রিয়েল এস্টেট। সে সুযোগে অপর প্রতিষ্ঠান ইম্পালস প্রোপার্টিসও খাল দখলে মেতেছে। এখন খালের দুই পাড়ে গাইডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভবন দুটি পেকুয়া বাজারের সাথে সংযুক্ত করতে খাল দখল করছে তাঁরা। এতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে মরে যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এ খাল।

স্থানীয় কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, নিয়মিত বর্জ্য ফেলার কারণে এ খালের পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। অথচ বোরো মৌসুমে এই খাল থেকে কৃষি জমিতে পানি সেচ দেওয়া হয়। এছাড়া দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষায় বৃষ্টির পানি ঠিকমতো খাল হয়ে নদীতে নামতে পারে না। এতে প্রায়ই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন বলেন, কহলখালী খাল দখল করে গড়ে তোলা বহুতল ভবন উচ্ছেদ না করলে খালটি বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই খালটি উদ্ধার করতে প্রথমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।

রিয়েল টেক রিয়েল এস্টেটের পরিচালক সরওয়ার কামাল বলেন, বাণিজ্যিক ভবনটির জমির মালিক স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম। আমরা শুধুমাত্র প্লান অনুযায়ী ভবন নির্মাণের কাজ করছি। নকশায় খালের কোন পরিমাপ নেই। তারপরও আমরা আঠারো ফুট প্রস্থ রেখে দুইপাশে গাইডওয়াল দিচ্ছি।

ইম্পালস প্রোপার্টিসের পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, পেকুয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিনে গিয়ে খাল পরিমাপ করে খুঁটি বসিয়ে দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা গাইডওয়াল দিচ্ছি। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না।

পেকুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসিফ আল জিনাত বলেন, খাল পরিমাপ করে খুঁটি বসানোর বিষয়টি সত্য নয়। খাল দখলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এব্যাপারে জানতে কক্সবাজার-১ আসনের (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদ সদস্য জাফর আলমের মুঠোফোনে কল করে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.