ওয়ান নিউজ ক্রীড়া ডেক্সঃ জিম্বাবুয়ের কাছে বাংলাদেশের লজ্জার হার! যেই দলটা শুধু মাত্র অর্থের কারণে টেস্ট ফরম্যাটে খেলতে অনীহা। সেই দলটাই ১৭ বছর পর বিদেশের মাটিতে পেলো প্রথম টেস্ট জয়। তাও ১১ মাস কোনো রকম টেস্ট না খেলে! সিলেটের অভিষেক ভেন্যু তাই সাক্ষী হয়ে রইলো। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ১৫১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। এই জয়ে দুই টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো সফরকারীরা।
জিম্বাবুয়ে বোলারদের ভেলকির জবাব খুঁজে পেলেন না বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। অন্যদিকে অযাচিত শট খেলার নেশাও ছাড়তে পারলেন না তারা। যার খেসারত গুনে একের পর এক এলেন আর গেলেন। তবে ৩২১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে জেতাটা স্বাগতিকদের কাছে ছিলো চ্যালেঞ্জিংই। কারণ এমন চ্যালেঞ্জে পরিসংখ্যানও বিপক্ষে ছিলো বাংলাদেশের।
চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করে ২৩ টেস্টের মাত্র তিনটিতে জিতেছে স্বাগতিকরা। সার্বিকভাবে টেস্টেও শেষ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের নজির খুব বিরল। আর প্রথম এই টেস্ট জিততে হলে বাংলাদেশকে আগের তিনটি রান তাড়া করার রেকর্ডকেও পেছনে ফেলতে হতো। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের চোয়ালবদ্ধ মানসিকতার অভাবে বরং হারই সঙ্গী হলো মাহমুদউল্লাহদের।
তৃতীয় দিনের শেষ ভাগে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ২৬ রান তোলার পর আলোক স্বল্পতায় খেলা শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের ৩৫ মিনিট আগে। চতুর্থ দিন তাই খেলা শুরু হয় আধা ঘণ্টা আগে। সেই শুরুটা দেখে শুনেই করেন দুই ওপেনার। এই জুটিতে অনায়াসে স্কোর বোর্ডে জমা হয় ৫৬ রান। স্বাগতিকদের এই এগিয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু সুযোগও মিলেছিলো জিম্বাবুয়ের।
কাইল জার্ভিসের ২০তম ওভারের শেষ বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন ইমরুল। সুবর্ণ এই সুযোগ লুফে নিতে পারেননি স্লিপের ফিল্ডাররা। মাসাকাদজা ও টেলরের ফাঁক গলে বল চলে যায় সীমানার বাইরে।
প্রায় জমে যাওয়া এই জুটি ভাঙতে মরিয়া হয়ে উঠে মাসাকাদজার দল। তাতে সিকান্দার রাজার স্পিনই সর্বনাশ ডাকে বাংলাদেশের। অবশেষে আঘাত হানে এই জুটিতে। তার বলে পুল করতে গিয়ে পরাস্ত হন লিটন। বল গিয়ে লাগে সরাসরি উরুতে। সিকান্দার রাজা আপিল করলে অনফিল্ড আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান্ত দেন। জোরালো এই আবেদনে পরে রিভিউ নেয় জিম্বাবুয়ে। তখন সাজঘরের পথই ধরতে হয়েছে ২৩ রান করা লিটনকে।
আগের ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও ব্যর্থ ছিলেন মুমিনুল। আউট সাইড এজ হয়ে গতবার ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। এবার কাইল জার্ভিসের বাড়তি বাউন্সে ভারসাম্য রাখতে না পারায় বল ভেতরের কোনায় লেগে আঘাত করে স্টাম্প। আগের ম্যাচে ১১ রানের পর এই ম্যাচে ফিরলেন ৯ রানে।
তবে ওপেনার ইমরুল কায়েস ক্রিজে জমে যাওয়ার লক্ষ্যেই ব্যাট করে যাচ্ছিলেন। হাফসেঞ্চুরির কাছেই ছিলেন একটা সময়। ৪৩ রানে ব্যাট করতে থাকা এই ব্যাটসম্যান আচমকা প্যাডল সুইপ করতে গিয়েছিলেন লেগ স্টাম্প ফাঁকা রেখে। সেই সুযোগে সিকান্দার রাজার ঘূর্ণি বল সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে।
টেস্ট ক্রিকেট যে ধৈর্য্যের খেলা তা আবারও প্রমাণে পায় মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। অস্থিরতায় এক প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন কোন শট খেলবেন সিকান্দার রাজার বলে। সুইপ করবেন নাকি আত্মরক্ষা? তা বুঝে ওঠার আগেই বল গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় শর্ট লেগে থাকা মিডফিল্ডারের হাতে। আগের বলটিও পরাস্ত হয়েছিলেন রাজার ঘূর্ণিতে। দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকেই করতে যান লেট কাট। যার ফলটা পেলেন পরের বলে। মাহমুদউল্লাহ বিদায় নেন ১৬ রানে।
প্রথম সেশনের আর এক বল বাকি থাকতে পরের সর্বনাশ ডাকেন নাজমুল। তর সয়নি তার! অধিনায়কের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বসেন। ব্রেন্ডন মাভুতার শর্টার লেন্থের লাফিয়ে ওঠা ঘূর্ণি বলটাতে অযথাই লুজ শট খেলেন। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা রাজা তার ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করলেন না। শান্ত ফেরেন ১৩ রান করে।
এরপর অভিজ্ঞ মুশফিকের ওপরই বর্তায় চাপ সামলানোর মূল দায়িত্ব। কিন্তু পুরোপুরি মনোযোগ রাখতে না পারায় চাপের কাছেই নতি স্বীকার করেছেন মুশফিক। প্রিয় স্লগ সুইপ খেলতে গেলেও ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি ঠিকমতো। মাভুতার বাড়তি বাউন্সের স্পিন খেলতে গেলে টপ এজ হয়ে ধরা পড়েন ওয়েলিংটন মাসাকাদজার হাতে। তাতে ৪৪ বল খেলা মুশফিকের ইনিংসটি সামিল হয় উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মিছিলে। সেই মিছিলে এরপর যোগ দেন নতুন নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। মাভুতার লেগ স্পিনে খোঁচা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে।
এরপর লেজ ঝরে পড়তে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। ওয়েলিংটনের বলে তাইজুল পরের ওভারে মাভুতার বলে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন নাজমুল ইসলাম। অপর প্রান্তে টেস্টে ধীরস্থির শট খেলার চাইতে লম্বা শট খেলার দিকে মনোযোগী থাকেন আরিফুল। সেই লম্বা শট খেলতে গিয়েই ৩৮ রানে ওয়েলিংটনের বলে ধরা পড়েছেন রেগিস চাকাভার হাতে।
জিম্বাবুয়ের স্পিনাররই বেশ সফল ছিলেন এই ইনিংসে। ব্রেন্ডন মাভুতা ১০ ওভারে ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৪১ রান দিয়ে তিনটি নেন সিকান্দার রাজা, দুটি নিয়েছেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ম্যাচসেরা হয়েছেন শন উইলিয়ামস।
জিম্বাবুয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংস: ২৮২ (শন উইলিয়ামস ৮৮, তাইজুল ৬/১০৮) ও ১৮১ (মাসাকাদজা ৪৮, তাইজুল ৫/৬২)
বাংলাদেশ প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৪৩ (আরিফুল ৪১*, চাতারা ৩/১৯, রাজা ৩/৩৫) ও ১৬৯ (ইমরুল ৪৩, আরিফুল ৩৮, মাভুতা ৪/২১)।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.