১৪ দেশের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলন শুরু

ওয়ান নিউজঃ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। তাই বিভিন্ন কমিউনিটি, ধর্মীয় নেতাসহ সবাইকে নিয়ে একত্রে জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করা হচ্ছে। শুধু দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ নয়, প্রতিবেশী দেশেও যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গাড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া জঙ্গিবাদ দমনে জাতিসংঘ গৃহীত বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্তের প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন জানিয়েছে।’

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনের লক্ষ্যে রবিবার থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরু হওয়া চিফ পুলিশ কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্বের ১৪ দেশের পুলিশ প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ইন্টারপোল ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘চিফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়েছে রবিবার সকালে থেকে।

সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন না, আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে তিনি ভূমিকা রাখছেন। আমাদের সরকার সন্ত্রাসবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।’ এ সময় তিনি গত বছর হলি আর্টিজানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালানো জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগান স্টককে ধন্যবাদ জানান।

সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একে এম শহিদুল হক বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ আঞ্চলিক বা কোনও একটি দেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই সন্ত্রাসবাদ দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সেজন্যই আজকের এই সম্মেলরে আয়োজন করা হয়েছে। যাতে যথা সময়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য এবং অপরাধীদের বিনিময় করতে পারি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিদের প্রচার বন্ধের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে ফেসবুকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করা হবে।’ সম্মেলনে উপস্থিত এফবিআই, আসিয়ান পুল দেশের প্রতিনিধিদের কাছেও জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ সহযোগিতা চাইবে বলেও আইজিপি জানান। এছাড়া, সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিব) এর পাশাপাশি পুলিশের করণীয় সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।

রাজনৈতিক অনেক নেতার নামই ইন্টারপোলের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জারগান স্টক বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কোনও নেতার নাম যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় সেক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষ অভিযোগ করলে তা যাচাই-বাচাই করা হয়। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে রাজনৈতিক বিবচেনায় কারও নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তাহলে তার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

১২-১৪ মার্চ এই তিন দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের পুলিশ প্রধানদের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ১৪ দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও ইন্টারপোল, ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), যুক্তরাষ্ট্রের আইজিসিআই, আসিয়ানপোল ইত্যাদি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ মোট ৫৮জন বিদেশি অংশগ্রহণ করবেন।

জঙ্গি দমন, মানবপাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ, সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধ, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.