মাহবুবা সুলতানা শিউলি:
কিছু মানুষ কেন যে এত হীনমন্যতায় ভোগে বুঝিনা। যোগ্যতা থাকলে যে কেউ এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর সফল মানুষগুলির ব্যর্থতার গল্পগুলো কি আমরা জানি না! একজন সফল মানুষ কখনোই অন্য সাধারণ কিংবা সফল মানুষকে ঈর্ষা করেন না। হীনমন্যতা ত্যাগ করুন, এগিয়ে যান।
প্রতিভা এমন একটি আল্লাহর নিয়ামত যা সুপ্ত রাখা যায় না। প্রতিভার বিকাশ ঘটবেই, যে কোন অবস্থা পরিবেশ পরিস্থিতি থাকুক না কেন? গোবরে পদ্মফুল দেখেছেন কি? আমি দেখেছি! একটা নয়; দু’টা নয় হাজার হাজার দেখেছি, গোবরে লক্ষ লক্ষ পদ্ম ফুল ফুটেছে। সুতরাং হীনমন্যতায় ভোগে নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাবেন না।
ধরুন আপনি অনেক উচ্চ শিক্ষিত, অনেক জ্ঞানী, তাই বলে আত্ম গরিমায় অহংকারী হবেন না।
আমাদের দেশে অনেকেরই প্রিয় লেখক, আমার অত্যন্ত প্রিয় কথা সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক শ্রদ্ধেয় প্রয়াত হুমায়‚ন আহমেদ স্যারের লেখনী শৈলী ছিল অত্যন্ত সাবলীল, যাঁর লেখায় কোন জটিলতা ছিল না। ছাত্র জীবনে তাঁর লেখা যেকোন উপন্যাস বা ছোটগল্প বা বিভিন্ন বই গুলো এক বসায় কিংবা পড়ার ফাঁকে চুরি করে অথবা অল্প আলোতে রাতজেগে পড়ে শেষ করে ফেলতাম! কিন্তু কেন? কারণ অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে লিখতেন তিনি।
তিনি যে গভীর জ্ঞানের অধিকারী তা প্রকাশের কোন প্রয়োজনীয়তা দেখাননি তাঁর লেখন শৈলীতে। তা পাঠকক‚ল এমনিতেই অনুধাবন করতে পারতেন। তাই লক্ষ কোটি মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন তিনি। স্যারের একটা উক্তি আমার ভীষণভাবে মনে ধরেছে। সেইটা হলো, “মানুষ কেনা খুব সহজ, যোগ্যতা অনুসারে মানুষ কেনা যায়, সবচেয়ে উচ্চ দামে বুদ্ধিজীবীদের কেনা যায়। বুদ্ধিজীবীরা অতি আগ্রহে নিজেদের ম‚ল্য নির্ধারণ করেন।”
জানিনা কেন তিনি একথা লিখেছিলেন! কারণ তিনি নিজেও একজন বুদ্ধিজীবী। তবে আমি উপলদ্ধি করতে পারি, তথাকথিত শিক্ষিত উচ্চ শিক্ষিতরা নিজেকে মহাজ্ঞানী পন্ডিত মনে করেন! অর্থের মানদন্ডে নিজেদের ম‚ল্যায়ন করেন। তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত পন্ডিতদেরকে তাচ্ছিল্য করতে গিয়েই হয়তো তিনি একথা বলেছেন।
তখন ছোট ছিলাম, কথাটার মর্মবাণী সেভাবে বুঝতে পারিনি। তখন খুব অদ্ভুত উক্তি মনে হয়েছিল, কিন্তু এখন পরিণত বয়সে এসে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি কি নিষ্ঠুর উপহাস করে এ উক্তিটি করেছিলেন তিনি। হীনমন্যতায় ভোগা ঐসব মহাজ্ঞানীরা অনেক বেশী ঈর্ষাকাতর। তাঁদের উদ্দেশ্যেই হয়তো এ উক্তি।
একজন সফল ঔপন্যাসিক জননন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের নিজের জীবনটাও কোন সোনার পালঙ্কে সজ্জিত ছিল না, আর তা আমরা সবাই কম-বেশী জানি।
একটা উদাহরণ দিই, আমাদের প্রিয় নবী, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর চলার পথ কখনোই মসৃণ ছিল না, প্রতি পদে পদেই কণ্টকপ‚র্ণ ছিল হীনমন্যতায় ভোগা শত্রুদের দ্বারা।
আপনি কাজ করছেন, ভালো! পরিশ্রম করছেন, আরো ভালো! আপনার কষ্ট কেউ দেখছে না বা উপলদ্ধি করতে পারছে না। যেই আপনি সফলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন বা সফলতার ছোঁয়া স্পর্শ করছেন তখনই হীনমন্যতায় ভোগা মানুষগুলো নড়েচড়ে বসে। তাদের কটু কথায়, লেখায়, ব্যবহারে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না!
আপনাকে ছোট করতে পারলে, অপমানিত করতে পারলে, তাদের হৃদয় অট্টহাসিতে পরিপ‚র্ণ হয়। কোন ভাবেই সামনের পথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আপনাকে কেউ সুযোগ দিবে না। মহান আল্লাহ তালার উপর ভরসা রেখে নিজের প্রতি আস্থা রেখেই সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশ্বকবি আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা বিদ্রোহী কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোন ডিগ্রী ধারী-উচ্চ শিক্ষিত পিএইচডি ধারী ডক্টরেট ছিলেন না। তাদের জ্ঞানের সাগর এই সব গতানুগতিক ডিগ্রিতে আবদ্ধ ছিল না। এ অসীম জ্ঞান-সাগরেরা তাদের সাধনার দ্বারাই সফল ও অমর হয়েছেন।
নিজেদের অতি জ্ঞানী ভাবা কিছু কিছু পন্ডিতেরা কঠিন কঠিন শব্দ প্রয়োগ, জটিল জটিল ধাঁধাঁ দিয়ে নিজেদের তাঁরা শুধু জটিলই করেননি করেছেন সাধারণের কাছে কঠিন থেকে কঠিনতর। তাই আমরা আমরা অতি জ্ঞানীদের পরিত্যাগ করে সহজ স্বাভাবিক বিষয়টি গ্রহণ করতে চাইলে হীনমন্যকারীরা হীনমন্যতায় ভোগতে থাকে। আর কোন না কোন ভাবে আপনাকে ছোট করতে বা ঘায়েল করতে বা অপমানিত করতে পিছু লেগে পরে।
যাই হোক ছোট্ট একটা পরামর্শ দিয়ে লেখার ইতি টানতে চাই। আপনি জীবনে ভালো লেখাপড়ার সুযোগ পাননি বা সুযোগ পেলেও করেন নি তাই বলে আপনার জীবন ব্যর্থ বলে বসে থাকলে চলবে না। জীবনের যে কোন সময়েই নিজেকে তৈরী করা যায়। শুধু নিজের ভিতর উপলদ্ধির গাঁথুনিটা শক্ত থাকতে হবে। আর নিজেকে চিনতে হবে, জানতে হবে এবং বুঝতে হবে আমি কী কী করতে পারি।
বারাক ওবামা যে বয়সে অবসর নিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সে বয়সে শুরু করেছেন। সুতরাং আপনিও যে কোন সময়ে নতুন ভাবে শুরু করতে পারেন। নিন্দুক বা হীনমন্যকারীদের থোরাই তোয়াক্কা করে।
কলাম লেখক : মাহবুবা সুলতানা শিউলি
সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ,
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ইমেইল :mahbubasheulz82@gmail.com
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.