হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার নূর এ এলাহীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ দূর্ণীতির অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার এস এম নূর এ এলাহীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। হরিণাকুন্ডুর অসহায় শিক্ষক সমাজ দূর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার হাতে জিম্মি হয়ে পড়লেও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

 

হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নূর এ এলাহী যোগদানের পর থেকেই ঘুষ, দূর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেন। শিক্ষা দপ্তরের সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে নূর এ এলাহী প্রায় বছর তিনেক পূর্বে যোগদানের সময় থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে একাধিকবার আলোচনার কেন্দ্রবৃন্দুতে উঠে আসে। সদ্য পিইসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র প্রতি ৫ টাকা ও বিনামুল্যের বই বিতরনে স্কুল প্রতি ৪০ টাকা হারে রেট ফেলে ঘুষ আদায় করছেন।

 

শিক্ষা দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ সম্পাদন করার সুযোগ নেই দূর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার দাপটে। ঘুষের বিনিময়ে হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসে হয় না এমন কোন কাজের নজীর নেই। অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় রেট ফেলে ঘুষ নিয়ে থাকেন কর্তাবাবুরা। সকাল থেকেই ঘুষ লেনদেনের হাট বসে এ দপ্তরটিতে।

 

হরিণাকুন্ডু উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে দূর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসারের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। কিন্তু ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত অসহায় শিক্ষকগন বিভিন্ন ধরনের হুমকি, চাকরী হারানোর ভয় এবং হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান।

 

এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘুষের টাকায় নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই আলোচিত শিক্ষা অফিসার নূর এ এলাহী। ৩ বছর পরপর সরকারি চাকুরীজীবিদের বদলীর বিধান থাকলেও ঘুষ, দূর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়ম করার কারনে হরিণাকুন্ডু ত্যাগ করেন না।

 

বদলীর আদেশ প্রাপ্ত হলেও অজ্ঞাত ক্ষমতার জোরে শেষ পর্যন্ত হরিণাকুন্ডুতে বসতী হয়ে উঠেছে এ কর্মকর্তা। প্রায় ৩ বছর ধরে হরিণাকুন্ডুতে চাকরী করার সুবাদে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছেন। হরিণাকুন্ডুর সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে নূর এ এলাহীর খুটোঁর জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

অনেকেই বলেছেন এতদিন কিভাবে একজন ঘুষখোর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এক উপজেলায় চাকুরী করেন। এক নাগাড়ে এতদিন ধরে একই উপজেলায় চাকরী করায় যে শিক্ষা অফিসারই আসুক না কেন তারা সবাই এলাহীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে উপর মহলে তার লোক আছে কেউ কিছু করার ক্ষমতা রাখে না বলে হঙ্কার দেন।

 

তার অসদাচারণের কারণে দুজন সৎ কর্মকর্তা হরিণাকুন্ডু কর্মস্থল থেকে বদলী হতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান কর্মস্থলে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। নূর এ এলাহী সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থাকাকালীন গত ১৪/৮/১৬ তারিখ থেকে ৩১/৮/১৬ তারিখ পর্যন্ত অন অনুমোদিত ভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।

 

এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আঃ মান্নান নামের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা হরিণাকুন্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসে ৬/১০/১৬ থেকে ১১/১০/১৬ পর্যন্ত তাকে কর্মস্থলে ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত পান। বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকার কারনে ওই কর্মকর্তা তাকে অনুপস্থিত করে দিতে বলেন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে অনুপস্থিত করে দেন।

 

হরিণাকুন্ডু শিক্ষা অফিসার হিসেবে গত ৩/১১/১৬ তারিখে নূর এ এলাহী পুনরায় দায়িত্ব নেন এবং শিক্ষকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি শুরু করেন। শিক্ষকদেরকে সবসময় আতংক গ্রস্ত করে রাখেন ও চাকরি খেয়ে নেবেন বলে হুমকি দেন। ভয়ে শিক্ষকরা ঠিকমত পাঠদান করতে পারেননা। তার সম¯্Í অপকর্ম শিক্ষকরা ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করে।

 

নূর এ এলাহীর মত একজন কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষার এক মূর্তিমান আতংক বলে শিক্ষকগণ মনে করেন। গত ১৮/১২/১৬ তারিখে শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় একজন সহকারী শিক্ষককের উদ্বৃতি দিয়ে ওই কর্মকর্ত বলেন, মাদূর্গারমত দশহাত নিয়ে আবির্ভুত হয়েছি। ওই শিক্ষককে উপজেলা ছাড়া করবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন।

 

এছাড়া সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ডান্টা এন্ট্রি অপারেটরের দিয়ে সমাপনী পরীক্ষার কাজ করার কথা থাকলেও তার পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন। পরীক্ষার নাম্বার এন্ট্রিও শিক্ষকদের দিয়ে করিয়েছেন। ৪ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও তাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি এবং শিক্ষকদেরকে দিয়ে সমাপনী পরীক্ষার গুরুত্বপুর্ন কাজগুলো করানো হয়েছে।

 

হরিণাকুন্ডু শিক্ষা অফিসে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাকে বাগে নিতে তিনি অনিয়ম করার পথ দেখিয়ে দেন। বলতে গেলে এলাহীর অধীনেই যেন শিক্ষা অফিসের অন্যান্যরা চাকরী করেন বলে ভূক্তভূগিরা জানান। কোন নিয়ম নীতির তিনি তোয়াক্কা করেন না। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সমস্থ অনিয়মই তার কাছে নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে।

 

এসব বিষয়ে জানতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম নূর এ এলাহীর কাছে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান জানান, নম্বরপত্র ও বই বিতরনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন বিধান নাই। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে অবশ্যই সে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

উপজেলার শিক্ষক মহলসহ সচেতন নাগরিক সমাজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ওই ঘুষখোর, দূনীতিবাজ কর্মকর্তার বদলীসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.