জে,ই সজীব:
বার্ধক্য, বৃদ্ধাবস্থা, বৃদ্ধ বয়স বা জরা বয়স মানব জীবনের শেষ ধাপ। বার্ধক্যে পৌঁছাবার বয়স জনে জনে ভিন্ন হতে পারে। মানুষের জীবনের শিশুকাল, কৈশোর ও যৌবনকাল পার করে বার্ধক্য আসে জীবনের নিয়মেই।
একজন মানুষ,স্বপ্ন দেখতে দেখতেই হারিয়ে যায়। স্বপহীন মানুষ হয় না।
একটা কথা আছে, মানুষ যখন নিজের জীবনের শেষ মুর্হুতের কাছাকাছি চলে আসে তখন সে নাকি দিব্যদৃষ্টি লাভ করে। নিজের জীবনের সমস্ত ঘটনা তার চোখের সামনে ভেসে উঠে, নিজের জীবনের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি মুহুর্ত সে এক ঝলকে স্মৃতির আয়নায় দেখতে পায়। বিলীন হয়ে যাওয়ার আগে পার করে আসা জীবনের ব্যাপারে নিজের ম‚ল্যায়ন করতে পাওে বিছিন্ন চিন্তায়।
জানিনা আসলেই এরকম হয় কিনা, তবে একটা ব্যাপার বুঝি, অনেক সময় মৃত্যুর শারীরিক যন্ত্রনা থেকে মানসিক যন্ত্রনা অনেক বেশি হয়, যখন কেউ কোনো অপ‚র্ণতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
কিন্তু জীবনে কোনো অপ‚র্নতা নেই, এরকম সাধু সন্ন্যাসী কেউ কি আছে এখনকার দুনিয়ায়? আমি আশেপাশে যত মানুষ দেখি, সবাইকেই তো দেখি কম বেশি হা হুতাশ করতে। এই সব না পাওয়া গুলো কি জীবনের শেষ মুহুর্তগুলোতেও পীড়া দিতে থাকে?
ব্রুনি ওয়ের নামের এক অস্ট্রেলিয়ান লেখিকা বেশ গবেষণা করে একটা বই লিখেছেন। সেখানে তিনি দাবী করেছেন, সব মানুষই নাকি মৃত্যুর আগে ঘুওে ফিরে একই রকম কয়েকটা ভুল নিয়ে আফসোস করে।
ভদ্রমহিলা পেশায় একজন নার্স, মৃত্যুর আগে প্রচুর মানুষকে সেবা দিয়েছেন, তাদের সাথে কথা বলেছেন। তাদের সে সময়ের অনুভ‚তি বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছেন, জীবনের শেষ মুহুর্ত গুলোতে একটা মানুষ কিভাবে নিজেকে নিয়ে, প্রিয় মানুষদেরকে নিয়ে আরও কিছুটা সময় কাটানোর, সব অপ‚র্ণতাকে কাটিয়ে নিজের মতো করে বাঁচার তাগিদ বোধ করে।
ব্রুনি নিজের দীর্ঘ নার্সিং ক্যারিয়ারের সমস্ত অভিজ্ঞতা একসাথে করে নির্দিষ্ট করে কিছু অপ‚র্ণতার কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মৃত্যুর আগে মানুষকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দেয়।
অন্যদের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করেই যদি জীবনটা কাটাতাম, অন্যরা কি ভাবছে, তারা কি চায় সব কিছু অগ্রাহ্য করতাম।
গব সময় খালি অন্যদের ইচ্ছা গুলোই প‚রণ করে এসেছি, নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দিকে কখনো নজর দেইনি। এসব না করে যদি নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকতাম সবসময়। নিজের সব ইচ্ছা গুলোকে প‚রণ করতে পারতাম সেটাই বোধহয় ভালো হতো।
সারাটা জীবন এত খাটা খাটুনি করে তো কিছুই পেলাম না, এর চেয়ে আরও বেশি সময় যদি পরিবারের সাথে কাটাতাম, প্রিয় মুখ গুলোর সাথে কত ভালো হতো..!
কত কথা অব্যাক্ত রয়ে গেলো। প্রিয়জনদের অজানা রয়ে গেলো কত অনুভ‚তি। কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি, যদি আর একটা বার সুযোগ পেতাম সব কিছু বলার..
একটা আড্ডা প্রিয় বন্ধুদের সাথে আর মাত্র একটা বার যদি সেই মুহুর্তগুলো ফিরে আসতো..?
জীবন নিয়ে সেই যাই ভাবুক, আজকে যে বৃদ্ধ, তাকে নিয়ে আমার কি ভাবার দরকার সেটাই জানা দরকার। শেষ সময়ে আমাদের উচিত,তাদের মত করেই, যেন তাদের পাশে থাকি। তাদের ইচ্ছে গুলো,চাহিদা গুলোর প্রতি সম্মান রেখে।
শেষ সময়ে এসে যেন তাদের মনে আফসোসের উদয় না হয়। তার অতীত জীবন নিয়ে যেন তাকে হীনমান্যতায় না ভোগে। তিনি যেন মনে না করেন, তার জীবনের সব কিছুই ছিলো ভুলে ভরা। সেই রকম কোন আফসোস, হতাশা কাজ না করে মনে।
সে জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছে, আজকের বার্ধক্যে ভালো থাকার কথা চিন্তা করেই।
শুধু মনে রাখতে হবে, এই বার্ধক্য সবার, সবার জন্যই তা বরাদ্ধ। আমি এখন আমার বাবা,চাচা,মায়ের বার্ধক্য দেখি। ঠিক তেমনি তারা তাদের বাবা, চাচাদের দেখছে, আমার টাও দেখবে আমার সন্তান। এভাবেই চলে জীবন গাড়ির চাকা।
কোন বৃদ্ধই যেন অপহেলার পাত্র না হয়। শিশুরা অনুকরন প্রিয়, সে সব কিছুই আপনাকে দেখে দেখে শিখে। আপনার বাবার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, যে কোন বৃদ্ধের প্রতি আপনা আচরনগুলো তারাই কপি করে নিচ্ছে, আপনি যদি ভালো কিছু করেন, আপনিও ভালো কিছু পাবেন।
শরীরের চমড়া, চোখের দৃষ্টি, দেশের শক্তি, অর্থের জোর দিয়ে, মানুষকে বিবেচনা করবেন না।
বিবেচনা করুন আপনার মানবিক দৃষ্টিকোন দিয়ে।
এমন আচরন করুন, যেন আপনার আত্বা শান্তি পায়, ভালো বোধ করেন। আপনার মানবিক দৃষ্টিকোন কমিয়ে আনবে, বৃদ্ধাশ্রম এর সংখ্যা। ভালোবাসা আর সম্মানের সহিত বার্ধক্য জয় করুক জগৎ এর সকল বৃদ্ধরা…….
জে,ই সজীব
সমসাময়িক বিষয়ে অনলাইন লেখক
মহেশখালী,কক্সবাজার।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.