স্কুল ছাত্র রাসেল এখন খিচুরী বিক্রেতা!

মোজাম্মেল হক, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী):
ডিম, আলু ভর্তা,ভুনা খিচুরী পার্সেল, ডিম, আলু ভর্তা, ভুনা খিচুরী পার্সেল, এভাবেই ঘুরে ঘুরে হকারী করে খিচুরী বিক্রি করছিলো নবম শ্রেনীর স্কুল পড়ুয়া ছাত্র। করোনা সংক্রামন রোধে সারা দেশে লকডাউন চলছে। প্রায় দুই বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। গত বছর অষ্টম শ্রেনী থেকে অটো পাশ করে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হযেছেন পিতৃহীন এতিম রাসেল প্রামানিক।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র ও ৪নং ওয়ার্ডের কিয়ামদ্দিন মোল্লার পাড়া গ্রামের মৃত হবি প্রামানিকের দ্বিতৃয় সন্তান রাসেল । এক বছর বয়সে সে পিতাকে হারিয়েছে। মা ও ভাই কে নিয়ে থাকেন ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও রেলওয়ে রাস্তার মাঝে সরকারী জমিতে।
বড় ভাই মো.অসীম প্রামানিক (১৬) ফেরিতে হকারী করে সংসার চালাতো, বড় ভাইয়ের আয়ে মা আর রাসেলের জীবন কেটে যেতো । কিন্তু করোনা ভাইরাস রোধে দুর পাল্লার পরিবহণ বন্ধ,ভাইয়ের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রাস্তায় সিরিয়ালে থাকা পন্যবাহী ট্রাক চালকদের খাবার চাহিদা মিটাতে ঘুরে ঘুরে হকারী করে সংসার চালাচ্ছেন পিতৃহীন রাসেল প্রামানিক।
প্রতিদিন দুপুরের পর মায়ের হাতের রান্না করা দুই কেজি চাউলের খিচুরী , ডিম ভাজি আর আলু ভর্তা পার্সেল করে নিয়ে আসেন বিক্রি করেন ইফতার পর্ষন্ত । তিন, চারশত টাকা বিক্রি করে বাড়ী ফিরে টাকা তুলে দেন মায়ের হাতে । রাস্তায় ট্রাক সিরিয়ালে না থাকলে সে দিন বেচা কেনা কম হয় । মা বলেছে সামনে ঈদ আসতেছে, নতুন জামা কিনতে চাইলে কয়েক দিন কষ্ট করে খিচুরী বিক্রি করো তাই নতুন জামা কিনে দিবো।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) যশোর থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক ( যশোর ট ১১-৩২৪৫) ড্রাইভার মো. আলতাফ হোসেন বলেন , কাঁচা মাল বোঝাই করে সকালে রওয়ানা দিয়েছি ঘাটে সিরিয়ালে ফেরি পার হলে ট্রাক থেকে নেমে খাওয়ার সময় পাওয়া যায় না, তাই ট্রাকের বসেই অল্প দামে ৪০ টাকায় দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।
রাসেল বলেন, ১ বছর বয়সে বাবা কে হারিয়েছি। বাবার আদর কেমন সেটা বুঝি না । বাবার চেহারাও মনে নাই। প্রতিবেশি তাদের ছেলে মেয়েদের আদর করতে দেখলে মনে কষ্ট লাগে, সেটা কারো কাছে বলতে পারিনা। মায়ের আদরে বাবার ভালোবাসা ভুলে যাই। মায়ের স্বপ্ন লেখাপড়া করে যেন একদিন আমি চাকুরী করি।
দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গন এলাকা , করোনা সংক্রামন রোধে লকডাউনের সময় অনেক খেটে খাওয় পরিবারের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এ সময় বিত্তবানদের অসহায়, এতিমদের পাশে সহযোগিতার করার আহবান জানাচ্ছি।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.