সূ চির নোবেল কেড়ে নেয়ার দাবি জেগে উঠুক তাঁর বিবেক
রোহিঙ্গাদের রক্ষায় নোবেল বিজয়ী অংসান সূ চির নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে বিশ্ব বিবেকের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে চলা সমালোচনার মধ্যে তাঁর শান্তিতে পাওয়া নোবেল কেড়ে নেয়ার দাবি উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার নোবেল কমিটির কাছে অন্তত ৩ লাখ ৬০ হাজার শান্তিকামী মানুষ এই দাবি জানায়। এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার রক্ষায় সূ চি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। অন লাইনে পাঠানো ওই আবেদনে আরো বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সর্বোচ্চ নেত্রী অংসান সূ চি রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নৃশংস নির্যাতন বন্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেন নি। তাই তাঁর নোবেল পদক কেড়ে নেয়া উচিত। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নরওয়ের নোবেল কমিটি বলেছে, তাদের এ বিষয়ে কিছু করার নেই। এ বিষয়ে নোবেল ইনস্টিটিউটের প্রধান ওলাভ নলস্টাড বলেছেন, কোনো নোবেল জয়ীর কাছ থেকে পদক কেড়ে নেয়া অসম্ভব। ওদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহবান জানিয়েছেন, ব্রিটেনের বিরোধী নেতা জেরেমি করবিন। গত বৃহস্পতিবার বিবিসির উর্দু বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা করবিন বলেন, আমরা ম্যাডাম অংসান সূ চির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁর উদ্দেশ্যে আমার বার্তা হলো-আমরা আপনাকে পছন্দ করি- বহু বছর আপনি যখন গৃহবন্দী ছিলেন, আমরা আপনাকে সমর্থন করেছি। আমরা আপনার সমর্থনে মিছিল করেছি। মানবাধিকারের প্রতি আপনার অঙ্গীকারকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। এই বিনম্র, সুশোভন উক্তির পর জেরেমি করবিন সূ চিকে লক্ষ্য করে বলেছেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি সেই মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরুন। তারা যাতে মিয়ানমারের ভেতর পূর্ণ নাগরিকত্ব পায়। আপনি সেটা নিশ্চিত করুণ। জেরেমি করবিনের বক্তব্য হৃদয়স্পর্শী, বিবেক নাড়া দেবার মতো।
জানিনা, অংসান সূ চির বিবেক জেরেমি করবিনের বিবৃতিতে জেগে উঠবে কী না। শুধু জেরেমি করবিনের ব্রিটেন নয়, সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক মানুষের সঙ্গে আমরাও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে এবং বন্দিনি সূ চির পক্ষে কথা বলেছি, সর্বোচ্চ সহানুভূতি প্রকাশ করেছি। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নোবেলজয়ী অংসান সূ চির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কিন্ত তিনি যখন তাঁর দেশের সামরিক জান্তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্ষমতার অংশীদার হলেন তখন থেকে তাঁর প্রতি গণতান্ত্রিক মানুষের শ্রদ্ধার বিচ্যুতি ঘটতে থাকে। যে গণতন্ত্রকে সামনে রেখে তিনি লড়াই করেছেন, সেনা শাসকদের দ্বারা দীর্ঘ সময় নির্যাতিতা হয়েছেন, তাদের সঙ্গেই হাত মেলালেন। এতে হলো কী? মিয়ানমারে গণতন্ত্রের শেকড় মেলার সুযোগ পেলো না। আর এখন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে অকথ্য, অযৌক্তিক বর্বরতা চালানো হচ্ছে, তা সামরিক জান্তার কাজ, এ কাজ গণতান্ত্রিক নেত্রী অংসান সূ চির নয়। তিনি একে নিরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন একটা কৌশল হিসেবে। কিন্তু এতে মানবতার বিপর্যয় চূড়ান্তস্তরে উঠেছে। সূ চি বিশ্বধিক্কারের সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁর নোবেল পদক কেড়ে নেবার আবেদন জানিয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। এটি কোনো ছোট ও সহজ ব্যাপার নয়। নোবেল পদক আনুষ্ঠানিকভাবে কেড়ে নেয়াটা বড় কথা নয়, সাড়ে তিন লাখের অধিক মানুষের আবেদনের প্রভাব ও গুরুত্ত্ব অপরিসীম। রোহিঙ্গারা যদি মিয়ানমারের নাগরিক নাও হয়, তারপরও তারা সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছে, এ ভাবে বর্বর আক্রমণ চালিয়ে মানুষকে তার ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়ন করা যায় না। এটা জাতিসংঘের সনদের স্পর্ধামূলক বরখেলাপ। প্রায় ১৫/২০ লাখ মানুষকে বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করা ফ্যাসিবাদী সামরিক জান্তারই কাজ। অংসান সূ চি এতে সমর্থন দিচ্ছেন দেখে আমরা বিবেকের মধ্যে কষ্ট পাচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎখাত হওয়া শরণার্থীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। চট করে তাদের উৎখাত করতে গেলে বিশ্ববিবেক রুখে উঠবে। ১৯৭১ সালের পরেও বিরাট সংখ্যক বিহারি বাংলাদেশে রয়ে গেছে, তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো। তবুও আমরা তাদের গায়ের জোরে বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করি নি। তাতে মানবতা লংঘন করা হতো। মানবতা একটা বিরাট ফ্যাক্টর। একটি নীলনক্সা মোতাবেক রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের এবং হিন্দুদের বিতাড়ন করা হচ্ছে, বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্ত করা হচ্ছে। শান্তিতে পদকপ্রাপ্ত নেত্রী এই অমানবিক কাজে সমর্থন দিতে পারেন না। আমরা আশা করবো তাঁর বিবেক জেগে উঠবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.