ডেস্ক নিউজ:
প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে বরিশালের মানুষ। দাবদাহ থেকে সামান্য পরিত্রাণ পেতে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজের চাহিদা বেড়েছে। ইফতারেও ধর্মপ্রাণ রোজাদাররা তরমুজই পছন্দ করেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই তরমুজে হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে এখন আর তরমুজের স্বাদ নিতে পারছেন না নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা।
গত বছর যে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা, এবার সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। এমনকি তরমুজ ব্যবসায়ীরা আগের সব নিয়ম ভঙ্গ করে পিস হিসেবের পরিবর্তে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। তবে ক্রেতাদের সিন্ডেকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লকডাউন ও ভালো ফলন না হওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী এরা মিলেই সিন্ডিকেট গড়ে তরমুজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানে তরমুজের চাষ হয়। এ সব এলাকা থেকে বরিশালের আড়তদাররা তরমুজ কিনে এনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে তরমুজের বাড়ি হিসেবে সুপরিচিত পটুয়াখালির রাঙ্গাবালীর বেশ কয়েকজন তরমুজ চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষেত থেকে তোলা তরমুজ তারা কেজিতে বিক্রি করছেন না। বেশিরভাগ চাষি শ’ হিসেবে বিক্রি করেন। পরিবহনে উঠিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ১০ কেজি ওজনের তরমুজের দাম ২০০-২৫০ টাকা, যা বরিশালে আসার পর হয়ে যাচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা।
স্থানীয় তরমুজ চাষি মজিবুর রহমান মিন্টু জানান, আড়তদারদের কাছে ২ কেজি ওজনের তরমুজ সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন তারা। ১০০ টাকায় যে তরমুজ বিক্রি হয় তার ওজন ৭-৮ কেজি হয়।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাজার ও তরমুজের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে এক কেজি তরমুজের দাম চলছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বেশি ভালো মানের তরমুজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫ কেজির একটি তরমুজের জন্য ক্রেতার গুণতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অথচ এই তরমুজের দাম ১৫০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
ক্রেতারা মনে করেন, এত ভারি একটি ফল ছোট পরিবারের জন্য কিনতে গেলেও ৫ কেজির নিচে হয় না। কেজি দরে বিক্রির কারণেই এমন দাম উঠেছে। প্রতি তরমুজ কমপক্ষে ১০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর কেডিসি এলাকার রাজমিস্ত্রি খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার অসুস্থ মা তরমুজ খেতে চেয়েছে। ৫০ টাকা কেজি দরে ছোট একটি তরমুজ কিনেছি ২০০ টাকায়। গতবার একই আকারের তরমুজ ৭০ টাকায় কিনেছি।’
নগরীর চৌমাথা বাজার এলাকার তরমুজ বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আগে আমরা পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি করেছি। এখন আমরা প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি করছি ৫০ টাকায়। তাতে একটি তরমুজের দাম পড়ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আড়তদাররা আমাদের কাছ থেকে ছোট আকারের একটি তরমুজের দামই নিচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।’
সাগরদী এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে তরমুজ নেই বললেই চলে। মোকামেই প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা কিনতে হচ্ছে আমাদের। সেই তরমুজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করাটা দোষের দেখছি না। আমরা কোনো সিন্ডিকেট করিনি।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন বাজার এলাকার এক তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এর ওপর চৈত্রের শুরুতেই প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছেন কৃষকরা। ‘লকডাউনের’ কারণে পটুয়াখালি ও ভোলা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরমুজ আসতে পারছে না। এজন্য দাম একটু বেশি।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.