সালাম হোক মুসলমানের একমাত্র অভিবাদন

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ সালাম হোক মুমিন মুসলমানের অভিবাদনের একমাত্র মাধ্যম। সুন্নাতই হোক জীবন পরিচালনা একমাত্র উৎস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মানুষকে খাওয়াবে আর চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে।’ সালাম দেয়া নবির সুন্নাত ও নির্দেশ। আর সালামে বাধা দেয়া শয়তানের কাজ। কারণ সালাম-এর ৪ ধরনের উপকারিতা থেকে বিরত রাখতেই শয়তান মানুষকে সালাম দিতে নিরুৎসাহিত করে।

সালামে বলা-
– السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি একটি দোয়া। আর সালামের উত্তরে বলা হয়-
– وَعَلَيْكُمُ السَّلاَم অর্থাৎ আপনারও উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি একটি দোয়া। সালামকারী যেভাবে দোয়া করে, সালামের উত্তরদানকারীও সালাম প্রদানকারীর জন্য এভাবে দোয়া করে। এভাবে সালামের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের জন্য শান্তির দোয়া করে।

সালাম কেন দেবেন?

আল্লাহ তাআলা সালাম দিতে বলেছেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সালাম দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কখন এ সালাম দেবেন? যখন কারও সঙ্গে দেখা হয় তখন সালাম দিতে হয়। এ সালাম দেয়া রয়েছে অনেক উপকার ও সাওয়াব।

শুধু দেখা-সাক্ষাতেই সালাম সীমাবদ্ধ নয় বরং কারো সঙ্গে দেখা করার জন্য তার বাড়িতে গিয়ে ঘরে প্রবেশের আগে সালাম দেয়া জরুরি। আবার বাহিরের কাজ শেষে নিজ বাড়িতে গিয়ে ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেয়া। সালাম দেয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون

অতপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও। [ সুরা নুর ২৪:৬১ ]

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সালামকে কল্যাণ ও পবিত্রতার দোয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসের বর্ণনায় সালামের অনেক উপকারিতার কথা উঠে এসেছে। হাদিসের বর্ণনায় সেগুলো হলো-

সালামে বরকত লাভ হয়

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাবে, তখন সালাম দেবে। তাতে তোমার ও তোমার পরিবার-পরিজনের কল্যাণ হবে।’ (তিরমিজি)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদিসে নিজ পরিবার-পরিজনকে সালাম দেয়ার কথা বলেছেন। স্বামী তার স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মা, ভাই, বোনকে সালাম দেবে। আবার স্ত্রীও পরিবেরর লোকদের সালাম দেবে। সন্তান-সন্তুতিও তার বাবা-মা এবং পরিবারের ছোট-বড়দের সালাম দেবে, তাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত তথা কল্যাণ নেমে আসবে।

সালামকারীকে আল্লাহ হেফাজত করেন

আল্লাহ তাআলা সালামের প্রচলকারীর জন্য জিম্মাদার হয়ে যান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির লোকের জিম্মাদার হন-

– যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে তার বাড়িতে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ঘরে স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোন, ছোট-বড় যেই থাকুক না কেন; তাদের সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আল্লাহ তাআলা ওই বাড়িকে ওই ব্যক্তিকে হেফাজত করেন।’ (আদাবুল মুফরাদ)

সালাম দিলে সাওয়াব হয়

পরস্পর সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ে রয়েছে অনেক সাওয়াব। সালামের সাওয়াব লাভের নমুনা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে পাকে উঠে এসেছে-

হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা ‘। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’ (তালিকুর রাগিব, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ, মেশকাত)

সালাম হলো দোয়া

পরস্পরের সালাম বিনিময় বা একে অপরকে অভিভাদন করাটা মূলত দোয়া। সালামের অর্থের দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। সালামের মাধ্যমে কি বলা হয়? সালামে বলা-

– السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি একটি দোয়া। আর সালামের উত্তরে বলা হয়-

– وَعَلَيْكُمُ السَّلاَم অর্থাৎ আপনারও উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি একটি দোয়া। সালামকারী যেভাবে দোয়া করে, সালামের উত্তরদানকারীও সালাম প্রদানকারীর জন্য এভাবে দোয়া করে। এভাবে সালামের মাধ্যমে মানুষ একে অপরের জন্য শান্তির দোয়া করে।

মানুষ যখন ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের পরিচিতদের মধ্যে বার বার সালামের ব্যাপক প্রচলন করবে, বার বার সালাম দিতে থাকবে। আর আল্লাহ তাআলা বারবার সালাম দেয়ার মধ্য থেকে একবারের দোয়া কবুল করে নেয়, তাতেই সালামের আদান-প্রদান স্বার্থক হবে। বান্দা জীবনের সব কাজে পাবে বরকত, হেফাজত, সাওয়াব ও দোয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সালামের গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। সালামের মাধ্যমে বরকত লাভ, হেফাজত লাভ ও সাওয়াব লাভ এবং দোয়া কবুল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.