রুখে দাঁড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা: আরাকান কি স্বাধীন হবে?
ওয়ান নিউজঃ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি দিনকে দিন উত্তপ্তই হচ্ছে। সেখানে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারছে সরকারি বাহিনী। সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মার খেয়ে নিরপরাধ রোহিঙ্গারা জন্মভূমি ছেড়ে এখন পরভূমবাসী।জন্মভূমি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে গিয়েও মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই মিলছে না তাদের। জাহান্নামসম নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেই পড়তে হচ্ছে বিজিবির বন্দুকের নলের মুখে। নাফ নদীর তীব্র স্রোতও হা করে তাকিয়ে আছে অসহায়দের রোহিঙ্গা বোঝাই ভাসমান নৌকাগুলোর দিকে। সুযোগ পেলেই যেনো গ্রাস করে নেয়ার অপেক্ষায়।এই অমানবিক দুর্যোগময় মুহূর্তে বিশ্ববিবেক শুধু বিবৃতি ও নিন্দা জানিয়েই পার পেতে চাইছে। অতীতেও অবশ্য এমনটাই হয়েছে। এবার অত্যাচারের মাত্রা বেশি ছিলো বলেই হয়তো ‘কোনো একটা কিছু’র আশায় দুনিয়াব্যাপী সমব্যথী মানুষের দল বড় আশা নিয়ে বিশ্বনেতাদের দিকে মুখ তুলে ছিলো। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অত্যাচারের মাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে পূর্বের চেয়ে বিবৃতি ও নিন্দার পরিমাণই বেড়েছে শুধু।এমনতর পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের কী করা উচিত? পালিয়ে বেঁচে আসা নাকি প্রতিরোধ? যুগ যুগ ধরে জালিমের হাতে মার খেয়ে মজলুম রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছে। এটাই ছিলো এতোদিনের স্বাভাবিক চিত্র। খেটে খাওয়া, নিঃস্ব, মেরুদণ্ডহীন রোহিঙ্গারা কখনো প্রতিরোধ করার সাহসটি পর্যন্ত করতে পারে –এমনটি কেউই ভাবেনি। তবে অতীত বুঝি এবার বর্তমানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চলেছে।কয়েক দশক ধরে চলা রোহিঙ্গা নির্যাতনের গল্পে একঘেয়েমি কাটাতে এবার মিলছে প্রতিরোধের আভাস! জান-মাল হাতে নিয়ে অসহায়ের মতো পালিয়ে আসা নয়, এবার অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা।এই খবরের সত্যতা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেলো গত ২৫ আগস্ট। একসাথে অন্তত ৩০টি পুলিশ ও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালালো কে বা কারা। জীবনভর অসহায় মানুষকে মেরে পৈশাচিক উল্লাস করা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিজেরাই এবার বন্দুকের নলের মুখে পড়লো। ওই এক রাতেই মারা পড়লো ১২ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য।কারা এই অকুতোভয় সৈনিক? কী তাদের পরিচয়? খুঁজতে খুঁজতে সামনে এলো আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি’র নাম। সংক্ষেপে তাদের বলা হলো ‘এআরএসএ’। অবশ্য গত বছরের অক্টোবরে হামলার পর থেকেই এআরএসএ নামটি মানুষের মুখে মুখে ফিরছিলো। আগস্টের হামলার মধ্য দিয়ে সেটি উঠে এলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পাতায়।এরই মধ্যে আরেকটি বার্তা পৌঁছে গেছে বিশ্ববাসীর কাছে। সেটি হলো প্রতিরোধের বার্তা। আরাকানিরাও রুখে দাড়াতে পারে। পারে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে। এখন থেকে লড়াই হবে সমানে সমান। বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সূচ্যগ্র মেদিনী।আরাকানিরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার প্রমাণ মিলেছে রয়টার্স, এএফপি’র অনুসন্ধানেও। বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি’র স্বাধীনতা লড়াইয়ের আহ্বান গোপনে গোপনে পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিটি আরাকানির কানে। মিয়ানমারের সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সাথে চাকু বা লাঠি নিয়েও যুদ্ধ করতে রাজি হাজার হাজার রোহিঙ্গা তরুণ।বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও জানিয়েছে, অন্যরকম একটি পরিসংখ্যান। বিজিবি বাহিনীর মতে, অন্যান্যবারের মতো এবারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে পুরুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে বেশিরভাগই নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরা আসছে। বিজিবির বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি।এর অর্থ কী? তাহলে কী আরাকানের মাটিতে সংগঠিত হচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি (এআরএসএ)? তাহলে কি অত্যাচারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে তরুণ রোহিঙ্গারা? একটি স্বাধীন আরাকান রাজ্যের স্বপ্নে বিভোর রোহিঙ্গারা কি পারবে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে তপ্তলাল রক্ত দিয়ে দেশমাতৃকাকে সিঞ্চিত করতে? যদি তাই হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হবে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। রোহিঙ্গারা পাবে স্বাধীন আরাকান রাজ্য।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.