সর্বোচ্চ বরাদ্দ মেগা প্রকল্পে, সর্বোচ্চ ভর্তুকি কৃষিতে

ডেস্ক নিউজ
করোনায় কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কৃষিতে। একইসঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের চলমান ১০টি মেগাপ্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অপরদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন বাজেট। এগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মোট ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকার। আগামী বছর এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৫১৫টি। এর মধ্যে ১০টি প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

অপরদিকে কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ ও পাটখাতকে সর্বনিম্ন ভর্তুকি দিয়ে মোট বাজেটের সম্ভাব্য ৮ শতাংশ (প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মোট আর্থিক পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এই ২৩ প্যাকেজের আকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এসব প্রণোদনা ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ। সুদ ৯ শতাংশের মধ্যে গ্রাহক দেয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ, এবং বাকি সুদ সরকার পরিশোধ করছে। যার পুরোটাই ভর্তুকি। এর ফলে আগামী বছর সুদ পরিশোধে ভর্তুকি বাবদ সরকার বরাদ্দ রাখছে ২ হাজার কোটি টাকা।

মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়ার শীর্ষে আছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

প্রায় ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প রয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প। এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দা প্রায় ৫ হাজার ৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

চতুর্থ অবস্থানে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে (লাইন-৬)। এতে বরাদ্দ প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে ৩ হাজার ২২৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে ৩ হাজার ৫১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায় ও প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

ভর্তুকিতে কৃষি প্রথম, বিদ্যুৎ দ্বিতীয়
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২) কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ভর্তুকিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা।

প্রাকৃতিক তরল গ্যাসে (এলএনজি) ভর্তুকি ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। রফতানি খাতে আগামী বছর ভর্তুকি বাবদ সরকার বরাদ্দ দিচ্ছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া খাদ্যে ৬ হাজার কোটি, রেমিট্যান্সে ৪ হাজার কোটি, প্রণোদনা প্যাকেজ ঋণের সুদ পরিশোধে ২ হাজার কোটি টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ দিচ্ছে পাটখাতকে। এর বাইরে অন্যান্য সব খাত মিলিয়ে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে ৩৮ হাজার ৬৪৮ কোটি এবং প্রণোদনায় ১০ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলাই সরকারের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার এসব খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ভর্তুকি দিচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.