ডেস্ক নিউজ:
সরকারের সিদ্ধান্তের পরই খালেদা জিয়ার বিদেশেযাত্রার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৯ মে) দুপুরে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
‘উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন প্রক্রিয়ায় কখন কোথায় খালেদা জিয়াকে নেওয়া হবে?’— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটা পুরোপুরিভাবে নির্ভর করবে সরকারের সিদ্ধান্তের পরে। কারণ, সরকারের সিদ্ধান্তের আগে কোনেটাতেই কোনো প্রসিড করা সম্ভব নয়।’
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আপনারা (গণমাধ্যম) ম্যাডামের সংবাদ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন এবং আমরাও যতটুকু সম্ভব আপনাদেরকে সে বিষয়ে অবহিত করার চেষ্টা করছি। লেটেস্ট যে খবর কিছুক্ষণ আগে আমি হাসপাতাল থেকে নিয়েছি, সেটা হলো- উনার কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তার যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিয়েছিল সেই সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ের উন্নতির দিকে।’
‘কিন্তু এখনো তার যে মূল সমস্যাগুলো আছে— তিনি অনেকগুলো অসুখে ভুগছেন দীর্ঘকাল থেকে। দীর্ঘদিন কারাভোগ এবং কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় সেগুলো এগ্রোভেট করেছে, বেড়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই বয়সে তার সেগুলো বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সার্বক্ষণিক তার লক্ষ্য রাখছেন, চিকিৎসা করছেন এবং তারা খুব উদ্বেগের সঙ্গে এই চিকিৎসাটা করছেন। তবে আশা কথা হচ্ছে যে, সি ইজ শোয়িং সাইন অব প্রোগ্রেস। যদিও এখনো তার চিকিৎসা করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ছাড়া সম্ভব না এবং সেখানেই (সিসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে।’
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গত ৮ মে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনার বিষয় এবং সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।
বৈঠকে ভ্যাকসিন সংগ্রহে অনিশ্চিয়তা এবং এক্ষেত্রে একটি উৎস থেকে ভ্যাকসিন নেওয়া নিয়ে দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার কঠোর সমালোচনা করা হয় বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লকডাউনের নামে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার, সরকারের আপদকালীন খাদ্যমজুদ কমে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবাংলায় বিধান সভার নির্বাচনে ‘সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তিকে বিজয়ী করায় পশ্চিমবাংলার জনগণ এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানানো হয়।
লকডাউনে নিম্ন-আয়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ‘ওএমএস’ চালু ও বিনা মূল্যে ‘খাদ্য বিতরণে’র দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
লকডাউন বাস্তবায়ন এবং ঘরমুখী মানুষের ভিড়ের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেন, তা বাস্তবায়নে কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা দেখলাম যে, গণপরিবহনে, ফেরিতে হাজার হাজার মানুষ ওঠার চেষ্টা করছে, যাচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় শপিংমলগুলো মানুষে বোঝাই। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবার জন্যে যে প্রচেষ্টা দরকার, যে উদ্যোগটা দরকার সেই উদ্যোগটা নিতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অথবা নিতে চায় না— এটাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন একটা অবস্থাটা বিপদজনক অবস্থায় এসছে। এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে তাদের সে সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করে বলছেন, ঈদের পরে একটা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যারা দেশে এসেছেন তাদের মধ্যে ৭৭ ভাগ একেবারেই কর্মহীন, তারা দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছেন। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে প্রণোদনার প্রস্তাব তুলে ধরেছিলাম সেখানে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্যে অর্থ বরাদ্ধের কথা বলেছিলাম। এক্ষেত্রে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে সরকার।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য কর্তৃক সরকার দলীয় দেড়শ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোথাও কোনো জবাবদিহিতা কি আছে? কোথাও আইন আছে? এই সরকার কি কোনো সুশাসন দিতে পারছে? কোনো সেক্টরে, কোনো জায়গায় কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে গোটা জাতি আজ বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে এবং দেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.