ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দিয়ে সারাদেশে চলছে এক দফা আন্দোলন। যেখানে সরকার প্রধানকে পদত্যাগের আন্দোলন করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এবার তাদের এই এক দফার সঙ্গে আরও পাঁচ দফা যুক্ত করেছেন দেশের ২১ বিশিষ্ট নাগরিকরা।
যেখানে চলমান সংকট নিরসনে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগসহ ছয় দফা প্রস্তাব করে তারা বিবৃতি দিয়েছেন। সোমবার (৫ আগস্ট) এক বার্তায় এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
২১ বিশিষ্ট নাগরিকরা তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশজুড়ে চলমান ভয়াবহ সহিংস ও নৈরাজ্যকর অবস্থায় তারা অত্যন্ত বিচলিত, উদ্বিগ্ন বোধ করছেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, আন্দোলনরত জনতার ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ, শিশুহত্যা, জনগণের সম্পত্তিনাশ, গণগ্রেপ্তার, হয়রানি-নির্যাতনের পর সর্বত্র আতঙ্ক, অবিশ্বাস ও ক্রোধের যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তা বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া অতি জরুরি বলে মনে করেন বিবৃতিদাতা বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
৬ দফা প্রস্তাবনা হলো :
১. সরকারকে এখনই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলা বন্ধ করতে হবে। সেনা ও অন্যান্য বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
২. দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন নিয়ে প্রহসন, সর্বস্তরে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও মানুষের ওপর নির্যাতনের কারণে জনমনে সঞ্চিত ক্ষোভ আজ গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই গণ-আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সাংবিধানিকভাবে বা প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে একটি জাতীয় সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৩. এই জাতীয়/অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে থাকবে—জাতিসংঘের নেতৃত্বে জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ নাশকতামূলক ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা। শিক্ষাঙ্গনে নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে কঠোর আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা। পুলিশ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রচারমাধ্যমসহ প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা। অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৪. অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, সাংবাদিক, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ তরুণদের সংগঠনগুলোসহ প্রয়োজনীয় সব সংগঠনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলবে।
৫. অবাধ নির্বাচনে নির্বাচিত নতুন সরকার সংসদের প্রথম অধিবেশনেই দেশে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতসহ ক্ষমতার ভারসাম্য ও জনগণের অধিকার নিশ্চিতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৬. বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারের সূচনা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই।
এই সময় তারা বলেন, বাংলাদেশ আজ এক মহাসংকটের সামনে দাঁড়িয়ে। এই সংকটের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অন্যদের স্বাগত জানাতে হবে। সব ধরনের প্রতিশোধমূলক ও হিংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশকে সব ব্যক্তি, পরিবার ও দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।
২১ সদস্যের বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ও হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, মানবাধিকার ও ভূমি অধিকারকর্মী শামসুল হুদা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, সুশাসন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার, পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক, শারমিন মুরশিদ, নুর খান, অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক নাইমা হক, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক দীনা সিদ্দিকী, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী শহিদুল আলম, গবেষক রেহেনুমা আহমেদ, চিকিৎসক ড. নায়লা জামান খান।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.