সম্পর্ক শেষ হওয়ার আগেই চাই বোঝাপড়া
ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ ভালোবাসা হচ্ছে স্বর্গের সুখ। প্রেম-ভালোবাসা, প্রিয় জীবন সঙ্গী আমাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। তবে সত্যিকারের ভালোবাসা সবার জীবনে সবসময় অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে না। যেমন সব ভালো কিছুর পেছনে মন্দ থাকে তেমনি প্রেম-ভালোবাসার প্রাণ শক্তির উল্টো পিঠেও দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, হতাশা, কান্না লুকিয়ে থাকে।
ভালোবাসা যেমনি কাছে টানে, তেমনিভাবে ভালোবাসার বিচ্ছেদ ঘটলেে একটু একটু করে একসময় অনেক দূরেও ঠেলে দেয়। অথচ ভুল পথে গিয়ে অনেকের জীবনে এই ভালোবাসাই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিটা মানুষই আলাদা। চলনে, বলনে, ব্যক্তিত্বে। হঠাৎ করে যদি এসবে পরিবর্তন দেখা যায়, তখন অবিশ্বাস মনে দানা বাঁধতে পারে। সেটাকে ডালপালা ছড়াতে না দিয়ে আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে মুখোমুখি হলে ভালোবাসাময় সম্পর্ক দেখে সন্দেহ তখন জানালা দিয়ে পালাবে।
জন্মগতভাবেই মানুষ অন্যকারও সঙ্গ চায়। বিভিন্ন বয়সে, বিভিন্ন সময়ে আমাদের জীবনে বিভিন্ন সঙ্গ আসে। কিন্তু পরিণত বয়সে গিয়ে আমরা সবাই একজন বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গী বেছে নিই বাকি জীবন একত্রে কাটানোর তাগিদে। তার সঙ্গে জীবনের সবকিছু ভাগাভাগি করে নিই।
আর স্বাভাবিকভাবেই আমরা নিজের সঙ্গীকে সবচেয়ে ভালো করে চিনি। তার সঙ্গে সবকিছুতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। তাই তার যেকোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। যা নিজের বেলায় কম হারে পড়ে।
কখনো যদি মনে হয়, সম্পর্কটি দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন বিষয়টি আড়াল না করে সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করুন। সম্পর্কের কোন জায়গাটি এই হাঁসফাঁসভাব তৈরি করছে। নিজেরা যদি আলোচনা করে সমস্যার কেন্দ্রকে বের করে ফেলতে পারেন, তবে দ্রুতই এই দমবন্ধ ভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
এদিকে যদি বলি অবিশ্বাসের কথা! ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু প্রভাব অনেক গভীর। মুহূর্তেই চারপাশটা বিষাদে ঢাকে, বিষিয়ে তোলে। সুন্দর সম্পর্কগুলো ঝড়ের মতো লণ্ডভণ্ড করে দেয়, আবার কখনো উড়িয়ে নিয়ে আছড়ে ফেলে। অথচ পূর্বাভাসে সতর্ক হলে ঝড় সামাল দেওয়া কোনো বিষয়ই না।
খুব কাছের মানুষটি যদি হঠাৎ করেই বদলে যেতে থাকে, তখন মনের মধ্যে শুরু হয় অশান্তি। দ্বিধা বা সন্দেহ মনের মধ্যে জেঁকে বসে, সে কেনো বদলে গেলো, অবহেলা করছে কেনো বা সে কি তবে অন্যকে নিয়ে ভাবছে? এটা বোঝার জন্য কিছু পদ্ধতি আছে, আমরা চাইলেই তার গতি প্রকৃতি দেখে বুঝে নিতে পারি যে অন্য কারো প্রতি ঝুঁকে পড়ছে কি না।
এই অবস্থায় কি করে বুঝবেন যে আপনার সঙ্গী আপনার কাছ থেকে একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে? নিচে উল্লেখ্য ব্যাপারগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
বিছানায় কম উৎসাহ
আপনার সঙ্গী আগে বিছানায় বেশ উৎসাহী থাকলেও আজকাল তাকে একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। তাকে খুব একটা আগ্রহী মনে হচ্ছে না। তাহলে বুঝে নিতে হবে যে সে হয়তো অন্য কোনো দিকে ঝুঁকছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই তার প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ দিতে হবে।
মেসেজের উত্তর কম দেয়া
হয়তো কাজের জন্য ফোন ধরার সুযোগ নাও হতে পারে। তখন ফেসবুকে বা মেসেজে একটা ছোট উত্তর দিয়ে রাখাই যায় যে ব্যস্ততা যাচ্ছে। হয়তো আগে এমনটা জানায় দিতো। কিন্তু ইদানিং দেখছেন মেসেজ দেখা হচ্ছে না অনেকক্ষণ ধরেই। দেখলেও উত্তর দিচ্ছে না সে। তাহলে বুঝে নেওয়া যেতেই পারে যে কাজের অজুহাতে সে হয়তো অন্য কোথাও ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
খরচ বেড়ে যাচ্ছে
হয়তো দুজনে মিলেই সংসার খরচ চালাচ্ছেন। এবং মোটামুটি ভালোভাবেই সংসার চলে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন সংসারের টাকায় বেশ টান পড়ছে। টাকা কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা টেরও পাচ্ছেন না আপনি, হিসাবও মেলাতে পারছেন না। খেয়াল করে দেখে নিন আপনার সঙ্গী অন্য কোথাও লুকিয়ে টাকা খরচ করছে কি না।
হঠাৎ করেই মন গলাতে উপহার
যদি কোনো অনুষ্ঠানে আপনার সঙ্গী আপনাকে গিফট দেয়, তাতে সমস্যা নেই। তবে যদি দেখেন কোনো কারণ বা কথাবার্তা ছাড়াই অতিরিক্ত ভালোবাসা প্রদর্শন করছে বা হুটহাট উপহার দিয়ে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করছে- তাহলে একবার ভেবে দেখুন কেনো এগুলো হচ্ছে। সে কি কিছু লুকাতে চাইছে বা অপরাধবোধ তাকে এমনটা করাতে বাধ্য করছে কি না তা ভেবে দেখতে পারেন।
দূরত্ব
আপনার সঙ্গী কি হঠাৎ করেই খব ভাব নিচ্ছে? তাও আবার আপনার সঙ্গে! হতে পারে সে সবসময় হয় ঠাণ্ডা বা গরম মেজাজে আছে- তাহলে সন্দেহের অবকাশ আছে। হয়তো দেখলেন বাড়ি ফিরেও বাড়িতে কোনো কিছুতে মন নেই। বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে কিংবা ফোনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে। এমনও তো হতে পারে তার মন পড়ে আছে অন্য কোথাও।
অভ্যাস বদলে যাওয়া
হঠাৎ দেখলেন সঙ্গীর অভ্যাসগুলো বদলে যাচ্ছে। আগে যে টিভি শো দেখতেন না, যে খাবার খেতে পছন্দ করতেন না, যেখানে ঘুরতে যেতে চাইতেন না- আজকাল সেসব করছেন বেশ উৎসাহ নিয়েই। এটা একটু অদ্ভুত লাগতেই পারে। হয়ত অন্য কারও জন্য ওই বিষয়ে উৎসাহ পেয়েছেন তিনি।
ভুলো মন
হয়তো ভুলো মন হয়ে গেছে, একটা কাজ বললে আরেকটা করে। কোনো কথা বললে মন দিয়ে শুনছে না, কোনো কাজ ঠিকমতো করছে না। যদি নিয়মিত এমনটা হতে থাকে তবে তার প্রতি একটু বিশেষ নজর দিতে হবে আপনার।
এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কি করে হবে। বাড়বে শুধু কষ্ট। এভাবে প্রতিনিয়ত কোনো সম্পর্কই চলতে পারে না। অনেকেই আছেন, যারা একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারেন না বেশি দিন। কখনো একটা সম্পর্ক কিছুদিন রেখে আবার আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। যেভাবেই তারা একটা সম্পর্কে জড়ান না কেন, বারবার তারা ভাঙেন একটা করে নির্দোষ সম্পর্ককে, হয়তো কষ্ট দেন অন্য মানুষটিকে।
সুখী জীবনযাপনের জন্য আমাদের গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা আরেকজন মানুষের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। ‘যতো দিন ভালো লাগলো সম্পর্কটা আঁকড়ে ধরে রাখলাম, ভালো না লাগলে সম্পর্ক ভেঙে দিলাম’ এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে সম্পর্কে না জড়ানোই ভালো।
সম্পর্কের উৎস হয়তো স্বর্গে, কিন্তু এর লালন চলে মর্ত্যে। কাজেই ভালোবাসার ব্যাপার-স্যাপার এমন রীতির মধ্যে থাকতে হয়, যাতে দুই সঙ্গীরই চাওয়াটা পরিপূর্ণ হয়। খুনসুটি আর ঠোকাঠুকির সমাধান মেলে দুজনের নরম কথা আর একে অন্যের বুঝ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। সম্পর্কটা আসলে টিকে থাকে সঠিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.