সমুদ্রে লাখো পর্যটকের নিরাপত্তায় ২৮ জন লাইফ গার্ড কর্মী

ট্যুরিস্ট পুলিশের আয়োজনে লাইফ গার্ডদের স্ট্রেচার প্রদান অনুষ্টানে বক্তারা

মোঃ নেজাম উদ্দিন,
কক্সবাজারে প্রতিদিন লাখো পর্যটক আসে। বিশেষ করে ছুটির দিন এই পর্যটকের সংখ্য কয়েক গুণ। আর কয়েক লাখ পর্যটক সমুদ্র সৈকতের পানিতে নামার নিরাপত্তায় কাজ করছে মাত্র ২৮ জন কর্মী। বালিয়াড়িতে যে সব ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে তাও পর্যটক অনুযায়ী বেশি নয়। যেমন লাইফ গার্ড বাড়াতে হবে তেমনি ওয়াচ টাওয়ার বাড়ানো দরকার। বর্তমানে লাইফ গার্ড় কর্মীরা বিশে^র সবচাইতে বড় সমুদ্র সৈকতে জাবন পর্যটকদের জীবন বাাঁচানোর জন্য তারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে । তাদের জীবন বাজি রেখে পর্যটকদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে বিশে^র সবচাইতে লম্বা সমুদ্র সৈকতে এমন কম লাইফ গার্ড হওয়ার কারণে ঝুকি থেকে যায়। কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে বেশি পর্যটক থাকে তার মধ্রে সুগন্ধা পয়েন্ট লাবণী পয়েন্ট, সী ক্রাউন পয়েন্টসহ আরো বেশ কয়েকটি পয়েন্ট থাকলেও লাইফ গার্ড কম হওয়ার কারণে সব জায়গায় লাইফ গার্ড় ডিউটি করতে পারছে না । আর যারা রয়েছে তাদেও উপরেও বেশ চাপ থাকে সব সময় কারন তারা এখন সংখ্যায় কম।
ট্যুরিস্ট পুলিশ যে স্ট্রেচার দিয়েছে তা আমাদের জন্য প্রথম। এর আগে আমাদের পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য কোন স্ট্রেচার ছিল না। ট্যুরিস্ট পুলিশ আমাদের লাইফ গার্ড়দের জন্য ৪টি স্ট্রেচার দিয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে যেভাবে পর্যটক আসে আমাদের লাইফ গার্ড়দের সংখ্যা অনেক কম। এখন মাত্র ২৮ জন লাইফ গার্ড় সমুদ্রে পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য কাজ করছে। আমাদের অনেক সুরক্ষা সামগ্রী নেই। রিস্কও বোর্ড় আছে ৩টি, তবে সবকটিই বেহাল অবস্থা। লাইফ টাওয়ার বাড়ানা দরকার বলে মনে করছি, হ্যান্ড মাইক যা রয়েছে তা উন্নতমানের নয়, তাই আমাদের উন্নত হ্যান্ড মাইক দরকার। বীচে কিছু জায়গায় আমরা লাল পতাকা দিয়ে বিপদসঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করলেও অনেক পর্যটক মানেন না। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রভেনসন রিসার্স বাংলাদেশ এর সী সেইফ ফিল্ড টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতর সেইফ লাইফ গার্ড়দের কাজের গতির জন্য ফোল্ডেবল স্ট্রেচার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ লাইফ গার্ড়দের কাজের গতি বাড়ানোর জন্য পুলিশ সুপার জিললুর রহমান নাভানা গ্রæপের সৌজন্যে ৪টি স্ট্রেচার প্রদান করেন। এর আগে আরো কোন স্ট্রেচার ছিল না এটি প্রথম যুক্ত হলো লাইফ গার্ড় সেবায়। বৃহস্পতিবার ( ১সেপ্টেম্বর) সকালে ট্যুরিস্ট পুলিশ কনফারেন্স হলে পুলিশ সুপার জিললুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, প্রথম আলো স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল কুদ্দুস রানা,চ্যানেল আই কক্সবাজার প্রতিনিধি সরওয়ার আজম মানিক,এস এ টিভির জেলা প্রতিনিধি আহসান সুমন, সাংবাদিক ইমাম খাইর,অনলাইন প্রেসক্লাব সভাপতি ও দৈনিক খোলা কাগজের জেলা প্রতিনিধি মোঃ নেজাম উদ্দিন, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রভেনসন রিসার্স বাংলাদেশ এর সী সেইফ ফিল্ড টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ, কলাতলী হোটেল মোটেল কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান, প্রমুখ। শুরুতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ট্যুরিস্ট পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
পুলিশ সুপার জিললুর বলেন, ট্যুরিস্ট সুরক্ষায় আমরা অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে কাজ করছি। আমরা যেমন ট্যুরিস্ট এলাকায় নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত, ঠিক তেমনি ট্যুরিস্টদের সমুদ্রের কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে তাদের সহযোগিতার জন্য আজতে স্ট্রেচার প্রদান করা হয়। এই স্ট্রেচারের মাধ্যমে যেন ট্যুরিস্টদের জীবন রক্ষার কাজে ব্যবহার হয় সে আশা ব্যক্ত করছি। কক্সবাজার পর্যটনখাতকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। কক্সবাজার পর্যটনখাতে সুনাম হলে তা আমাদের সকলের সুনাম।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম অনুষ্ঠানের শুরুতে ট্যুরিস্ট পুলিশের গত চার মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সমুদ্রসৈকতে আগে কিটকট গুলো দুরত্ব বজায় না রেখে বসিয়েছিল। আমরা পদক্ষেপ নিয়ে এক কিটকট থেকে আরেক কিটকটের দূরত্ব ৫ফুট করে বসিয়েছি।
হোটেল মোটেল জোনে স্পা সেন্টারে মালিক, কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে বৈঠক করে তাদের এইডস সচেতনতা মূলক কর্মশালা করা হয়। কলাতলী এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং রয়েছে তাদের প্রতিহত করতে বদ্ধ পরিকর। এরই মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সদস্য আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ট্যুরিস্টদের সাহায্যের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ওয়েব সাইট করবে যেখানে ট্যুরিজমখাতে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। পর্যটন এলাকায় অনুমোদিত অটোরিক্সা থেকে বাঁচায় করে কিছু অটো রিক্সা চালকদের প্রশিক্ষণ করে তাদের পর্যটনবান্ধব বাহন হিসাবে ঘোষনা করা হবে। এখানে যারা আসে সবাই বাইরে থেকে আসে। এখানে একটু গ্রæপ আছে যারা এই পর্যটকদের ইভটিজিং করে তাদের সেবা প্রদান করা হবে এবং যে সব কিশোর রাত ১২টার পরে ঘুরাফেরা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। দলছুট আছে তারা অনেক কান্নাকাটি করে অভিভাবক না দেখে ঐ সমস্ত শিশুদের জন্য রিকভার চাইল্ড কেয়ার সেন্টার করা হবে। পরে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিতে পারবো । ফটোগ্রাফার, অটোচালক, ও ট্যুরিজম ব্যবসায় জড়িত অনেকেই আছে তাদের কথা পর্যটনবান্ধব নয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যেন পর্যটকদের সাথে ভাল ব্যবহার করে।
প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার বেশ ভাল কাজ করছে। যদি এভাবে কাজ করে তবে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের উচিৎ কক্সবাজার পর্যটনখাতকে বিশ্বে তুলে ধরা। তাহলে কক্সবাজার একদিন বিশ্বের মানুষ ভ্রমনে আকৃষ্ট হবে। আমরা স্থানীয়রা এমন কোন কাজ করবো না পর্যটনখাতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া না হয়।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা। পর্যটন বাদ দিয়ে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। অটোচালককদের পরিচিত কার্ড দিলে পর্যটন শহরে অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের ওয়েব পোর্টাল করা হলে পর্যটকদের জন্য সুবিধা হবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের কারণে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ আরো এগিয়ে যাবে। বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন খাতের বিভন্ন সেক্টরের পর্যটনসেবিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যা পর্যটনখাতে ভুমিকা রাখবে। আরেকটি বিষয় পর্যটনসেবিদের মন প্রফুল্ল রাখতে হবে। তাদের মুখে হাসিমুখে থাকে। পর্যটন এলাকায় যেন নিদিষ্ট এলাকা পর্যন্ত যানবাহন থাকে এবং পথচারীদের হাটার ব্যবস্থা করা হয় তবে আরো অনেক উন্নত দেখাবে। সর্বশেষে প্রেসক্লাব সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী সম্প্রতি ইউরোপ ভ্রমনে ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্রান্ড এম্বাসাডর হিসাবে কাজ করায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.