লাইফস্টাইল ডেক্স: শীতকাল যেমন পরিচিত ভুরিভোজের জন্য, তেমনি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মাত্রাও কিন্তু বেড়ে যায় এই সময়েই। কারণটা খুব সহজ। আসলে শীতকালে তাপমাত্রা এত কমে যায় যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের সংখ্যা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এই সব ব্যাকটেরিয়ারা জন্ম নেওয়ার পর যে চুপ করে বসে থাকবে না, তা তো বলাই বাহুল্য! আর ঠিক এই কারণেই বছরের এই সময় নানাবিধ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় চোখে পরার মতো। আর এমনটা হয় বলেই শীতকালে সুস্থ থাকতে নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আসলে রোজের ডায়েটে এই সবজিটিকে জায়গা করে দিলে শরীরে উপকারি ভিটামিন এবং মিনারেলের পাশাপাশি আরও এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ক্ষতিকর জীবাণুরা যেমন ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না, তেমনি আরও একাধিক উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন-
দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটোয় উপস্থিত ভিটামিন এ, ফ্লেবোনয়েড, থিয়ামিন, ফোলেট এবং নিয়াসিন শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে একাধিক চোখের রোগকে দূরে রাখতেও এই উপদানগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, যেমনটা আগে আলোচনা করা হয়েছে যে শীতকালে একাধিক ক্ষতিকর জীবাণুর প্রকোপ বেড়ে যায়। আর এই সব ব্যাকটেরিয়াগুলোর কারণে যাতে চোখের কোনও ক্ষতি না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে রোজের ডায়েটে টমেটোর আন্তর্ভুক্তি মাস্ট!
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে
টমেটোয় উপস্থিত মিনারেল এবং ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করার পর শিরা-ধমনীর উপর রক্তের প্রেসার কমতে শুরু করে। ফলে ব্লাড প্রসোর নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। তাই এই মারণ রোগ থেকে যদি দূরে থাকতে চান, তাহলে নিয়মিত ২-৩ টি করে টমেটো খেতে ভুলবেন না যেন!
ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটোয় উপস্থিত লাইকোপেন প্রস্টেট, কলোরেকটাল এবং স্টমাক ক্যানসার রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে লাইকোপেন হল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষের বিভাজন ঠিক মতো হতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যানসার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে। আর যদি একবার ক্যানসার কোষ জন্ম নিয়েও নেয়, তাহলেও যাতে তার বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে না হয়, সে দিকে টমেটো খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মারণ রোগ শরীরকে ক্ষয় করার সুযোগ পায় না।
স্কিন টোনের উন্নতি ঘটে
টমেটোয় উপস্থিত লাইকোপেন নামে একটি উপাদান ত্বকের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে আরেকভাবেও এই সবজিটিকে কাজে লাগাতে পারেন। কীভাবে? ১০-১২ টা টমেটো নিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করে নিন। তারপর টমেটোর স্কিনটা ভুল করে সারা মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পরে ভাল করে মুখটা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে কয়েকবার এমনভাবে ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন বলিরেখা কমতে শুর করবে। সেই সঙ্গে স্কিনের ঔজ্জ্বল্যও বৃদ্ধি পাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
নিয়মিত ১-২ করে টমেটো খাওয়া শুরু করলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই ভিটামিনটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে। ফল সি ভিটামিনের পরিমাণ শরীরে যত বাড়ে, তত রোগ ভোগের আশঙ্কা হ্রাস পেতে শুরু করে। এবার বুঝেছেন নিশ্চয় যে রোজের ডায়েটে এই সবজিটি রাখলে কতই না উপকার মেলে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটোর শরীরে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর পাকস্থলির কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে হজম সংক্রান্ত যে কোনও ধরনের সমস্যা কমতে একেবারেই সময় লাগে না। সেই সঙ্গে কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই সবজিটি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
টমেটোয় উপস্থিত ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, যাদের পরিবারে হাই কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা আজ থেকেই কাঁচা টমেটো খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন আয়ু বাড়বেই বাড়বে।
ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়
যেমনটা আগেও অলোচনা করা হয়েছে যে রক্তিম বর্ণের গোলগাল এই সবজিটির ভিতরে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি ভিটামিনের সন্ধান পাওয়া যায়, যেমন ধরুন ভিটামিন এ, কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৭ এবং সি। সেই সঙ্গে টমেটোর শরীরে প্রচুর মাত্রায় মজুত থাকে ফলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিঙ্ক এবং ফসফরাসের মতো খনিজও। তাই নিয়মিত টমেটো খেলে শরীরের যে নানাবিধ উপকার হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ত্বকের বয়স কমে
আপনার বয়স কি ৩০ পেরিয়েছে? তাহলে প্রতিদিন টমেটোর রস লাগানো শুরু করুন মুখে। কারণ এই বয়সের পর থেকেই নানা কারণে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলিরেখা প্রকাশ পাওয়ার কারণে সৌন্দর্য কমে চোখে পরার মতো। কিন্তু যদি টমেটোকে উদ্ধার কাজে লাগান, তাহলে ত্বকের এমন খারাপ অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটির ভিতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান ত্বকের ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে স্কিনের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হওয়ার কারণে ত্বক টানটান হয়ে ওঠে। ফলে বলিরেখা গায়েব হতে সময় লাগে না।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর হয়
কখনও খাবারের সঙ্গে তো কখনও অন্যভাবে আমাদের শরীরে টক্সিক উপাদানের প্রবেশ ঘটে। এই ক্ষতিকারক উপাদানগুলো যাতে শরীরের কোনও ক্ষতি করতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে একাধিক রোগের হাত থেকেও রক্ষা করে। টমেটো যেহেতু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, তাই তো শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত কাঁচা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
ত্বকের ভিতরে জমে থাকা ময়লা বেরিয়ে যায়
এ কথা নিশ্চয় জানা আছে, পরিবেশে উপস্থিত ডাস্ট পার্টিকালরা প্রতিনিয়ত ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। তাই তো দিনের শেষে সবাইকেই ভাল করে মুখ ধুয়ে শুতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যাটা হল বাজার চলতি বেশিরভাগ ফেসওয়াশ জেলই এই কাজটি ঠিক মতো করে উঠতে পারে না। ফলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমন অবস্থায় ত্বককে বাঁচাতে যদি অ্যাভোকাডোর সঙ্গে টমেটোর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে কিন্তু দারুন উপকার পাওয়া মেলে। আসলে এই দুই প্রকৃতিক উপাদান একদিকে যেমন ত্বকের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তোলে। ফলে সৌন্দর্য বাড়ে চোখে পরার মতো।
হাড় শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-কে সমৃদ্ধি হওয়ার কারণে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে টমেটোর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই তো বুড়ো বয়সে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের হাত থেকে বাঁচতে এখন থেকেই টমেটো খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.