শার্শার ৩৩টি মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই

ইয়ানূর রহমান : ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছরেও যশোরের শার্শা উপজেলা ও বেনাপোল পোর্ট থানার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। বিশেষ করে উপজেলা ও পোর্ট থানার ৩৩টি মাদ্রাসার একটিতেও শহীদ মিনার নেই। তাছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়েও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে ওই সব প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন হয় না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে। এসব কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতে সমাজের নামীদামি ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে থাকলেও দীর্ঘদিনেও শহীদ মিনার তৈরি করতে পারেনি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ তারা অন্য খাতে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে থাকেন।

পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন অনুদানতো দেন না উপরান্ত নিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ও বরনে। ফলে নানা ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে ভাষাপ্রেমী মানুষের মধ্যে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শার্শা ও বেনাপোলে ২শ‘৬৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১২৬টি প্রাথমিক, ও প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি মিলিয়ে আরো রয়েছে ৫৪টি। এদের মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৮টিতে। ৩৮টি হাইস্কুলের মধ্যে ২৬টিতে শহীদ মিনার আছে। ১২টি কলেজের মধ্যে মাত্র ৩টিতে শহীদ মিনার আছে। ৩৩টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও কোন শহীদ মিনার নেই। তবে সব মিলিয়ে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে। এবং এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়।

অভিযোগ আছে, মাদ্রাসাগুলোতে দিবসটি পালন করা হয় না। কোন কোন মাদ্রাসায় নামমাত্র মিলাদ মাহফিল ও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনসহ কোন ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নির্মাণ না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না শিক্ষার্থীরাসহ এলাকার মানুষ।

উপজেলার নাভারন বুরুজবাগান ফাজিল মাদ্রাসার সুপার এ,কিউ,এম ইসমাইল হোসাইন জানান, মাদ্রাসাটি ১৯৬৫ সালে নির্মিত হলেও অদ্যবধি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

একই দাবি করেন উপজেলার লক্ষণপুরের রহিমপুর আলিম মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শহিদুল্লাহ। মাদ্রাসায় শহীদ মিনার না থাকলেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।

ধান্যখোলা ডি,এস সিনিয়র মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আনোয়ার হোসেন জানান, অনেক মাদ্রাসা মানুষের দানে চলে। তাছাড়া জায়গা সংকট রয়েছে। এ কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব না মাদ্রাসার পক্ষে। তারপরও আমরা তো (মাদ্রাসাতে) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে দোয়া অনুষ্ঠান করি।

নাভারন ফজিলাতুননেছা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শারমীন নাহার জানান, আমাদের কলেজে শহীদ মিনার না থাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার পায়ে হেটে বুরুজবাগান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হয়। অথচ আমাদের কলেজের পরিচালনা পরিষদে নামী দামি ব্যক্তিরা রয়েছে। তারা ইচ্ছা করলেই ৭ দিনে মধ্যে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিতে পারেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা বাধ্যকতা থাকলেও শার্শার অনেক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অফিসিয়াল আদেশের কারণে মাদ্রাসাগুলোতে শহীদ মিনার না থাকলেও দিবসটি পালন করতে হবে। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

শার্শা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৮টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। আগের উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকার সময় সরকারের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে একটি পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ যাওয়ায় সেই উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আবার উদ্যোগ নিচ্ছি। তৃণমূল পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে বা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানাতে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার মন্ডল অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে শহীদ মিনার না থাকার কথা স্বীকার করে জানান, উপজেলার প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোন বরাদ্দ নেই। এটা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করতে পারে। তবে উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য বিষয়টি উত্থাপন করা যেতে পারে। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি ভাবে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.