লবণের মূল্য যেখানে বেশি পান সেখানেই বিক্রি করুন- মোল্লা সল্ট এমডি

মোঃ নেজাম উদ্দিন,
দেশে লবণ উৎপাদনে এবার উল্লম্ফনের আশা করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। গত মৌসুমে ৬১ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন হলেও সেটি দেশের চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম ছিল।তবে এবার চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আরও যতদিন আছে লবণের চাষ ভাল হবে বলে মনে করছন চাষীরা। তবে লবণের দাম ঠিক রাখার দাবি রাখেন কোম্পানিদের। এতে করে প্রথমবারের মতো লবণ রফতানির পরিকল্পনাও করছে সরকার।

এদিকে কক্সবাজারে লবণ চাষীদের নিয়ে অটুট বন্ধনে সমৃদ্ধ পথচলা শ্লোগানকে সামনে রেখে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার( ২১ ফ্রেরুয়ারি) সকালে মোল্লা সুপার সল্ট ও মোল্লা সল্টের আয়োজনে হোটেল সায়মন হলরুমে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠান শুরুতে আগত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করেন মোল্লা সুপার সল্ট ও মোল্লা সল্টের কর্মকর্তাবৃন্দ। কোরআন তেলওয়াত করেন কক্সবাজার পাহাড়তলী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আনোয়ার হোসেন আনচারি।
শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করা হয় ও এক মিনিট দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে আগত জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা লবণচাষীদের পরিচয় পর্বে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, মোল্লা সল্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মোল্লা, জেনারেল ম্যানেজার বিদ্যুৎ চন্দ্র গুপ্ত, আব্দুল মান্নান, এসেসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন,বাংলাদেশ লবণচাষী সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী, এসেসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার মামুনুর রশীদ।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, আপনারা যেখানে লবণের দাম বেশি পাবেন সেখানেই বিক্রি করুন। আমার একটি অনুরোধ লবণে পানি দিবেন না।  লবণ স্বচ্ছ রাখুন।  আজকে আপনাদের পাশে পেয়ে আমি আনন্দিত। এখানে যারা আছেন অনেকই আমার বাবার সাথে কাজ করছেন।এখন আমি আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
আমি লবণ ক্রয় করছি পানি নয়। আপনাদের সঠিকভাবে লবণ দিতে হবে। ব্যবসায় লাভ ক্ষতি রয়েছে। যদি পাশের দেশ ভারত পারে তবে আমরা কেন সুন্দর লবণ দিতে পারবোনা।

লবণচাষীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,
জমির হোসেন( ডুলাহাজারা), নাজিম উদ্দিন কোম্পানি (চকরিয়া), ছাবের আহমদ, মোঃ শহীদুল ইসলাম, আবু কায়সার, আব্দুল মালেক (মহেশখালী), সারওয়ার আলম (বদরখালী), থেকে জাফর আলম (উজানটিয়া), হাজী আব্দুস সালাম (টেকনাফ) মোঃ রাসেল (টেকনাফ), ওসমান গণি (বাঁশখালী)

ডুলাহাজারা থেকে আসা লবণচাষী জমির হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, মোল্লা সল্ট গ্রুপ প্রতিবছর লবণ চাষীদের জেলায় এনে যে সম্মাননা প্রদান করা হয় তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের সকলের পক্ষ থেকে একটি অনুরোধ জানাবো আপনারা যেন আমাদের কাছ থেকে লবণ ক্রয় বন্ধ না করেন সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।

লবণচাষী আবু কায়সার বলেন,যদি আপনারা লবণ ক্রয় বন্ধ করেন তবে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। অনেক সময় আমরা মাঠ পর্যায় থেকে ক্রয় করে আপনার দিই। লবণের মাঠ কিছুদিন আগে দাম বাড়লেও এখন হঠাৎ করে লবণের দাম কমেছে মাঠ পর্যায়ে। হঠাৎ করে লবণের দাম কমে গেলে চাষীদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

মহেশখালী থেকে আসার সারওয়ার আলম বলেন, মাঠে সাদা লবণের চাহিদা বেড়েছে। পলিথিন ব্যবহারের ফলে আমরা এই সাদা লবণ পাচ্ছি। পলিথিন ব্যবহারের ফলে সাদা লবণের দাম একটু বেশি পড়ে। অন্যদিকে নদী ভরে যাওয়ার কারণে জোয়ার ভাটায় প্রভাব পড়েছে। তাতে লবণচাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন। যদি ভারত থেকে লবণ আমদানি করা হয় যে টাকা খরচ হয় সে টাকা আমাদের দিলে হবে। আমাদের একটাই দাবি লবণের দাম যেন কমানো না হয়।

জাফর আলম বলেন, এখন লবণ উৎপাদনে আমাদের ব্যয় বেড়েছে, তাই বড় কোম্পানিদের খেয়াল রাখতে হবে যেন লবণচাষ বন্ধ করতে না হয়। ন্যায্য মূল্যে যেন মাঠ থেকে লবণ ক্রয় করা হয়

বাংলাদেশ লবণচাষী সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, আমরা সকলে লাভের আশাবাদী ক্ষতির সম্মুখীন হতে প্রস্তুত নই। আমি সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, মাঠের লবণ দেখে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যদি সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা যায় তবে লবণচাষ বন্ধ হবে না। এখন অনেক চাষীদের কাছ থেকে শোনা যায় প্রসেসিং ঘাটতির কারণ লবণচাষে ক্ষতি হচ্ছে। অনেকাংশে দেখা যায় ৪০ কেজি লবণে ৩০ কেজি লবণ যায় কোম্পানিদের হাতে। অনেক লবণচাষী লবণে পানি দেওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যায় তাতে লবণ কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তা কোনভাবেই করা যাবেনা। আমাদের লবণের বিকল্প কিছু নেই। তাই আমাদের এই চাষ বন্ধ করা যাবে না। সোডিয়াম সালফেট আনা বন্ধ করতে গত চার বছর কাজ করছি। এখন সোডিয়াম সালফেট আসা কম হওয়ার কারণে লবণের দাম বর্তমানে বেড়েছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে,গত মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ লাখ ৫৭  হাজার টন বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। গত মৌসুমে ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ চাষ হয়, যা এবার প্রায় সাড়ে ৬৬ হাজার একর।
তথ্য বলছে, প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর থেকে পরের বছরের ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়। এবার মৌসুম শুরুর দেড় মাস আগে শুরু হয়েছে উৎপাদন। অন্যদিকে, শতভাগ জমিতে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে
লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতির তুলনায় পলিথিন পদ্ধতিতে আড়াই গুণ বেশি লবণ উৎপাদিত হয়। এছাড়া পলিথিন পদ্ধতির লবণের গুণমানও ভালো। পলিথিন পদ্ধতির কারণে পরিবহনের সময়ও লবণের অপচয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বছর মৌসুম শুরুর দেড় মাস আগে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি চাষী এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। জমির পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়েছে। প্লাস্টিক পদ্ধতি প্রয়োগ করায় প্রক্রিয়াকরণের সময় কোনো রকম অপচয় হচ্ছে না। চাষীরা অন্য সময়ের চেয়ে এবার দামও পাচ্ছেন অনেক বেশিএসব দিক বিবেচনায় আমরা আশা করছি এবার অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশি লবণ উৎপাদন হবে। জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন।

 

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.