রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার ব্যর্থ : ফখরুল
ওয়ান নিউজঃ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমগ্র বিশ্ব যখন স্বোচ্চার হয়ে উঠেছে, রুখে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ করছে তখন বাংলাদেশ সরকার প্রায় নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।
ফখরুল বলেন, প্রথম দিকে তারা কেবল বাঁধাই দেয়নি, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের এদিকে আসতে দেয়নি। আজকে দেখছি, নাফ নদীর তীরে শিশুদের লাশ পড়ে আছে, নৌকা ডুবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আরাকান রাজ্যের গ্রামগুলো পুড়ছে তখন আমাদের সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।
আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব বলেন। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের প্রতিবাদ এবং তাদেরকে আশ্রয় দানের দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত এই মানববন্ধন হয়।
কূটনৈতিক ও মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এর কারণ এ সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহীতা নেই। সে জন্যই তারা এ কাজ করেনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭৯ সালে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে এসেছিল, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য ও চিকিৎসা দিয়েছেন এবং সেইসাথে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছেন রোহিঙ্গাদের আরাকান রাজ্যে ফিরিয়ে নিতে। পরবর্তীতে একইভাবে খালেদা জিয়া ১৯৯২ সালে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আরাকান রাজ্যে ফেরত পাঠান।
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আজকে এ সরকার প্রথমেই বলছে-এটা আমাদের দায়িত্ব নয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আমরা সৃষ্টি করিনি। সুতরাং দায়িত্ব আমাদের নয়। আজকে বিশ্বমানবতার জন্য মানবিক কারণে যে কোনো দুস্থ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। এটা পরিষ্কার করে আমাদের সংবিধানে উল্লেখ আছে।
সুতরাং আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হোক, খাদ্য, নিরাপত্তা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে।
মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র ও কেন্দ্রীয় নেতাাদের মধ্যের বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এনি, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিম, প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, ওলামা দলের এম এ মালেক, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, নাজমুল হাসান, মফিজুর রহমান আশিক, ছাত্র নেতা নাহিদুল ইসলাম সুহাদ, রফিকুল ইসলাম রফিক, সর্দার এম নূরুজ্জামান, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, শায়রুল কবির খান, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ।
মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন। তিনি অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করে তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান রিজভী। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করতে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.