মুজিবুল হক মুনির:
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত সাম্প্রতিক অগ্নিকান্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি। সরকারের তদন্ত চলছে, স্পষ্ট কারণ জানতে সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আগুন লাগার কারণ নিয়ে অনুমাননির্ভর মন্তব্য করা সমীচিন হবে না, তবে অন্তত একটি যুক্তিসঙ্গত ঝুঁকির কথা তোলা যায় বৈকি। সেটা ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
পত্রিকার পাতায় প্রায়শই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পাই, খবর পাওয়া যায় এর কারণে মর্মান্তিক মৃত্যুর। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা হাজার হাজার সিলিন্ডার যে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে সেটা অনুধাবনের জন্য বড় বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পরপরই একটি তাৎক্ষণিক সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ২২ মার্চ। সেই প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা তথ্যের আলোকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণকেই আগুনের সূত্রপাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক টাইমসও একটি প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বলছে যে, গ্যাস সিল্ডিার বিস্ফোরণ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
এক্ষেত্রে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা ইমদাদুল হকের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। অনলাইন একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত তাঁর ভাষ্য, ‘ক্যাম্পে এ পর্যন্ত যেসব আগুনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ৯০ শতাংশের কারণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। অরক্ষিতভাবে সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।’ তাঁর এই মন্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৯ সালের একটি ঘটনায়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) ২০২৯ সাালের ২০ মার্চ জানায়, টেকনাফে অনিবন্ধিত লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে আগুনে ২০টি ঘর পুড়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি ঘরে হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে আগুনের সূত্রপাত হয়ে প্রথমে হাসিনা বেগমের ঘরে এবং পরে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন (২৩ মার্চ) খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার নুরুল আলম বলেন, আগুন লাগলেও এতবেশি ক্ষয়ক্ষতি হত না। এত বিশাল ক্ষয়ক্ষতির পেছনে গণহারে রোহিঙ্গাদের মাঝে রান্নার গ্যাস সরবরাহই দায়ী। কারণ রোহিঙ্গারা গ্যাসে রান্না করতে অভ্যস্ত নয়। অনেকে গ্যাস থাকার পরও লাকড়ির চুলাতে রান্না করেন। এছাড়া অনেকে সস্তায় গ্যাস বিতরণকারীদের কাছে তা বিক্রি করে দেন। এসব ছাড়াও গ্যাস রিফিলের সময় আসলে কেউ কেউ ঘরের সামনে এনে গ্যাস ছেড়ে দিয়ে তা আবার রিফিল করেন।
বাজারে যে অনেক নিম্নমানের, মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার দেদারসে বিক্রি হচ্ছে, সেটা সবাই কম বেশি জানে। মূলত এই সিলিন্ডারগুলো খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের সিলিন্ডার আছে, এমনকি এক ঘরে একাধিক সিলিন্ডার আছে বলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
সময় এসেছেন বিকল্প ভাবার। এত বড় একটি জনগোষ্ঠীর জন্য জ্বালানী সরবরাহ কঠিন কাজ, সন্দেহ নেই। কিন্তু জ্বালানী সরবরাহের নামে, তাঁদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করারও বাঞ্চনীয় নয়। এর বিকল্প উপায় আছে অবশ্যই, পরবর্তী কোন রচনায় সন্ধান করার চেষ্টা করবো সেই বিকল্পের।
মুজিবুল হক মুনির
যুগ্ম পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.