ডেস্ক নিউজ
অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে গ্রেপ্তার প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম যাতে ন্যায়বিচার পান তা নিশ্চিত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার মন্ত্রী বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের ব্যাপারে মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করেছে। সেই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে তাঁকে সেখানে হেনস্থা করেছিল কি না। কিংবা এই ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারো কোনো অপরাধ আছে কি না। বা রোজিনা ইসলামের কী অপরাধ সেটিও বেরিয়ে আসবে। এবং পুলিশও তদন্ত করছে। মামলা হয়েছে।’
‘সুতরাং, আমি তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বলতে চাই, এই ক্ষেত্রে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম যাতে সুবিচার পান সেটি অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব’, যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
দুপুরে চট্টগ্রামে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের করোনাকালীন দ্বিতীয় পর্যায়ের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায় থাকলে ব্যবস্থা নেবে সরকার।’
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সিইউজের সভাপতি মো. আলী, শামসুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরে সিইউজের ৯০ জন সাংবাদিকদের হাতে ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন মন্ত্রী।
এ সময় বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়য়ন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একেকটা ইস্যু একেক সময় তৈরি করার অপচেষ্টা চালানো হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ফিলিস্তিনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিবৃত্তি দেয় না, কিন্তু রোজিনা ইসলাম কেন পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকল সেটি নিয়ে বিবৃতি দিল। বিষয়টি নিশ্চই চিন্তার বিষয়।’
সরকারের ওপর আস্থা রাখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর।’
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথা বলে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে ৯টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
গভীর রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি গোপনীয় নথি চুরির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং ওই নথি দ্বারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে সাংবাদিকেরা থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। নানা নাটকীয়তার পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আদালতে তুলে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে থানা পুলিশ। পরে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার পর দিনভর সারা দেশে রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন সাংবাদিকেরা। এ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সাংবাদিক শাহবাগ থানায় গিয়ে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে আবেদন করেন। তাঁদের দাবি, তাঁদেরও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হোক। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আজও সারা দেশে মানববন্ধন করছে সাংবাদিক সমাজ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.