রিজেন্টকাণ্ডের সাহেদ অর্থ আত্মসাত মামলায় ফের রিমান্ডে

ডেস্ক নিউজ:
করোনভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে দেশজুড়ে আলোচিত মোহাম্মদ সাহেদ করিমকে চট্টগ্রামের একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (১৭ মে) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। নগরীর ডবলমুরিং থানায় সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলাম। ভার্চুয়ালি শুনানি শেষে আদালত তিনদিন মঞ্জুর করেছেন। আসামি সাহেদ করিমকে সশরীরে হাজির করা হয়নি। তাকেও ভার্চুয়ালি হাজির করা হয়। পরবর্তীতে আমরা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের হেফাজতে নেব।’

ঢাকায় অটোরিকশা চলাচলের জন্য বিআরটিএ’র ভুয়া রুট পারমিট সরবরাহ করে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের একটি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মামলাটি দায়ের করেছিল। গত বছরের ১১ অক্টোবর ওই মামলায় সাহেদকে গ্রেফতার দেখানোর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল। আদালত ওই সময় চারদিন মঞ্জুর করেছিলেন। এরপর চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একই মামলায় সাহেদ করিমকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত।

২০২০ সালের ১৫ জুলাই ভারতে পালানোর পথে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে, যার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর চিকিৎসা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে।

ওই বছরের ১৩ জুলাই নগরীর ডবলমুরিং থানার ধনিয়ালাপাড়া এলাকার মেসার্স মেগা মোটরস নামে একটি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বাদি হয়ে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় মেগা মোটরসের সাবেক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহকেও (৬০) আসামি করা হয়। মামলায় ঢাকায় অটোরিকশা চলাচলের জন্য বিআরটিএ’র ভুয়া রুট পারমিট সরবরাহ করে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, শহীদুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে সাহেদ করিম তাদের রুট পারমিট পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকাগুলো নেন এবং সেগুলো আত্মসাত করেন।

ওই মামলা দায়েরের পর সাহেদ করিম সম্পর্কে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।

অভিযোগ পাওয়া যায়, মেগা মোটরসের আমদানির পর চেসিস নম্বর জালিয়াতি করে বিক্রির জন্য রাখা ১৭টি সিএনজি অটোরিকশা ২০১৬ সালে জব্দ করে সাহেদ করিমের রোষানলে পড়েন সিএমপির গোয়েন্দা শাখার একাধিক কর্মকর্তা। সাহেদ শুধু অটোরিকশাগুলো ছাড়িয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হননি, দাপট দেখিয়ে অভিযানে থাকা চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ ঠুকে দেন পুলিশের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রোফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড (ডিএনপিএস) বিভাগে। এরপর সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে মৃদু শাস্তি দেওয়া হয়। তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (বর্তমানে পরিদর্শক) পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তদন্ত হয়েছিল।

যে চারজন পুলিশ সদস্য সাহেদ করিমের রোষানলে পড়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারা হলেন- নগরীর খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফতাব হোসেন, চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া এবং এএসআই সাদেক মোহাম্মদ নাজমুল হক ও মো. আজমির শরীফ।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.