রামু ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আইটিসি অক্সিজেন প্ল্যান্ট

আইওএম-ইউএসএআইডি’র যৌথ অর্থায়নে

নীতিশ বড়ুয়া, রামু

রামুতে করোনা রোগী ও স্থানীয় সুবিধা বঞ্চিতদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য কক্সবাজার জেলার প্রথম করোনা হাসপাতাল ‘রামু ডেডিকেটেড হাসপাতালে’ আইটিসি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আইওএম-ইউএসএআইডি’র যৌথ অর্থায়নে সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে ও কারিগরী সহায়তায় এ অক্সিজেন প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় ‘রামু ডেডিকেটেড হাসপাতালে’ আইটিসি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি। পরে অতিথিরা রামু উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আইটিসি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নেন।

কক্সবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহজাহান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, জরুরি অক্সিজেন সেবার অভাবে এই করোনা কালে আমাদের অনেক আপনজনকে হারিয়েছি। কক্সবাজার জেলার প্রথম করোনা রোগীদের হাসপাতাল রামু ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব ছিলো। অক্সিজেনের অভাবে মুমুর্ষ রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হতো।

রামুতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে আইওএম এর সহায়তায়। এখন আর অক্সিজেনের জন্য রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে হবে না। দুইটি হাই ফ্লো নেজাল কেনুলা দিয়েছে আইওএম। রামু হাসপাতালের করোনা রোগীদের সহজে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির পাশাপাশি সুবিধা বঞ্চিত স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তা প্রদানেও কাজ করছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ও সচেতনতা বাড়ানো সহ কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইওএম এর সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, আইওএম বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়েই কাজ করছে। পাশাপাশি আমরা উপলব্ধি করেছি, স্থানীয় সুবিধা বঞ্চিত জনসাধারণের জন্যেও কাজ করা প্রয়োজন। সেই উপলব্ধি থেকেই আইওএম বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা প্রদানে কাজ শুরু করে। স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে আইওএম সেই সহযোগিতা দিচ্ছে। এতে করে স্থানীয় জনসাধারণ সুফল ভোগ করতে পারবেন। আইওএম এর এই সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, আইওএম বাংলাদেশ লিয়াজো অফিসার বি এম মশিউর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহিউদ্দিন আলমগীর, আইওএম কক্সবাজার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ডা. সমির কুমার হাওলাদার প্রমুখ।

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা। সভামঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রামু সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সরওয়ার উদ্দিন, রামু থানা অফিসার ইনচার্জ কে এম আজমিরুজ্জামান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা জেসমিন পপি, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হক প্রমুখ।

আইওএম কক্সবাজার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ডা. সমির কুমার হাওলাদার জানান, আইওএম-ইউএসএআইডি’র যৌথ অর্থায়নে ১০ লাখ ডলার (প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা) ব্যয়ে ও কারিগরী সহায়তায় রামু ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইটিসি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়েছে। এ অক্সিজেন প্ল্যান্টের মাধ্যমে হাসপাতালের ৫০ জন রোগীকে একসাথে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে এবং একজন রোগীকে প্রতি মিনিটে ৬.৬০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে।

তিনি বলেন, বৈদেশিক কারিগরী সহায়তায় আইটিসি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্টটি স্থাপন করতে ছয় মাস সময় লেগেছে। আগামী এক বছর পর্যন্ত রামু ডেডিকেটেড হাসপাতালের এই আইটিসি অক্সিজেন জেনারেটর প্ল্যান্ট এর কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা দেবে আইওএম।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.