সম্প্রতি দৈনিক খোলাকাগজে রামু জোয়ারিয়ানালার অবৈধ স্থাপনা ও হাতির আবাসস্থল বনখেকোদের দখল নিয়ে বন্যহাতির বিচরণক্ষেত্র বনখেকোদের দখলে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে কে বা কারা বন দখল করে আছে এমন আরো তথ্য নিয়ে অভিযানে নামে বনবিভাগ। শনিবার সকালে রামুর জোয়ারিয়ানালায় বনবিভাগের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে প্রথমে বনবিভাগের জায়গায় লেবু বাগান করেছে নজির আলম ও তার সঙ্গে থাকা আরো কয়েকজন মিলে বনকর্মকর্তাদের উপর প্রথম হামলা চালায় এবং এলাকায় ডুকতে বাধা দেয় বলে জানা গেছে।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জাধীন জোয়ারিয়ানালা বনবিটের বনভুমিতে ভিআইপি টিলা এলাকায় অবৈধ মুরগীর ফার্মসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বনকর্মীরা।চিহ্নিত ভূমি দস্যূ অবৈধ জবরদখলকারী ফয়সাল (৩২) মুরগির খামার নির্মাণের ঘর তৈরীকালে উচ্ছেদ অভিযান করা হয় সকাল থেকে। অভিযানের শেষ পর্যায়ে আবারো চিহ্নিত ভূমিদস্যূ বনখেকো বনবিভাগের জায়গায় জোর করে লেবু বাগানকারি নজির আলম ও ফয়সাল (৩২) ও তার সহযোগী ওবাইদুল (৩৪), কালাম (৩০), রুবেল, আরিফ, মহিউদ্দিন সহ অজ্ঞাত নামা আরো ৪০-৪৫ জন অকস্মাৎ অভিযানে অংশগ্রহণকারী বনকর্মী শ্রমিকদের উপর ধারালো দা, লাঠি, লোহার রডসহ স্থানীয় অস্ত্র-সস্ত্র সহযোগে হামলা করে এতে বনবিভাগের ৮সদস্য গুরুতর আহত হয় বলে জানা গেছে । তার এখন রামু ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে।
কক্সবাজার বিশেষ টহল দলের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু খায়ের মোঃ আতা এলাহী জানান, জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা সোলতান মাহমুদ টিটুর নেতৃত্বে বিভিন্ন রেঞ্জ ও বিটের বনকর্মী এবং বনজাগীরদার অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান থেকে ফেরার সময় পথিমধ্যে দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ জন আহত হয়েছে।
জোয়ারিয়ানালা বনবিটের অধীনে ভিআইপি টিলা এলাকার আশপাশে বনবিভাগের জমিতে সৃজিত লেবু বাগান, মুরগীর ফার্ম, মাছের প্রজেক্টসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনার মালিকরাই সহ ৫০/১০০ জনের বনদস্যূ তাদের উপর আক্রমন করে। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গুলিও বর্ষণ করে হামলাকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিআইপি টিলায় মুরগী ফার্ম, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ইতোপূর্বে অবৈধ লেবু গাছ উচ্ছেদের কৈফিয়ত চেয়ে বনকর্মীদের অবরোদ্ধ করে রাখে। বনকর্মীরা ফেরার চেষ্টা করলে এলোপাতাড়ি কুপানো হয়। বনকর্মীরা ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে চলে আসতে চাইলে পথে আরো ৩ বার হামলায় পড়ে বনবিভাগের লোকজন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল ইসলাম জানান, জনবল ও মনোবল সংকটে পড়েছে বন বিভাগ।
তিনি বলেন, বনের জমিতে ইটভাটা, মুরগী ফার্ম, লেবু বাগানে নামে বিশাল বনভুমি দখল, বনের জমিতে করাত কল, বনের কাট ইটভাটাতে হাজার টন পুড়ানোর পর অবশিষ্ট চারা গাছটুকু কেটে নিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্বে কথা বলা যাবেনা !
বনবিভাগের জমি দখলকারীর তালিকা হলেও চিহ্নিত ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। বনকর্মীদের নির্মম হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, বনভুমির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ফেরার সময় পথিমধ্যে বনকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা চরম অমানবিক। পর্যায়ক্রমে বনবিভাগের বেদখল হওয়া এই এলাকার সব বনভুমি উদ্ধারে প্রক্রিয়া চলছে। আহতদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
হামলার ঘটনার পর-পরই কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগএর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, মোঃ তহিদুল ইসলাম, রামু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রনয় চাকমা, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক, মোহাম্মদ সোহেল রানা ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.