রাত পোহালেই জেলা পরিষদ নির্বাচন

রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহু কাঙ্খিত কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচন। দীর্ঘ ২৬ বছর পরে আবার জেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলার ১৫ ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থীসহ মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে ৮১ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ১০০৩ জন। সেখানে পুরুষ ভোটার ৭৬৮ এবং মহিলা ভোটার ২৩৫ জন। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩০টি।

মূলত: উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তবে সাধারণ সদস্য পদে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ভোট কেনাবেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র মতে, নির্বাচনে ১৫ ওয়ার্ডের মশ্যে ১২, ১৩ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ওয়ার্ডগুলোতে ‘সদস্য’ পদে নির্বাচন হচ্ছে না।

সংরক্ষিত নারী আসন ৫-এ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানেও সংরক্ষিত পদে ভোট যুদ্ধ নেই।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (আনারস) ও জেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ সালাহ উদ্দীন মাহমুদ (মোটর সাইকেল) নির্বাচনে লড়ছেন।

নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির সমর্থনে কোনো প্রার্থী না থাকায় সদস্য পদে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।

সংরক্ষিত পাঁচটির মধ্যে চারটি ও সাধারণ ওয়র্ডের ১৫টির মধ্যে ১২টি ওয়ার্ডে দল সমর্থিত বলে ১৬ জন সদস্য প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন দলের আরও ৪১ জন প্রার্থী।

তাই চেয়ারম্যান প্রার্থীদের চেয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টায় মাঠ সরগরম করেছে সদস্য প্রার্থীরা। অনেক ওয়ার্ডে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে টাকাও দেয়া হয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, একেকটি ভোটের ১০ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকাও দাম উঠেছে। প্রার্থীরা যে যার মতো করে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার অংক শুনিয়ে ওয়াদাবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছেন।

প্রতীক পাওয়ার পর থেকে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ঘরে ঘরে গেছেন প্রার্থীরা। দলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচয় দেয়া প্রার্থীরা একে অপরের বিষোদাগার করলেও এসব থেকে দূরে ছিলেন স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে থাকা সাত প্রার্থী। তারা নিজেদের যোগ্য মনে হলে রায় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন নিজ ওয়ার্ডের ভোটরদের। তবে, সদস্য পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোট আদায় কৌশলে পিছিয়ে বলে জানান ভোটাররা। যে কারণে দলীয় টিকিট পেয়েও তাদের জয়ের সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।

এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। কিছু মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আসায় নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে এই নির্দেশ জারী করেন। নির্দেশনায় ভোটের দিন পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী এলাকার বাইরে থাকতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করায় নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এএইচ সালাহ উদ্দীন মাহমুদ।

স্থানীয় গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত করতে কমিশনের এ ঘোষণা সময়োচিত হয়েছে।

তিনি মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্র আরো বেশী প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।

একই সঙ্গে অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদেও প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সালাহ উদ্দীন মাহমুদ। তিনি জেলা পরিষদের নির্বাচনকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.