রাজনীতি না দেশনীতি

নতুন বছরের শুরুতে বসেই ভাবছিলাম আমার প্রিয় বাংলাদেশকে। স্বাধীনতার পর ৪৫ বছরে কি হলো, আর হলো না নিয়ে।

কিন্তু দেখলাম রাজনীতির নামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানিদের দোসর ও রাজাকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। টাকা পয়সা সব হাওয়া ভবন থেকে হাওয়া করে দেওয়া হয়েছে।

আমার মাকে বঙ্গবন্ধু একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে চাকরি দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তাকে ন্যাক্কারজনকভাবে ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের একজন ফিল্ড অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়। তখন ছোট থাকায় বুঝতে পারিনি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা যারা বঙ্গবন্ধুর প্রিয় তাদেরকে এভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু আমার মাকে বলেছিলেন, দেশের জন্য জীবনোৎসর্গের প্রতিদান হিসেবে বাবার নামে একটা কিছু করা হবে। কিন্তু তা হয়নি, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত। ১৯৮২ সালে আমার শহীদ পিতার নামে ‍উত্তরবঙ্গের নাটোর জেলায় কাদিরাবাদ সেনানিবাস করা হয়।

তখন বুঝতে পারিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তখন বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

দেশে এখনও পাকিস্তান আমলের আইন চলছে, যার কারণে শহীদ পরিবারগুলোর ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে। যেমন আমার মাকে পাকিস্তান সময়ের আইন দেখিয়ে এক টুকরো সামরিক প্লট থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

বুঝিনি এসব আইন বদল করার প্রয়োজন হয়নি কারণ তখন তো দেশ আবার পাকিস্তান হয়ে গিয়েছিল রাজনীতির নামে। এমন রাজনীতি আমি কখনো চাই না। যারা পাকিস্তানকে প্রভু মনে করে এখনও, তাদেরকে বাংলাদেশ ছাড়তে হবে। অথবা তাদের কুচক্রী রাজনীতি ছাড়তে হবে।

আজকে বুঝি, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমার মায়ের জীবন অন্যরকম হতো। কারণ, তিনি আমাদের ভালবাসতেন; আমাদের দুঃখ-কষ্ট, ব্যাথা-বেদনা বুঝতে পারতেন।

আর এখন উনার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে একটি নতুন পরিচয় দিতে পেরেছেন পৃথিবীর সবার কাছে। তখন এই কুচক্রী রাজনীতিবিদরা জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি অস্থিতিশীল ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।

আজকে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিকও জানে দেশ কোথায় যাচ্ছে এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। আমার এক ছোট ভাই লন্ডনে ব্যবসা করে। সে আমাকে বললো, ভাইয়া আমরা প্রায় এক কোটি টাকার মাটি কাটার মেশিন বিক্রি করলাম বাংলাদেশের কর্ণফুলি নদীর নিচে পাতাল সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য।

আরেকজন বললো, এখন দেশেই মাঠে কাজ করার জন্য কামলা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামে প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাওয়ায় টেলিভিশন তো আছেই এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ইন্টারনেটের যাবতীয় সুবিধাদি।

বীরঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি আর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়েছে। কারণ তাদের প্রতি তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই ভালবাসা রয়েছে; তিনিও বাবার মতোই তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে পারেন।

তাই আজকে যখন রাজনীতির নামে অযথা মাঠ গরম করার চেষ্টা করে বিএনপি বা জামায়াত তখর প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে জামায়াতকে, আপনারা কি এখনও ১৯৭১ সালে পরাজয়ের ঝাঁজ মেটানোর স্বপ্ন দেখছেন? আর বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে হাওয়া ভবন দিয়ে দেশের সবকিছু হাওয়া করে দেয়ার পরও কি আরও কিছু চাই আপনাদের?

একজন বললো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ভারত প্রীতি হয় আর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের অবনতি হয়। উত্তরে বললাম, ভাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা আমরা কখনও ভুলব না, আমরা বেঈমান না। আর ভারতের সাথে এই সুসম্পর্কে কী এমন ক্ষতি হয়েছে, আমরাই বরং লাভবান হচ্ছি।

তিস্তা নদীর চুক্তি যেকোনো সময়  হতে পারে এবং সেটা হবেই। একটু দেরি হচ্ছে কারণ, ব্যাপারটা জটিল। সেটি সমাধানে সুস্থ রাজনীতি আর কূটনীতি কাজ করে যাচ্ছে। তাই বলা যায়, ব্যাপারটা হবেই।

আর পাকিস্তান, তারা তো যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির পর কাঁদতে কাঁদতে শেষ। তাদের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে এখনও সম্পর্ক রেখেছেন, এটাই যথেষ্ট।

যারা পাকিস্তানপ্রিয় মানুষ তাদের কাছে জানতে চাই, বলেন তো ১৯৭১-র গণহত্যা ছাড়া আর কি পেয়েছেন? শুধু নিজেদের পকেট ভারি করেছেন আর রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়েছেন।

তাই শেখ হাসিনার মতো দেশনীতি চাই, যেন মানুষের কাজে আসে, জীবনে স্বস্তি আসে আর অর্থনৈতিক মুক্তি মেলে। আমরা চাই না আপনাদের ঘুণে ধরা নখরা রাজনীতি।

নাদীম কাদির : সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।
nadeemqaadir1960@ gmail.com

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.