এম.মনছুর আলম, চকরিয়াঃ
পূর্ব শত্রুতা না থাকলেও কক্সবাজারের চকরিয়ায় মং ছিং থোয়াইং রাখাইন (৪৫)
নামের এক রাখাইন নেতাকে রাতের আঁধারে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদে মাঠে
নেমেছে রাখাইন সম্প্রদায়। ঘটনার ইতোমধ্যে সাতদিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামী
গ্রেপ্তার না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিশাল
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে তারা।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজের মাধ্যমে কক্সবাজার
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের কাছে চিকিৎসা সহায়তা এবং হামলায় জড়িতদের
দ্রুত শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তারের দাবিতে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
হামলার শিকার রাখাইন নেতা মং ছিং থোয়াইং উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের এক
নম্বর ওয়ার্ডের রাখাইন পাড়ার মৃত আপ্রু মং এর পুত্র। এ ঘটনায় ছোট ভাই মং
থাই মামলা করেছেন অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে।
প্রতিবাদ কর্মসূচীতে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ
কক্সবাজার জেলা এবং চকরিয়া ও পৌরসভা শাখা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
নেতৃবৃন্দ, রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটি ও
স্থানীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ সংখ্যালঘু বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ
হাজারো নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য, প্রচার ও
প্রকাশনা সম্পাদক মাষ্টার অং ক্য চিং এর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ কর্মসূচীতে
প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ কক্সবাজার
জেলার সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট্রের সাবেক সম্মানিত
ট্রাষ্ট্রি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, জেলার নেতা পরিমল বড়ুয়া ও
সাংবাদিক ছোটন কান্তি নাথ, রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মং ক্য হা, পরিষদের চকরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি
রতন বরণ দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল কান্তি দাশ, পৌরসভার সভাপতি নারায়ণ
কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক সুনীপ দাশ সৌরভ, বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ
কক্সবাজারের উবা এ, রাখাইন সম্প্রদায়ের নেত্রী তামাছিং মার্মা, কাহারিয়া
ঘোনার নেতা উথহা মং, হারবাংয়ের উথোয়েন অং, আদিবাসী ফোরাম নেতা মংথেন হা,
মানিকপুরের থোয়াইং হা মং, বারকাকিয়ার আলহারী রাখাইন, মং ক্যারি রাখাইনসহ
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতা-নেত্রীবৃদ্ধ প্রতিবাদ
সমাবেশে বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, ‘হারবাং রাখাইন পাড়ার বাসিন্দারা দীর্ঘ ৩০০ বছর ধরে
শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু কোন পূর্ব শত্রুতা না থাকলেও গত
১২ নভেম্বর রাতের আঁধারে রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের হারবাং
শাখার সহ-সভাপতি মং ছিং থোইংকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যপুরি
কুপিয়ে ফেলে চলে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও এখনো সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়।
ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বক্তারা আরো বলেন, ‘হঠাৎ করে পরিকল্পিত এই
হামলার ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে
সারাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতনের পেছনে সরকার বিরোধী কোন
চক্রের ইন্ধন রয়েছে কী-না তা খতিয়ে দেখতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলেরও
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে। একইসাথে রাখাইন নেতাকে
পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টার ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে শনাক্তপূর্বক
অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তিরও দাবি জানাচ্ছি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক
অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন বলেন, ‘যাকে রাতের আঁধারে কুপিয়ে
হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে তিনি একজন সাদামনের মানুষ। তার কোন শত্রুও নেই
এলাকায়। এর পরও তাঁর ওপর এই হামলা কারা করেছে, তা বিশদভাবে অনুধাবন করলেই
সন্দেহ জাগছে, এর পেছনে সরকার বিরোধী কোন চক্র জড়িত রয়েছে। যাতে সরকারকে
বেকায়দায় ফেলা যায়। তাই অনতিবিলম্বে এই হামলার রহস্য উদঘাটনসহ গুরুতর আহত
রাখাইন নেতা মং ছিং থোইং এর সুচিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.