যে প্রেম-ভালোবাসায় জান্নাত পাবে নারী

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ প্রেম-ভালোবাসায় জান্নাত লাভ করবে নারী। যে নারীর হৃদয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসার পাশাপাশি স্বামী প্রতি হৃদয়ের গভীরে রয়েছে পুষ্পিত প্রেম। সে নারী জান্নাতি।

দ্বীনি পরিবেশে বেড়ে উঠা, স্বামী-সংসারের প্রতি হৃদয়ের টান নারীকে যেমন সম্মানি করে তোলে। তেমনি অপদস্থ ও অবহেলামুক্ত থাকে নারী। স্বামী-সংসারের প্রতি গভীর মমতাই নারীকে অনন্য মর্যাদায় পৌঁছে দেয়।

দুনিয়ায় বিবাহিত জীবনে প্রতিটি নারী স্বামী-স্ত্রীর প্রেমের সূত্র ধরে জান্নাতের সনদ লাভ করে। প্রেম-ভালবাসা আর বৈধ আনুগত্যে যে নারী স্বামীর হৃদয়ে নিজের আসন করে নিতে সক্ষম হয়, সে নারীই শ্রেষ্ঠ নারী। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে প্রেমময়ী জান্নাতি নারীর বিবরণ এভাবে তুলে ধরেন-

‘পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা (স্বামীরা) তাদের (স্ত্রীদের জন্য) অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীরা হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন- লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪)

প্রতিটি সংসারেই স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। স্বামী যেমন বাইরের কাজসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থের জোগান দেয়। তাদের ব্যয়ভার বহন করে। অন্যদিকে স্ত্রী ঘরের দায়িত্ব পালন এবং স্বামীকে সহযোগিতায় আন্তরিকত হয়। আর তাতে যেমন পরস্পরের প্রেম-ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আবার সংসারে বিরাজ করে সুখ ও শান্তি। আর তাতেই নারীর জন্য দুনিয়ার জীবনের বিরাজ করে জান্নাতি পরিবেশ। আর পরকালের জান্নাতও সুনিশ্চিত।

পক্ষান্তরে বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত নারীর জন্য স্বামী-সংসারের বাইরে অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা নেমে আসে ধ্বংস। বাবা কিংবা স্বামীর বাড়িতে সাংসারিক, সামাজিক জীবনে নেমে আসে অসম্মান, কলহ ও অশান্তি।

সে কারণেই নারীর প্রধান কাজ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। স্বামীর সংসারে জিম্মাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা। স্বামীর প্রতি সর্বোচ্চ প্রেম-ভালাবাসা রাখা। যার ফলে সে পাবে আখেরাতের চির শান্তির আবাস জান্নাত।সুনিশ্চিত জান্নাতি নারীদের প্রধান কাজগুলোর বর্ণনা উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-

– হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ধরণের নারী জান্নাতি; আমি কি তোমাদের বলে দেব না? তাঁরা বললেন, ‘হ্যাঁ’, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম); তিনি বললেন, তোমাদের জান্নাতি নারীরা হবে স্বামীর প্রতি প্রেমময়ী, এবং অধিক সন্তান প্রসবকারীনী।’

– হজরত আব্দুর রহমানি ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম নারীরা যদি যথাযথভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে,তখন সে ই নারীকে বলা হবে তুমি জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছে ভেতরে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমাদ)

– হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘নেককার নারীরা স্বামী অনুগতা হয়। অর্থাৎ স্বামীর আনুগত্য প্রকাশ করবে।

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, হে আল্লাহর রাসুল! কোনো শ্রেণীর নারী সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘তার পরিচয় হচ্ছে- তুমি (স্বামী) তার দিকে তাকালে সে তোমাকে আনন্দিত করবে, (তুমি) কোনো নির্দেশ (দায়িত্ব) দিলে তা বাস্তবায়ন করবে। তার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর সম্পদের ব্যাপারে স্বামীর অপছন্দনীয় কাজ করে স্বামীর বিরোধিতা করবে না।’

– আল্লামা সুদ্দী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রী নিজের ইজ্জতের সংরক্ষণ করবে এবং স্বামীর সম্পদ হেফাজত করবে।’

– একদিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বললেন- ‘আমি কি তোমাকে মানুষের আকর্ষণীয় শ্রেষ্ঠ গুপ্তধন সম্পর্কে বলে দেব না? তা হচ্ছে- নেককার স্ত্রী। স্বামী তার দিকে তাকালে সে তাকে মুগ্ধ করে। কোনো আদেশ করলে তা পালন করে আর স্বামী কাছে না থাকলে নিজের ইজ্জতের হেফাজত করে।’

– হজরত হোসাইন বিন মিহসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমার ফুফু আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, একদিন তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো প্রয়োজনে গিয়েছিলেন। প্রয়োজন শেষ হলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন-

‘তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’।
তিনি (বিশ্বনবি) বললেন, তার জন্য তুমি কেমন স্ত্রী?
আমি বললাম- একান্ত অপারগ না হলে তার খেদমত করতে কোনো ত্রুটি করি না।
তিনি (বিশ্বনবি) বললেন- ভালোভাবে (স্বামীর প্রতি) খেয়াল রাখবে, তুমি তার কেমন খেদমত করে থাক। কেননা সে-ই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’ অর্থাৎ তার আনুগত্য ও খেদমত করলে জান্নাতে যাবে আর অবাধ্য হলে জাহান্নামে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং নারী-পুরুষ উভয়েল উচিত, মিথ্যা ও অবৈধ প্রেম-ভালোবাসায় একে অপরের প্রতি ধাবিত না হওয়া। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা লাভের চেষ্টা করার পাশাপাশি বৈধ ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেমময় ও ভালোবাসা পূর্ণ সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। আর তাতেই মিলবে সুনিশ্চিত জান্নাত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্বামীর সঙ্গেই যথাযথ প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ায় প্রীতিময় সুন্দর দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.