যশোরের গদখালীতে ১০ কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা
ইয়ানুর রহমান : ঋতুরাজ বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালী-পানিসারায় তিন দিনে ৯ কোটি টাকার উর্ধ্বে ফুল কেনাবেচা হয়েছে। ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা ফেব্রæয়ারি মাস জুড়েই ব্যস্ত সময় পার করেন। দিনরাত বাগানের পরিচর্যা করেন চাষিরা। আর ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত থাকেন বাজারজাতকরণে। ১৩, ১৪ ও ২১ ফেব্রæয়ারির বাজার ধরতেই তাদের এই আপ্রাণ চেষ্টা।
এই ফেব্রæয়ারিতে রয়েছে ১৩ তারিখে পহেলা বসন্ত ও পরদিন ভালোবাসা দিবস। প্রিয়জনের ভালোবাসা প্রকাশে ফুলই শ্রেষ্ঠ। এ দুটি দিবসে প্রিয়জনের মন রাঙাতে মুখিয়ে থাকেন দেশের তরুণ-তরুণী, যুবসহ সব বয়সীরা।
ফুলচাষী বাসিরন নেছা বলেন, তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ফুলের বাগান পরিচর্যা করেছি। এবার বিঘাপ্রতি গোলাপ এক লাখ টাকা বিক্রি করেছি।
তিনি আরও জানান, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের বহু চাষি তাদের জমিতে ধান ও পাটের চাষ বাদ দিয়ে সারাবছরই ফুল চাষ করছেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে। বিশেষ করে বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবসে এসব ফুলের বিকল্প নেই। আর ২১ ফেব্রæয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। এদিন বেশি চাহিদা থাকে গাঁদা ও গোলাপ ফুলের।
ফুলচাষি সাহিদা বেগম জানান, আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফুটে। বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রæয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় পাঁচ টাকার মতো। গত তিন দিনে ৮-১০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ভালো মুনাফা হয়েছে।
চাষি ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে তিন প্রজাতির রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গন্ডাডিওলাস চাষ করেছি। গত দুই মাস ফুলের বাজার একটু খারাপ গেছে। কিন্তু বসন্ত উৎসব ও ভ্যালেনটাইনস ডে উপলক্ষে ব্যবসা ভালো হয়েছে। দেড় লাখ টাকার ফুল গত তিন দিনে বিক্রি করেছি। আর মহান শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে আরও এক লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে ঘিরে। ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে কেবল যশোরে বেশি ফুলচাষি রয়েছেন। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রæয়ারি মাসের তিনটি দিবসকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করেন। গত তিন দিনে এখানকার চাষিরা ৯ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। গোলাপ ফুল পাইকারি বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ৮/১০ টাকা। জারবেরা আর গ্লাডিওলাস বিক্রি হয়েছে ৬/৭ টাকা। অন্যান্য ফুলও ভালো দামে বিক্রি হয়েছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক ইমদাদ হোসেন বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। দেশে ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.