ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ ইন্দোনেশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আচেহ প্রদেশ। গত সপ্তাহে প্রদেশটিতে এক নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মেয়েরা মোটরসাইকেলে দুই পা ফাঁক করে বসতে পারবে না। তাদেরকে বসতে হবে একদিকে পা দিয়ে। খবর ডয়চে ভেলের
আচেহ প্রদেশের লুকসুমাও নগরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দসনি ইউসার এই বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে এটার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ নেই। আচেহতে কোনো সমালোচনা শোনা যাচ্ছে না।’
মোটরসাইকেলে বিধিসম্মতভাবে কীভাবে বসতে হবে- তা সাধারণ মানুষকে জানাতে ইতোমধ্যে উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন ইউসার। তিনি জানান, এ বিষয়ে লুকসুমাওয়ে ৫০টি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি অফিসে এবং গ্রামে এই আইনের বিষয়ে লিফলেট বিলানো হয়েছে।
শহরের মেয়র সুয়াইদি ইয়াহিয়া, যিনি এই আইনের প্রস্তাব করেছিলেন, ৭ জানুয়ারি জনসমক্ষে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, ‘নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই আইন চালু করা হয়নি। বরং আচেহতে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে।’
মেয়েদের এক পাশে পা দিয়ে বসার পক্ষে আরেকটি যুক্তি দেখেয়েছেন ইয়াহিয়া। তার কথা হচ্ছে, মেয়েরা দুই পা ফাঁক করে পেছনে বসলে নাকি মোটরসাইকেলের পুরুষ চালকরা উত্তেজিত হয়। তবে মেয়েরা যখন নিজেরা মোটরসাইকেল চালাবেন তখন তারা দুইপা ফাঁক করে সেটিতে বসতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইসলামি পোশাক পরতে হবে তাদেরকে।
২০০৯ সালে আচেহতে শরিয়াহ আইনের একটি সংস্করণ চালু করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার কোনো প্রদেশে এই আইন চালুর ঘটনা এই প্রথম। সেই থেকে অবশ্য জনসাধারণের নৈতিক দায়িত্ববিষয়ক বিভিন্ন উপ-বিধি প্রকাশ করছে প্রদেশটির কর্তৃপক্ষ।
তবে সমালোচকরা বলছেন, শরিয়াহ আইনের প্রয়োগ বৈষম্যমূলক। শুধুমাত্র নারী এবং যুব সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বিভিন্ন রকম নিয়ম জারি করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে জনসমক্ষে কী রকম আচরণ করতে হবে কিংবা কী ধরনের পোশাক পরতে হবে তা-ও আছে।
অনেকে মনে করছেন, ইন্দোনেশিয়ার ভাবাদর্শের সঙ্গে এসব নিয়ম মানানসই নয়। বরং এটা এক উল্টো পথে যাত্রা করার মতো ব্যাপার।
জাকার্তায় অবস্থানরত নারী অ্যাক্টিভিস্ট তুঙ্গাল প্রয়েস্ত্রি ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসের দুই নারী যোদ্ধার কথা উল্লেখ করে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ন’কাক ধিয়েন এবং লাকসামানা কেউমালাহায়াতি ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করেছিলেন। তারা কি তখন ঘোড়ার এক পাশে পা দিয়ে বসেছিলেন? এ রকম ভাবাটাও অবান্তর।’
প্রয়েস্ত্রি বলেন, ‘আচেহতে শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে জারি করা প্রতিটি উপবিধিতে নারীর শরীরকে রাজনৈতিক লড়াইয়ে ক্ষেত্রে হিসেবে ধরা হচ্ছে। নারী হচ্ছে সহজ লক্ষ্যবস্তু। কেননা, যখন অ্যাক্টিভিস্টরা এসবের প্রতিবাদ করবে, তখনই তারা মুসলিম বা শরিয়াহবিরোধী হিসেবে বিবেচিত হবে।’
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়াতে শরিয়াহ আইন চালু থাকলেও সেখানে মেয়েদের পা ফাঁক করে মোটরসাইকেলে বসার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। বরং মেয়েরা একদিকে পা দিয়ে বসাটা সেখানে নিষিদ্ধ। একপাশে পা দিয়ে বসায় অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে সেখানে। কেননা, এভাবে বসলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.