মুঠোফোনে কথা, আইনজীবী-স্বজনদের সাথে দেখা নিষেধ প্রদীপের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কারাগারে আইনজীবী ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন না সাময়িক বরখাস্ত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগও পাবেন না সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, দুদকের দায়ের করা একটি মামলায় আজ মঙ্গলবার প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুল আলমের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় প্রদীপের সঙ্গে কারাগারে আইনজীবী ও তার স্বজনদের সাক্ষাৎ এবং মোবাইল ফোনে কথা বলার অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করে তার আইনজীবী। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ১ মার্চ আইজি প্রিজন কর্তৃক একটি সার্কুলার আছে, ওই সার্কুলারের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে আমরা এর বিরোধিতা করি। পরে শুনানি শেষে আদালত তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, একই সময় প্রদীপের আইনজীবী মৌখিকভাবে তার উন্নত চিকিৎসার আর্জি জানান। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন। দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য গত ২৭ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে দুদক আবেদন করে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের এই মামলায় প্রদীপ কুমার দাশকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত প্রদীপ কুমার দাশের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন।

এজাহারে অভিযোগ আনা হয়, পলাতক চুমকি কারণ দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া তিন কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে, যা ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করে পরস্পরের যোগসাজশের মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ থেকে চুমকি কারণের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়। ১২ মে তিনি সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। সম্পদ বিবরণীতে চুমকি কারণ ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা স্থাবর এবং ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৪ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে চুমকি কারণের নামে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার স্থাবর এবং ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৯৪ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৪ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদের হিসাব উঠে আসে। এ হিসেবে এজাহারে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই সময়ে তিনি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। এ হিসেবে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে, ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকা। কিন্তু দুদক অনুসন্ধানে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকা। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবর্হিভূত সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা।

অন্যদিকে সম্পদ বিবরণীতে চুমকি কারণ তার বাবার কাছ থেকে দান হিসেবে পাওয়া জমিসহ একটি ছয়তলা বাড়ির তথ্য দেন। দুদক অনুসন্ধানে পেয়েছে, চুমকির কারণের বাবা সাব রেজিস্ট্রি দলিলমূলে তাকে বাড়ি দিলে তার অপর দুই ভাই ও এক বোনকে কোনও বাড়ি দেননি। অথচ দুই ছেলের নামে উল্লেখযোগ্য কোনও সম্পদও নেই। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি প্রদীপ তার ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ গোপন করার অসৎ উদ্দেশে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তার শ্বশুরের নামে বাড়ি নির্মাণ করে পরবর্তীতে তার স্ত্রী চুমকি কারণের নামে দান করিয়ে নিয়ে ভোগদখল করছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.