মিয়ানমার চায় না ফিরে যাক রোহিঙ্গারা’

ওয়ান নিউজ ড়েক্সঃ
দীর্ঘ কূটনৈতিক তৎপতার পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু আন্তরিকতার অভাবে ও নানা অপতৎরতায় প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বরং সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদেরও তাড়িয়ে দিতে চাইছে। তারা চায় না রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যুগান্তরের কাছে এ মন্তব্য করেছেন।

তুমব্রুতে শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) চাপের মুখে শূন্যরেখা থেকে সামান্য পিছিয়ে বাংকারে অবস্থান করছে মিয়ানমারের সেনারা। দিনের বেলা উৎপাত কম করলেও রাত হলেই ছুড়ছে ঢিল। দিচ্ছে নানা হুমকি-ধমকি। তাদের ঢিলে আহত হচ্ছেন ক্যাম্পে থাকা অনেকেই।

প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে ১২ অস্থায়ী ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায় নতুন-পুরনো মিলে প্রায় ১১ লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ায় শূন্যরেখায় রয়েছে ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।

২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা ক্যাম্পে হামলার অজুহাত তুলে সেখানকার সেনা ও নাটালা বাহিনী গণহত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। পরে বিভিন্ন উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। গত বছরের ২৩ নভেম্বর নেপিডোতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাজি দেশটি। ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ১ হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ সদস্যের নাম মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. চ সোয়ের হাতে তুলে দেন। কিন্তু এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।

২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ায় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করেন। সেখানে শূন্য রেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় দেশটি। কিন্তু উল্টো ১ মার্চ থেকে সীমান্তে সেনা সমাবেশ করে তারা। ভারী অস্ত্র নিয়ে টহল দেয়। রোহিঙ্গাদের সরে যেতে মাইকিং করে। ফাঁকা গুলি চালায়।

পরদিন বিকালে ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবির সঙ্গে বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ, মিয়ানমার) পতাকা বৈঠক হয়। সেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনা সরানোর প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার। সেই সঙ্গে আবারও আশ্বস্ত করে শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার। কিন্তু এখনও সেনা প্রত্যাহার হয়নি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াও শুরু হয়নি। কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির নেতা আবু ছিদ্দিক ও মোহাম্মদ নুর জানান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের ঢেকিবনিয়া সফর ও নোম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার পর রোহিঙ্গাদের মাঝে ফিরে যাওয়ার ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ১ মার্চ থেকে মিয়ানমার সেনাদের সীমান্তে বেপরোয়া আচরণ ও বিভিন্ন হুমকি-ধমকির কারণে নতুন করে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। ফিরে গেলেও জীবনের নিরাপত্তা নেই।

শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা মৌলভী আরিফুল্লাহ জানান, আমরা এদিকেও আসতে পারছি না, সেদিকেও যেতে পারছি না। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ ও পতাকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সেনারা মানছে না। তারা রাতের বেলায় এসে শূন্যরেখা থেকে চলে যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালামের সাথে কথা হয় প্রত্যাবাসন নিয়ে। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন ও শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের ফিরে নেয়ার ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কক্সবাজার নবাগত জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সাথে মুঠোফোনে বলেন, প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক হলে জানানো হবে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মনঞ্জুরুল হাসান খান জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, মিয়ানমার সেনা ও বিজিপির ভয়ে যে সব রোহিঙ্গা শূন্যরেখা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল তারা ক্যাম্পে ফিরে এসেছে।

রাতে হুমকি বর্মি সেনাদের : শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ যুগান্তরকে জানান, মিয়ানমার সেনা, বিজিপি ও নাটালা বাহিনীর সদস্যরা দিনের বেলায় তৎপরতা কমালেও রাতে ইট, পাথর, খালি মদের বোতল ছুড়ে ও কান্ট্রা (গুলতি) দিয়ে মারবেল নিক্ষেপ করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর ছোড়া মার্বেলের আঘাতে নুর হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা শিশু আহত হয়েছে। তার ডান চোখের এক পাশে ক্ষত হয়ে গেছে।

রোহিঙ্গা নবী হোসেন জানান, মদ্যপ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ঝুপড়িতে বিভিন্ন ধরনের বস্তু নিক্ষেপ করছে সেনা ও বিজিপি সদস্যরা। আরিফ উল্লাহ জানান, সীমান্ত ঘেঁষা উঁচু পাহাড়ে বাংকার খনন করে বন্দুক তাক করে আছে আমাদের দিকে।

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি যুগান্তর

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.