মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
অবৈধ পথে মালশিয়া যাত্রা ও বিভিন্ন কারণে মিয়ানমারের জেলখানায় সাজা খেটে বাংলাদেশের ৮৫ নাগরিক আজ ফেরত পাঠাচ্ছে মিয়ানমার সরকার । ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাসের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মিয়ানমারের বিভিন্ন জেলখানায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা ফেরত আসছে। মিয়ানমারের রাখাইনে অবস্থিত সিতওয়ে বন্দর থেকে গতকাল (শনিবার) ৮৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়। রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে কক্সবাজারে আগত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ ‘ইউএমএস চিন ডুইন’ প্রত্যাবাসিতদের বহন করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জাহাজটি আজ (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রহরের মধ্যে কক্সবাজারে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রত্যাগত ৮৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে ২৬ জন মিয়ানমারের মলামাইন কারাগারে, ১৬ জন পাথেইন কারাগারে, ০৩ জন চকমারউ কারাগারে এবং বাকিরা রাখাইনের বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন। প্রত্যাবর্তনকারীদের অধিকাংশই (৫৬জন) কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার এবং বাকিরা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও ঢাকা জেলার বলে জানানো হয়েছে। ইয়াঙ্গুনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সিতওয়েস্থ বাংলাদেশ কনস্যূলেটের অব্যাহত প্রচেষ্টায় আরও একবার বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৫ মাসে মিয়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সর্বমোট ৩৩২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এদিকেরামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে গর্জনিয়ার ৭নং ওয়ার্ড়ের পূর্ব বোমাংখিল এলাকার মৃত আব্দু ছালামের ছেলে লোকমান হোসেন,একই এলাকার জহির আহমদের ছেলে আরমানুল ইসলামসহ ১৮জন ফিরলেও কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়াতে থিমছড়ি, পূর্ব জুমছড়িসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে মানবপাচারকারির কবলে পড়ে এখনো জেলে মানবেতর জীবন যাপন করছে ৯যুবক। তারা সবাই ১৮ থেকে ২৫ বছরের। তাদেরকে বুঝানো হয়েছে মায়ানমার – থাইলেন্ড হয়ে খুব সহজেই মালেশিয়া যাওয়া যায় এবং কম খরচে মালশিয়া পৌছানোর আশা দিয়ে কোন রকম তাদের ফাদে ফেলে আয়ত্বে নিতে পারলে জিম্মি করে পরিবার থেকে হাতিয়ে নেয় জনপ্রতি ৫ থেকে ৬লাখ টাকা করে । এমনই হয়েছে গ্রামের ছেলেদের সাথে ।-গর্জনিয়া ২নং ওয়ার্ড়ের মরিচ্যাচর গ্রামের জাফর আলমের ছেলে রফিকুল ইসলাম, মইন্ন্যাকাটা এলাকার নজির আহমদের ছেলে রবিউল আলম, ফরিদুল আলমের ছেলে শহিদুল ইসলাম, ৪নং ওয়ার্ড়ের থিমছড়ি এলাকার আলী হোসাইন এর ছেলে তারেক মনোয়ার ,মোঃ হোসন এর ছেলে মনসুর আলম,আমির হামজার ছেলে আজিজুর রহমান, গর্জনিয়া ২ নং ওয়ার্ড়ের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার সিরাজুল হক এর ছেলে নাজিম উদ্দিন,আমির হোসন এর ছেলে রফিকুল ইসলাম , ৩নং ওয়ার্ড়ের ঘোনাপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মোঃ খোকন,৪নং ওয়ার্ড়ের আব্দু শুক্কুর এর ছেলে নজরুল ইসলাম, তারা সবাই মায়ানমারের মলয়বাং ট্যালিটং জেলখানায় আছে বলে জানা গেছে। গর্জনিয়া ২ নং ওয়ার্ড়ের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার নাজিম উদ্দিনের বাবা সিরাজুল হক জানান, দালালের খপ্পরে পড়ে গত বছর আমার ছেলে নাজিম সাগর পথে মালেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু সাগরে মায়ানমার সেনার হাতে ধরা পড়েছে বলে জানতে পেরেছি। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলে ভুল করলেও তাকে আইনের মাধ্যমে দেশে ফিরে আনা হউক । জানতে পেরেছি তারা অনেক কষ্টে আছে । গর্জনিয়া ৪নং ওয়ার্ড়ের থিমছড়ি এলাকার আলী হোসাইন জানান, তারা এখন মায়ানমার জেল খানায় আছে বলে আমাদের টেলিফোনে জানিয়েছে সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলেকে যেন আমি সুস্থ ও সুন্দর ভাবে ফেরত পেতে পারি তার ব্যবস্থা করার।
এদিকে গত ৯ জুন মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরেছেন ৪৫ জন বাংলাদেশি। অন্যদিকে, সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১৩৪ বিজিপি ও সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশিদের পাঠাতে বাংলাদেশ দূতাবাস, ইয়াঙ্গুন এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট, সিতওয়ে প্রত্যাগতদের পরিচয় যাচাইকরণ, তাদের জন্য ভ্রমণের অনুমতি প্রদান (ট্রাভেল পারমিট) এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে।