মাদার ট্রি গর্জন নিধনের মহাযজ্ঞের ঘটনা ঘটলেও অবগত নন বন বিভাগ

জাতীয় উদ্যানের প্রধান বৃক্ষরাজি

মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জাধীন চকরিয়ার খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান।খুটাখালী মেধা কচ্ছপিয়া ন্যাশনালপার্ক এর দৃশ্যটা চোখে পড়ার মতো। মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম – কক্সবাজার যাওয়ার পথে যে কারো নজর কাড়ছে মাদার ট্রি সমৃদ্ধ এই উদ্যানটি। পর্যটকদের সুবিধার্থে উদ্যানের ফাঁকে ফাঁকে নির্মিত হয়েছে বিশ্রামাগার তথা টহলশেড। নিরাপত্তায় সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত।মেধা কচ্ছপিয়া বন। জাতীয় উদ্যানের প্রধান বৃক্ষরাজির মধ্যে বিশালাকৃতির মাদার গর্জন গাছ ছাড়াও রয়েছে ঢাকিজাম, ভাদি, তেলসুর ও চাপালিশ।কিন্তু এই ন্যাশনাল পার্কের মাদার গর্জন গাছ দিনদিন নিধন হওয়ায় পরিবেশবাদীদের ভাবিয়ে তুলেছে।

বিশেষ করে বোট নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন রাতেই সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট মাদার গর্জন গাছ নিধন করে পাচারে মেতেছে। স্থানীয় মেধাকচ্ছপিয়া বনবিটের বনকর্মীরা অনেকটা নিরব দর্শক বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।আবার কেউ কেউ বলছেন কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সাথে রয়েছে বমকর্মীদের সাথে সক্ষতা। যার ফলে বন কর্মীদের যোগসাজশে ডুলহাজারার সোনা মিয়া মেম্বার, ফাঁসিয়াখালীর নাছির ও জসিম উদ্দিন এবং চকরিয়া পৌরসভার মৌলভীকুম বাজার এলাকার দুইটি সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত মাদার ট্রি গর্জন নিধনের মহাযজ্ঞে মেতে উঠেছে।

এরই অংশ বিশেষ দুটি বড় মাদার গর্জন কাছ কেটে পাচারের সময় বনবিভাগের বিশেষ টহল দল অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার সদরের পিএমখালী এলাকা থেকে আটক করেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিশেষ টহল দলের ওসি ও শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা ইলাহীর নেতৃত্ব এ অভিযান চালানো হয়। জব্দকৃত মাদার গর্জন কাঠগুলো বনবিভাগের হেফাজনে আনা হয়েছে। আটক মাদার গর্জন গাছের মুল্য আনুমানিক ২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার যে কোন সময় মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান থেকে দুটি বড় মাদার গর্জন গাছ নিধন করা হয়। নিধন করা মাদার গর্জন গাছগুলো লক করে (গোলকাঠ) ডাম্পার যোগে পাচার করে কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ঘাটকুলিয়াপাড়াস্থ বেঁড়িবাধের পাশে মজুদ করে।বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিশেষ টহল দলের ওসি ও শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা ইলাহীর নেতৃত্ব একদল বনকর্মী অভিযান চালিয়ে মাদার গর্জন কাঠগুলো (১৪ টুকরা গোল কাঠ) জব্দ করেন। তবে মাদার গর্জন গাছ পাচারে ব্যবহারিত ডাম্পারগুলো আটক না হওয়া অনেকে ভিন্ন চোখে দেখছেন।আটক গর্জন কাঠগুলো ট্রলি যোগে বনবিভাগের হেফাজতে আনা হয়েছে।

উত্তর বনবিভাগের বিশেষ টহল দলের ওসি ও শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা ইলাহীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাদার গর্জন কাঠগুলো বেড়িবাধের পাশে পাওয়া গেছে। পাচারের ঘটনায় কারা জড়িত তা উদঘাটন হয়নি ও গাড়ি পাওয়া যায়নি।এই মাদার গর্জন গাছগুলো আসলে কোন বনাঞ্চল থেকে কেটে পাচার করা হয়েছিল, সে বিষয়েও বিস্তারিত জানাতে পারেনি।

এদিকে, বন বিভাগের যোগসাজশে মাদার ট্রি গর্জন নিধনের মহোৎসব চল্লেও গতিপথ রোধ করেছে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের। গত ১৫ এপ্রিল চকরিয়া থানার ওসির নির্দেশক্রমে এসআই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে মাদার গর্জন গাছ পাচারের ডুলহাজারার সোনা মিয়া মেম্বারের গাড়ি সহ জব্দ করেছেন। পরবর্তী ঐ গাছ ভর্তি ট্রাকসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য হস্তান্তর করেন থানা পুলিশ।মোবাইল কোর্টেও ভালই জরিমানা গুণতে হয়ছিল কিন্তু তাতে কি? বরংছ মাদার ট্রি গর্জনগাছ সহ নানা প্রজাতির গাছ পাচারের মহোৎসবে মেতে উঠেছে সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট।এতে সরকারি কোষাগারে হারাচ্ছে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব।

সচেতম মহলের অভিমত ইতিপূর্বে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী চকরিয়ার খুটাখালী মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান পরিদর্শনে আসলেও তেমন প্রভাব পড়েনি।এককথায় বলতে গেলে “যেই লাউ সেই কদু”! শুধুমাত্র মাদার ট্রি গর্জন গাছের গোড়ায় কিছু মাটি দেয়া ছাড়া জাতীয় উদ্যানের হয়নি কোন সংস্কার কাজ।অচিরেই মূল্যবান গাছ পাচার রোধ না করলে বনভূমি বদ্যভূমিতে পরিণত হবে শংকা প্রকাশ করেন।

তাছাড়াও পেকুয়ার আরবশাহ বাজার,টৈটং,মগনামা,চকরিয়ার বদরখালী,মৌলভীরকুম,চুয়ারফাঁড়ী,কৈয়ারবিল,ছিকলঘাট,বাঁশঘাট,মহেষখালীর ধলঘাট,মাতারবাড়ি,বাঁশখালীসহ জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে অবৈধ বোট নির্মাণের জন্য প্রতিদিন রাতের আঁধারে পাচার হচ্ছে লক্ষ লক্ষ ঘনফুুট মাদার ট্রি গর্জন গাছ।

গাছ পাচার রোধে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী ও ফুলছড়ি রেঞ্জের দ্বায়িত্বরত রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশাল আয়তনের বনভূমির তুলনায় পর্যাপ্ত বন পহরী না থাকায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারিরা সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।তবে বনবিভাগের পক্ষ থেকে টহল জোরদারসহ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.