ইমাম খাইরঃ
মহেশখালী-কক্সবাজার যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। এ পথে কাঠের বোট বা স্পিডবোটে করে প্রতিনিয়ত শতশত লোকের চলাচল। তাছাড়া জেটিঘাট হয়ে প্রতিদিন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন পণ্য আনা নেওয়া করে থাকে। এ জন্য ঘাটে টোল নিলেও দেওয়া হয় না আদায় রশিদ।
মহেশখালী জেটিঘাটে যে কোনো মালামালের প্রতি প্যাকেটে দিতে হয় ৫০-১০০ টাকা। এই টাকা নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। টোল প্রদানের রশিদ চেয়ে উল্টো বিপত্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
যাত্রীরা জানিয়েছে, দীর্ঘ নদীপথে মালামাল পরিবহনে যে ভাড়া, তার সমান টাকা শুধু মহেশখালী জেটিঘাট পারাপারে দিতে হয়।
খাস কালেকশন নামে সরকারি এই জেটিঘাটে দৈনিক সঠিক আয় কত টাকা তা আদৌ কারো জানা নেই। টোল আদায় রশিদ না দেওয়ায় প্রচুর সরকারি অর্থ লুপাটের সম্ভাবনা রয়ে যায়, জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মহেশখালী গোরকঘাটার বাবুল মাঝি মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ১৫টি ইলিশ জাল, ২টি ওষুধের কার্টুন ও একটি চেরাগের বস্তা নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ জন্য মহেশখালী ঘাটে তাকে টোলের টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু দেওয়া হয়নি টোল আদায় রশিদ, এমনটি জানালেন বাবুল মাঝি। একই কথা জানালেন একজন ভ্রাম্যমাণ কাপড় ব্যবসায়ী।
তিনি মহেশখালীতে কাপড়ের ব্যবসা করেন। সেখানে তার হকার আছে। যাতায়াতে স্পিডবোটে ১০০ টাকা ও মহেশখালী ঘাটে ৫০ টাকা দিতে হয়। তার জন্য কোনো রশিদ দেওয়া হয় না। গত ৮ বছর ধরে এভাবে বিনা রশিদে টাকা দিচ্ছেন বলে জানান এই কাপড় ব্যবসায়ী।
স্পিডবোট চালকেরা জানিয়েছে, সারাদিন তারা যে পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করে তাদের প্রত্যেকের মাথাপিছু ১০ টাকা করে মহেশখালী ঘাটের টোল হিসেবে দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু সেজন্য তাদের কোনো রশিদ দেয় না। রফিক উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি টাকাগুলো বুঝে নেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার-মহেশখালী নদীপথে ১২০টির মতো স্পিডবোট রয়েছে। প্রতি ট্রিপে ৯ জন করে যাত্রী ধরে। একটি স্পিডবোট দিনে অন্তত ১০ বার আসা যাওয়া করে। দুই পথে ২০ বার হিসেব করলে প্রতিটি স্পিডবোট থেকে দৈনিক আয় প্রায় ১৮০০ টাকা।বর্তমান করোনা মৌসুমে যদি অর্ধেক স্পিডবোট তথা ৬০টিও চলাচল করে তাহলে দৈনিক ১ লাখ ৮ হাজার টাকা আয় হওয়ার কথা। ভরা মৌসুমে কক্সবাজার-মহেশখালী নদীপথে দৈনিক ১০০টির মতো স্পিডবোট চলাচল করে।
এছাড়া যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে অসংখ্য গাম বোট এবং কাঠের বোট তো আছেই। সেগুলোও চলছে। প্রশ্ন হলো- সরকারি খাতায় ওঠছে কত টাকা?
খাস কালেকশনে নিয়োজিত রফিক উল্লাহ জানান, টোলের কোনো টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে তারা নেয় না। বোট চালকরাই যাত্রী প্রতি ১০ টাকা হারে পরিশোধ করে। একইভাবে মালামালা পরিবহনের ওপর অর্ধেক টাকা তারা আদায় করে। যা নির্ধারিত একটি খাতায় লিখে রাখা হয়। তবে, যাত্রীদের কোনো রশিদ দেওয়া হয় না বলে স্বীকার করেছেন রফিক উল্লাহ।
মহেশখালী পৌরসভার মেয়র আলহাজ মকছুদ মিয়া জানান, প্রতিনিধি দিয়ে খাস কালেকশন করছে স্থানীয় সরকার শাখা। সে বিষয়ে তারাই ভালো জানবেন।
সূত্র জানায়, গত প্রায় ৮ বছর ধরে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার অধীনে মহেশখালী জেটিঘাটের খাস কালেকশন করা হচ্ছে। সেখান থেকে আয়কৃত অর্থ কক্সবাজার ও মহেশখালী পৌরসভাকে ভাগ করে দেওয়া হয়। অথচ দুই জেটিঘাটের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মহেশখালী জেটিঘাটে আগে থেকে টোল আদায়ে রশিদ প্রথা ছিল না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মালামাল পরিবহনে প্রযোজ্য হারে বিআইডব্লিউটিএর যে নীতিমালা করা আছে, সেটার সাথে সমন্বয় ও যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৩৯
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.