ভয়ঙ্কর বিপদে ফেসবুক
ওয়ান নিউজ ড়েক্সঃ
বাতাসের বাজার দখলের যুদ্ধ। ছোট্ট একটা টুইট। আর তাতেই ফেসবুকের বাজারদর এক ধাক্কায় ১০ শতাংশ পড়ে গেল। মাত্র দু’দিনে! চারদিক থেকে আক্রমণই আসছে কেবল। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। সামাল দেয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
সোমবার টুইটটি করেছেন ব্রায়ান অ্যাক্টন নামে এক মার্কিন ধনকুবের। লিখেছেন, ‘‘এটাই সময়। #ডিলিটফেসবুক।’’ সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে নানা কারণে বিরক্ত হয়ে, এমন কথা অনেকেই লিখেছেন আগে। কিন্তু কে এই ব্রায়ান? যার কথায় ঝড় উঠেছে নেট সমাজে! ধাক্কা এসে লাগছে শেয়ার বাজারেও!
এক সময়ে ফেসবুকেরই ঘরের লোক ছিলেন ব্রায়ান। চার বছর আগে মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে মিলে হোয়াটসঅ্যাপ কিনেছিলেন। হোয়াটসঅ্যাপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। এখন পক্ষ বদলেছেন। চলতি বছরের গোড়ায় মার্ক-সঙ্গ ছেড়ে হোয়াটসঅ্যাপের থেকে কিছুটা আলাদা এক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক চালু করেছেন। সিগন্যাল ডট ওআরজি। অর্থাৎ এই মুহূর্তে হোয়াটসঅ্যাপই বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রায়ানের। তবে ফেসবুককে আঘাত কেন! সম্ভবত মূলে আঘাত করতে। জাকারবার্গ এই মুহূর্তে বেশ লেজেগোবরে হয়ে রয়েছেন মানুষের তথ্য নিয়ে ছেলেখেলার করার অভিযোগে। ব্রিটেন ভালো রকম চেপে ধরেছে তাকে। লোহা গরম থাকতে থাকতে ঘা মেরেছেন ব্রায়ান।
ওআরজি পদবিতেই প্রমাণ, ব্রায়ানের সিগন্যাল একটি অলাভজনক সংস্থা। তার জন্য একটি ফাউন্ডেশনও গড়েছেন তারা। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার—কোনোটাই তা নয়। এদের লক্ষ্য মুনাফা। কিন্তু ব্যবসায় দোষ ছিল না, যত ক্ষণ না বিশ্বাসভঙ্গের মারাত্মক অভিযোগ উঠছিল। ব্যক্তিপরিসরের তথ্য সরকার কেন নেবে, এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে ভারতেও। কিন্তু ব্যক্তিপরিসরের গোপনীয়তা সম্পর্কে ব্রিটেন বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে থেকেও তথ্যের ঘরে চুরি ঠেকাতে পারেনি। এতে তাদের চটে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
সরাসরি এ সব বিতর্কে না গিয়ে ফেসবুককে আঘাত করলেও ব্রায়ান আসল তিরটি ছুড়েছেন জাকারবার্গের হোয়াটসঅ্যাপ সাম্রাজ্যের দিকেই। এক সময়ে যা ছিল তার নিজেরও। প্রশ্ন তুলেছেন জাকারবার্গের ব্যবসার মডেল নিয়ে। তা হলো, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। হোয়াটসঅ্যাপ দাবি করে, প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া মাঝপথে কেউ আপনার বার্তায় নাক গলাতে বা উঁকি দিতে পারে না। কিন্তু কোনো প্রযুক্তি বা কোডের সাহায্যে তা হয়, সেটা তাদের গোপন বিষয়। এখানেই একহাত নিয়েছেন ব্রায়ান। তাদের সিগন্যাল নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেন-সোর্স প্রযুক্তি। এই গোপন কোড সংস্থার ব্যবসায়িক সম্পত্তি। ওপেন-সোর্স সকলের। প্রেরক-প্রাপকের মাঝে তথ্যের খাম এ ক্ষেত্রেও সিল করাই থাকছে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে তা করা হচ্ছে, সেটা সকলে জানতে পারছেন। যাচাই করতে পারছেন। জাকারবার্গ-বাহিনীর কাছে ঘরশত্রু হলেও ব্রায়ানের দাবি, তিনি আছেন ধর্মপথে। কোডের অবারিত দুনিয়ায়। সময়টা বেছেছেন মোক্ষম। জুকেরবার্গের বিশ্বাসযোগ্যতা যখন ফের কাঠগড়ায়।
সাম্রাজ্য বিস্তারে জাকরবার্গ এর আগে গরিবদের জন্য বাছাই করা কিছু ওয়েবসাইট থালিতে সাজিয়ে ‘ফ্রি বেসিক’ নামে আপাত বিনিপয়সার ভোজ দিতে চেয়েছিলেন। অল্প ক’টি দেশ তা নিলেও বলতে গেলে গোটা বিশ্ব তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। জাকারবার্গের কাছে সে ধাক্কাটা কম ছিল না।
পরে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগেও চিড় ধরে ফেসবুকের বিশ্বাসযোগ্যতায়। এ বারে তথ্য পাচারের ঘোলা পানি বেরিয়ে পড়ছে বুঝে ফেসবুক বলছে, স্ট্রোজ ফ্রিডবার্গ নামে একটি সংস্থাকে দিয়ে তারা তদন্ত করাবে। অ্যানালিটিকা তাতে সহযোগিতা করতে রাজিও হয়েছে। যিনি ফেসবুকের ওই অ্যাপটি বানিয়েছেন, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ, আলেকজান্দার কোগানও তাতে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু অভিযুক্তকেই কাজির ভুমিকায় দেখতে রাজি নন কোগানের প্রাক্তন সহকর্মী, কানাডার ডেটা অ্যনালিস্ট ক্রিস্টোফার উইলি। তিনিই তথ্য পাচারের বিষয়টি সামনে এনেছেন সম্প্রতি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.