ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের পরামর্শ

ডেস্ক নিউজ:
ঢাকা: প্রতিবেশী ভারতে প্রতিদিনই নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এক দিনে বিশ্বে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত এবং তাদের স্থানীয় কোভিডজনিত মৃত্যুর রেকর্ড প্রতিদিনই নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে।

রোববার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১১টায় ভারতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা এক কোটি ৯৬ লাখ একশ ৭২ জন এবং মৃত এক লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জন।

ভারতের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো সরকারি নথির ভিত্তিতেই দেশটির কোভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতার কথা গুরুত্বের সঙ্গে জানিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দেশটিতে নতুন করে একাধিক বিদেশি ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির কথাও বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশকে করোনার আরও ঝুঁকিপূর্ণ সংক্রমণ অঞ্চল হওয়া থেকে নিরাপদে রাখতে ভারতে যাতায়াতের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদি কারো একান্তই প্রয়োজন না থাকে তবে এই মুহূর্তে কোনো রকম পর্যটন, বিনোদন বা সাধারণ কারণে ভারত ভ্রমণ না করাই শ্রেয়। একই সঙ্গে ভারতফেরতদের কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করাও জরুরি। খুব দ্রুতই এ ব্যাপারগুলো সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে জানানো হবে।’

এরইমধ্যে কারিগরি কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত সংলগ্ন দেশটিতে এখন যেভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তা বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলার কৌশলগত দিক থেকে দেখলেও উদ্বেগজনক।

ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ‘এ জন্য কমিটির তরফ থেকে সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হয়েছে।’

কমিটির আরেক সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার পরমর্শক কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে এ বিষয়গুলো আলোচনা এসেছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সরকারের কঠোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখে। এক্ষেত্রে ভারত থেকে প্রবেশ বন্ধ করার জন্য সীমান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

এ ব্যাপারে কমিটির আরেক সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেখানে যে ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে বলা হচ্ছে তা এখনো বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, যদি ওই ভ্যারিয়েন্ট এখানে চলে আসে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।’

আর তাই ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করার জন্য টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করেছে।

ডা. নজরুল বলেন, ‘যদি ভারতের সঙ্গে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব নাও হয়, তাহলে অবশ্যই ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব বিষয়।’

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন বলেন, ‘ভারতের এই ভাইরাস আমাদের দেশে ছড়াবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। কারণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে। তবে বর্ডার সম্পূর্ণ বন্ধ না করে যদি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে ১৪ দিনের রাখা নিশ্চিত করা যায় সেক্ষেত্রেও কিছুটা সমাধান হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশটিতে যে সব ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে এগুলো এখনো ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়নি। এক্ষেত্রে এগুলো নিয়ে গবেষণা এখনো করা বাকি আছে। আর তাই এটি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট, অর্থাৎ একে খতিয়ে দেখা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সম্প্রতি সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পেছনে কোন ভ্যারিয়েন্ট আছে সেগুলো দেখার জন্য হলেও জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ওপর জোর দেওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে কোনো ভ্যারিয়েন্ট যেনো প্রবেশ না করে সেগুলো নিয়ে এরইমধ্যে আমাদের মতামত আমরা যথাযথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সিদ্ধান্ত সেখান থেকে খুব দ্রুতই নেওয়া হবে।’ -সারাবাংলা

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.