বৈষম্য সৃষ্টি করতে নয়, দূর করতেই কোটা

   
প্রভাষ আমিনঃ

বেশ কয়েকদিন ধরে অনেকে আমাকে ইনবক্সে কোটা নিয়ে লেখার অনুরোধ করছেন। আমি মজা করে তাদের বলেছি, আমার লেখা আপনাদের পছন্দ হবে না। কারণ কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চাইলেও নীতিগতভাবে আমি কোটার পক্ষে। ২০১৩ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আমি দাবি করেছিলাম, কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে যেন সাধারণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে তা পূরণ করা হয়। কয়েকদিন আগে সরকার এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।

এখন থেকে আর কোনো কোটার আসন খালি থাকবে না। কোটায় কাউকে পাওযা না গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে তা পূরণ করা হবে। কোটা ব্যবস্থাকে ন্যায্য করতে আরো কিছু সংস্কার প্রয়োজন। সেটাও নিশ্চয়ই ধাপে ধাপে হবে। কিন্তু কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সাধারণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে তা পূরণ করার সিদ্ধান্ত অবশ্যই একটা বড় অর্জন।

ধরুন কোনো বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কাউকে পাওয়া গেল না, তখন কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ ভাগ সাধারণ ৪৫ ভাগের সাথে যোগ হয়ে যাবে। এরপরও কোটাবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আপাতত কোনে মানে হয় না।

কোটা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের বেদনাটা আমি বুঝি। বাংলাদেশে মানুষ বেশি, বেকার বেশি। এখন দেশের শিক্ষার হার বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও। পড়াশোনা শেষ করে তারা যোগ্যতা অনুযায়ী একটি ভালো চাকরি চাইতেই পারে। সে দাবিতে আন্দোলনও করতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের বছরে আন্দোলন করে ন্যায়-অন্যায় দাবি আদায় করতে চাওয়া এক ধরনের ব্ল্যাকমেইল। এখন যদি কেউ এই আন্দোলনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পান, তাকে দোষ দেয়া যাবে না।

কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়লো। দুই গ্রামের মানুষ সব বিষয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সবসময় নিজ নিজ গ্রামের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে চায়। দুই গ্রামেই একটি করে স্কুল ছিল, তাতে একজন করে শিক্ষক। তো একবার তর্ক হলো কোন স্কুল ভালো, কোন শিক্ষক ভালো? ঠিক হলো দুই গ্রামের মানুষের উপস্থিতিতে দুই শিক্ষকের মধ্যে প্রশ্ন বিনিময়ে নির্ধারিত হবে শ্রেষ্ঠত্ব।

সবাই হাজির। সাজ সাজ রব। প্রতিযোগিতার শুরুতেই এক গ্রামের শিক্ষক অপর শিক্ষককে বললেন, আমি একটা প্রশ্ন করবো, আপনি সবাইকে শুনিয়ে জোরে উত্তর দেবেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, বলুন তো  I don’t lknow অর্থ কী?

বোকা শিক্ষক চিৎকার করে বললেন, আমি জানি না। ব্যস অশিক্ষিত গ্রামবাসীরা বুঝে গেল, এই শিক্ষক প্রশ্নের উত্তরটি জানেন না। জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়ে গেল। এখন বাংলাদেশে চলছে ঠিক তেমন অবস্থা। আপনি যাকেই জিজ্ঞেস করবেন, আপনি কোটার পক্ষে না বিপক্ষে?

সবাই বলবেন, বিপক্ষে। কিন্তু আসলে কি আমরা ভেবেচিন্তে কোটার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি, নাকি সস্তা জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছি কোনো বিপদজনক সমূদ্রে? এটা ঠিক, এই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়াটাই সবচেয়ে সহজ, জনপ্রিয় হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। কিন্তু শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে দাবির ন্যায্যতা বিচার করলে হবে না।

বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে এক নজরে দেখে নেয়া যাক, বর্তমানে প্রযোজ্য কোটা ব্যবস্থা। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। তার মানে মোট ৫৫ শতাংশই সংরক্ষিত। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা আছে। তবে এই ১ শতাংশ নেয়া হয় ৫৫ শতাংশ থেকেই। আর বাকি ৪৫ শতাংশ উন্মুক্ত। প্রিয় পাঠক সাদা চোখে দেখলে নিশ্চয়ই মনে হয় খুব বৈষম্য করা হচ্ছে। কোটা থাকলে বৈষম্য, নাকি না থাকলে বৈষম্য সে আলোচনায় পরে আসছি।

সাধারণভাবে ভাবলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে, মুক্তবাজারের এই যুগে কোটা থাকার কোনো মানেই হয় না। সবার জন্য সমান সুযোগ। যে বেশি মেধাবী, সেই চাকরি পাবে। হিসাব বরাবর। কার দাদা মুক্তিযোদ্ধা, কে উপজাতি, কে নারী, কে প্রতিবন্ধী- এই বিবেচনা করার দরকার কি। কোটা দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা
হচ্ছে। সবার জন্য সমান সুযোগ, কোটাহীন, বৈষম্যহীন এমন একটি দেশ, এমন একটি সমাজ বিনির্মাণই আমাদের লক্ষ্য।

কিন্তু বাস্তবতা হলো এমন একটি দেশ এখনও আমাদের কল্পনারও অনেক দূরে। এখনও আমাদের দেশে পদে পদে বৈষম্য। আর বৈষম্য সৃষ্টি করতে নয়, বৈষম্য দূর করতেই প্রচলন হয়েছে কোটা ব্যবস্থার। কোটা ব্যবস্থা নতুন কিছু নয়, বাংলাদেশের প্রায় সমান বয়সী। ১৯৭২ সালে একটি সাম্যের সমাজ গড়তে, অনগ্রসর-পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে মূলধারায় আনতেই কোটা ব্যবস্থার প্রচলন। তাহলে আজ এতদিন পর হঠাৎ কেন কোটা বাতিলের আন্দোলন?

আমার ছেলে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপিঠ সেন্ট যোসেফ স্কুলে পড়ে। গাড়িতে চড়ে দুই মিনিটে স্কুলে পৌছে যায়। স্কুল শেষে কোচিং, বাসায় শিক্ষক, নোটবই, ভালো খাওয়া, উন্নত চিকিৎসা, সুস্থ বিনোদন, হাওয়া বদল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট- গোটা বিশ্ব আসলে তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু রাঙামাটির বরকলে  আমার কোনো চাকমা বন্ধুর ছেলেকে তো স্কুলেই যেতে হয় ১০ মাইল পাহাড়ি পথ বেয়ে। এত কষ্ট করে যে স্কুলে যায়, সে স্কুলে নিশ্চয়ই ভালো শিক্ষক নেই। হয়তো স্কুলে যায় পান্তা খেয়ে, ফিরে কোনোরকমে পেট পুরে খায়। পুষ্টির বালাই নেই, বিনোদনের বালাই নেই, প্রযুক্তির হয়তো চেহারাই দেখেনি।

তাকে লড়তে হয় প্রকৃতির বিরুদ্ধে, দারিদ্রের বিরুদ্ধে। তার ৬০ নাম্বার তো আমার বিবেচনায় আমার ছেলের ৯০ নাম্বারের চেয়ে বেশি মূল্যবান। উপজাতি কোটা না থাকলে তো সারাজীবন আমাদের ছেলেরাই চাকরি পাবে, আমার চাকমা বন্ধুর ছেলেকে পরে থাকতে হবে সেই পাহাড়েই। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, জেলা কোটা তুলে দিলে বাংলাদেশের ৪টি জেলার মানুষ ৯০ ভাগ সুযোগ পেয়ে যাবে। বাকি ৬০ জেলার শিক্ষার্থীদের তখন আন্দোলনে নামতে হবে। ৪ জেলাই বা বলি কেন, আসলে তখন ঢাকার সেরা ২০ স্কুলের শিক্ষার্থীরাই দখল করে নেবে অধিকাংশ আসন।

ঈশ্বরপ্রদত্ত মেধা থাকুক আর না থাকুক, শহুরে মধ্যবিত্তরা তাদের সন্তানদের স্কুল-কোচিং-নোটবই মুখস্ত করিয়ে একটি রোবোটিক মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করছে।

কোটা না থাকলে এই রোবোটিক প্রজন্মের কাছে বারবার হেরে যাবে আমার দিনাজপুরের, খাগড়াছড়ির প্রকৃতির সন্তানেরা। একদম নিজের চেষ্টায়, নিজের মেধায় চূড়ায় উঠে যাওয়ার গল্প তো আসলে গল্পই। ড. আতিউর রহমান তো আর আমাদের দেশে ভুরি ভুরি নেই। এইরকম আতিউর রহমানদের তুলে আনতেই প্রয়োজন কোটা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, স্পিকার নারী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী। তাই বলে কি আর নারী কোটার দরকার নেই? তেমন মনে হতেই পারে। বাংলাদেশে নারীদের অবস্থা যথেষ্টই ভালো হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। শহরের স্কুলগুলোতে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করছে মেয়েরা। লাখ লাখ নারী গার্মেন্টসে কাজ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। কিন্তু এসবই আসলে এক ধরনের বিভ্রম। এখনও গ্রামে মেয়েদের স্কুলে যেতে হয় অনেক সংগ্রাম করে।

আল্লামা শফিদের পরামর্শে বাবা-মা মেয়েদের ক্লাশ ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়িয়েই বিয়ে দেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যান। তারপর আছে ইভ টিজিং, আছে দারিদ্র, আছে ধর্ম, পেরুতে হয় কুসংস্কারের পাহাড়। তাই উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা পাওয়া হাসিনা-খালেদা-শিরিন শারমিনদের দেখে আমাদের গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে থাকা সখিনা-আমেনা-জরিনাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। আমরা চাই সখিনা-আমেনা-জরিনারাও ম্যাজিস্ট্রেট হোক, পুলিশ অফিসার হোক।

প্রতিবার এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার পর পত্রিকায় ছাপা হয়, অমুক প্রতিবন্ধী পা দিয়ে লিখেও ভালো ফলাফল করেছে। এখন সেই ছেলেটাকে সাধারণ স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থীটার সমান করতে রাষ্ট্র কি তার পাশে দাঁড়াবে না?

আসলে এত কিছু নয়, দেখেশুনে মনে হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য রাখা ৩০ শতাংশ কোটা। অনেকেই বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখা উচিত নয়।

এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লোক পাওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট জোগাড় করে চাকরি পেয়ে যায়… ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবই ঠুনকো অজুহাত। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের জন্য লড়েছেন, শহীদ হয়েছেন। যখন যুদ্ধ করেছেন, তখন নিশ্চয়ই তারা ভাবেননি, তাদের সন্তানরা কোটায় চাকরি পাবে। তারা ভাবেননি বলে আমরাও ভাববো না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রক্তে আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বসে কোটার বিপক্ষে আন্দোলন করতে পারছি।

দেশ স্বাধীন না হলে এই শিক্ষার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানের কোটার জন্য আন্দোলন করতে হতো। তাই এই দেশটার ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি একটু বেশিই থাকবে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু তাদের অনেকেই ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমোর, গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকই ছিলেন প্রথাগত অর্থে অশিক্ষিত। তাই স্বাধীনতার পর চাইলেও রাষ্ট্র তাদের সবাইকে চাকরি দিতে পারেনি। দেশ স্বাধীন করার মত সাহস থাকলেও, সেই স্বাধীন দেশে কোনো চাকরি করার মত যোগ্যতা তাদের ছিল না।

পরে হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে নিজের সন্তানকে কষ্টেসৃষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন সেই সন্তানের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? অবশ্যই দাঁড়াবে। এটা তো বৈষম্য নয়, এটা ঋণ শোধ। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ভুয়া না আসল সেটা যাচাই করার দায়িত্ব পিএসসির বা রাষ্ট্রের। কিন্তু এই অজুহাতে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা যাবে না, তাদের বিপক্ষে রাজপথে স্লোগান দেয়া যাবে না, তাদের কোটা বাতিলের দাবি করা যাবে না। অবশ্যই যাবে না। অবশ্যই আমার সন্তানের চেয়ে নাসিরউদ্দিন ইউসুফের সন্তান এই দেশে বাড়তি সুবিধা পাবে। যারা দেশের জন্য লড়েছেন, দেশের কাছে তাদের চাওয়ার কিছু না থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের উচিত সবসময় তাদের জন্য বাড়তি আসন রাখা।

আমি মনে করি আস্তে আস্তে যদি এমন দিন আসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেয়ার মত আর কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না, তখনও এই কোটা বহাল রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানোর প্রতীক হিসেবে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে যখন রাজপথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে, তখন আমি বুঝি এই আন্দোলনের কলকাঠি অন্য কেউ নাড়ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে স্লোগান শুনে নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধারা কষ্ট পেয়েছেন। ২০১৩ সালের আন্দোলনের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ অভিমান করে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যেন তরুণ প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া না হয়। আমরা তার কষ্ট, তার অভিমান বুঝি।

আমি ইউসুফ ভাইসহ সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি। ওরা ছোট। নিছক ব্যক্তিগত লাভালাভের বিবেচনায় তারা আপনাদের গালি দিয়েছে, আসলে তাদের মুখে স্বাধীনতাবিরোধীরা এই স্লোগান তুলে দিয়েছে। প্লিজ, পারলে আপনাদের ঔদার্য্য দিয়ে তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আমরা জানি আপনারা শুধু একটি স্বাধীন দেশের জন্যই লড়েছেন, আর কিছু চাননি।

কিন্তু আপনারা চাননি বলেই রাষ্ট্র দেবে না কেন? আপনারা স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন, এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেই ঋণ শোধের। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের পাশাপাশি দাবি করছি, স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তানদের সব ধরনের চাকরির সুযোগ নিষিদ্ধ করা হোক। যারা দেশ চায়নি, তাদের এই দেশে কোনো সুযোগ পাওয়ারও অধিকার নেই। সঙ্গে সংখ্যালঘু আর দলিত সম্প্রদায়ের জন্য কোটা সংরক্ষণেরও দাবি জানাচ্ছি।

আরেকটি খুবই জটিল এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হলো, কোটা আর মেধাবী। মনে হয় কোটা মানেই অমেধাবী। ব্যাপারটি মোটেই তা নয়। কোটা সুবিধা পেতে হলেও তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের, নারীদের, উপজাতিদের একটি ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করেই আসতে হয়। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা পর্যন্ত সবাইকে লড়তে হয় সমানতালেই। কোনো মুক্তিযোদ্ধার এসএসসি পাশ ছেলে বা তৃতীয় শ্রেনী পাওয়া উপজাতি কেউ তো আর ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে যাচ্ছে না। বলা উচিত কোটা আর নন কোটা। সবাই তো মেধাবী। নইলে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান কিভাবে? হয়তো উনিশ আর বিশ।

যখন উনিশ আর বিশ, তখন আমার ২০ পাওয়া ছেলের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার ১৯ পাওয়া ছেলেই অগ্রাধিকার পাবে।

কোটা তো শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। ভারতে কোটা আমাদের চেয়েও বেশি ৬০ ভাগ। বিশ্বের আরো অনেক দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কোটা আছে। এমনকি বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও তো কোটা আছে।

ভর্তির সময় আপনি কোটা সুবিধা ভোগ করবেন, আর সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর চাকরির ক্ষেত্রে কোটার বিরোধিতা করবেন, এটা তো হওয়া উচিত নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছে, যেটা নিয়ে এত হইচই, সেটাও তো কোটাই।

উন্নত দেশগুলো আমাদের মত গরীব দেশকে এই ধরনের কোটা সুবিধা দেয় বৈষম্য কমাতে। তাই বৈষম্য কমানোটাই কোটা ব্যবস্থার মূল কথা। খেয়াল রাখতে হবে বৈষম্য কমাতে গিয়ে যেন আবার নতুন কোনো বৈষম্য সৃষ্টি না হয়। আমি নিশ্চিত এখন কোটার পক্ষে-বিপক্ষে গণভোট হলে কোটা বাতিলের পক্ষেই ৯৫ ভাগ লোক ভোট দেবেন। কিন্তু রাষ্ট্র তো অবিবেচক নয়, তাদেরকে ৫ ভাগ হলেও যৌক্তিকভাবে বঞ্চিতদের পাশেই দাঁড়াতে হবে।

প্রভাষ আমিন : সাংবাদিক, কলাম লেখক; বার্তা প্রধান : এটিএন নিউজ।
probhash2000@gmail.com

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.