বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে স্থানীয় এনজিও-সিএসও’র স্বীকৃতি চাই

স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিডিসিএসও প্রসেসের আলোচনা সভা

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশাপাশি ঘোষণা করেছিলেন মুক্তির জন্য সংগ্রামের কথা, মানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তি তাই আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম মূল চেতনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে স্থানীয় এনজিও-সিএসওদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সেই ভূমিকার স্বীকৃতি প্রয়োজন- স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রায় ৭০০ স্থানীয় এনজিও-সিএসওর প্লাটফরম বিডিসিএসও প্রসেস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তাগণ আজ এসব কথা বলেন।

কোস্ট ট্রাস্টের রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অর্জন : নাগরিক সমাজের ভুমিকা’ শীর্ষক অনলাইন এই আলোচনা সভার শুরুতেই জাতির জনক, সকল শহীদ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও-সিএসও নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম (দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা), ফয়জুল্লাহ চৌধুরী (বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা), রফিকুল ইসলাম খোকন (রূপান্তর), আরিফুর রহমান (ইপসা), শিউলি শর্মা (জাগো নারী) , আনোয়ার জাহিদ (আইসিডিএ)।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার পর পর উপকূলীয় এলাকায় এসে বঙ্গবন্ধু আমাদের স্থানীয় সংগঠন করার তাগিদ দেন, মূলত আজকে হাতিয়ার মতো একটি দ্বীপে একটি এলাকায় এনজিও পরিচালনার অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনা। সদ্য স্বাধীন দেশে আমরা ত্রাণ ও পুনর্বাসনে কাজ করেছি, পরবর্তীতে শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবায় সরকারের পাশপাশি কাজ করেছি। এখনো উন্নয়নের ফসল তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই প্রচেষ্টার সুফলকে স্থায়িত্বশীল করতে এনজিও-সিএসওদের ভূমিকার স্বীকৃতি অত্যাবশ্যক।

ফয়জুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে দেশ আজ উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখনো সমাজে উন্নযনের অনেক বাধা আছে। সেই বাধা দূর করতে আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ, সুশাসন, গণতান্ত্রিক চর্চা। এসব ক্ষেত্রে গুরুত্ব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় সংগঠন, স্থানীয় এনজিও। উন্নয়ন প্রচেষ্টাগুলো কার্যকর করতে হলে সকল সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, দেশের সকল সংকটেই এনজিওরা সরকারের পরিপূরক হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। কোভিড মহামারী প্রতিরোধেও স্থানীয় এনজিও, স্থানীয় সংগঠন ঝাপিয়ে পড়েছে। তবে দু:খের বিষয়, এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় সংগঠনগুলোর ত্যাগ-তিতীক্ষার স্বীকৃতি আমরা পাই না। দেশের সার্বিক স্বার্থেই, উন্নয়নকে স্থায়িত্বশীল করতে এনজিওর অবদানের স্বীকৃতি দিতে হবে। এনজিও উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সরকারের পরিপূরক, কোনভাবেই প্রতিপক্ষ নয়।

আরিফুর রহমান বলেন, দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় এনজিও-সিএসওগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে, নীতি পর্যায়েও রয়েছে এনজিও-সিএসওদের অবদান। কিন্তু সেইসব অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি আজও অধরা, তবে স্বীকৃতির আশায় বসে না থেকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাওয়টা খুব জরুরি। গণমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বড় স্বীকৃতি।

আনোয়ার জাহিদ বলেন, দেশের উন্নয়নে এনজিও-সিএসওদের ভূমিকাকে অস্বীকার করা হলে, উন্নয়নের প্রকৃত ইতিহাসের অবমাননা করা হয়, কারণ এদেশে আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়, গণতন্ত্র বিকাশে এনজিওদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

শিউলী শর্মা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও আজও দেশের নারী সমাজ প্রকৃত স্বাধীন নয়, মুক্ত নয়, নিরাপদ নয়। নারীর জন্য স্বাধীন ও নিরাপদ পরিস্থিতি ছাড়া সত্যিকার স্বাধীনতার সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির চেতনা ধারণ করে, সরকারের পাশাপাশি ̧রুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে দেশের এনজিও খাত, তথা সুশীল সমাজ সংগঠনসমূহ। আন্তর্জাতিক নানা পরিস্থিতির বাস্তবতায় এনজিও- সিএসওকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মসূচির তাই স্থানীয়করণ প্রয়োজন। স্থানীয়করণ দেশিরা এসে আমাদের হাতে তুলে দিবে না। এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে স্থানীয় এনজিও-সিএসওকেই।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার মো. বেল্লাল হোসেন, উদয়ন বাংলাদেশের শেখ আসাদ, সারা’র রওশন আরা বেগম, তৃণমূল সংস্থার খন্দকার ফারুখ আহামেদসহ আরও অনেকে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.