বেনাপোল স্থলবন্দরে উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ

ইয়ানুর রহমান : বেনাপোল বন্দরে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কাজে ব্যবহার হচ্ছে পুরাতন আধলা ইট, ও খোয়া এবং নিম্ন মানের নির্মান দ্রব্যসামগ্রী। এসব নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করায় হতাশ হয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীসহ সাধারন জনগন।

 

বন্দর এলাকার একটি সূত্র জানায়, বড় অংকের টাকায় ৪৫ বছর আগের শেড ভেঙ্গে নতুন করে শেড তৈরী করলেও পণ্য ধারন ক্ষমতা বাড়বে না। থেকে যাবে পূর্বের মত। ফলে যানজট পণ্য জট লেগে থাকবে বন্দর এলাকায়।

 

সূত্র দাবি করে যদি এ টাকা দিয়ে নতুন জায়গায় নিয়ে টার্মিনাল শেড তৈরী করা হতো, তা হলে আমদানি পণ্যর ধারন ক্ষমতা বাড়তো, যানজট, পণ্যজটও মুক্ত হতো।

 

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায় ভাঙ্গা গড়ার একাজে সুবিধা হবে এবং পকেট ভারী হবে বন্দরের উচ্চপর্যায়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ইঞ্জীনিয়ারদের। সূত্র বলছেন, ৪৫ বছরের পুরাতন বিল্ডিং ভেঙ্গে সেখান থেকে ইট নিয়ে নতুন করে শেড তৈরী করলে ধ্বসে যেতে পারে অল্প সময়ের মধ্যে।

 

জানা যায়, এডিবির অর্থায়নে (অ্যাশিয়ান ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক) ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যায়ে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করছেন ঢাকার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মনিকো লিমেটেড। দুই বছরের মধ্যে তাদের এই কাজ সম্পূর্ণ করার চুক্তি রয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে, নতুন দুইটি আমদানি পণ্যগার, চারটি ওপেন শের্ড, পানি নিষ্কাশনের ড্রেন, বন্দরের মধ্যকার রাস্তা ও ইয়ার্ড নির্মাণ।

 

শনিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে বেনাপোল বন্দরের ৮ নাম্বার ইয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বন্দরের পুরানো পণ্যগার ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ভাঙা আধলা নিম্নমানের ইট এনে বিশাল স্তুপ করা হচ্ছে। আর শ্রমিকরা ওই আধলা ইট থেকে খোয়া তৈরি করে তা নতুন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছেন।

 

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মনিকো লিমেটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার পার্থ, মামুন, শিহাব ও নবারুজ্জামান নামে চার ইঞ্জিনিয়ার এই নির্মাণ কাজের তদারকি করছেন। তবে তারা কাজের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট চেম্বার অব কর্মাসের সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বন্দরে ভারি পণ্য উঠানো-নামানো করা হয়। তাই অবশ্যই ভালো মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে হবে। না হলে দুই দিন বাদে তা ধসে যাবে। বিষয়টি বন্দরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।

 

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, প্রতিবছর এই বন্দর থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোর চিত্র বেহাল। এতে পণ্য খালাসে বিলম্ব ও অর্থনৈতিক ক্ষতিতে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আজ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কিছু নির্মান কাজ শুরু হলেও সেখানে পুরানো আধলা ইটের ব্যবহার দুঃখজনক।

 

আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি আমিনুল হক বলেন, এপথে বাণিজ্যের গুরুত্ব বাড়ায় ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে অত্যাধুনিক স্থাপনা তৈরি হয়েছে। সেখানে পুরো বন্দর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন, রয়েছে উন্নত মানের সড়ক ব্যবস্থা, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এসি ওয়ার হাউজ, চোরাচালান প্রতিরোধে স্কানিং ব্যবস্থাসহ আরও অনেক আধুনিক ব্যবস্থা। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে ওই একই সুবিধা থাকার কথা থাকলে ও আজ পর্যন্ত একটিও গড়ে ওঠেনি।

 

বেনাপোল বন্দরের উপ সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম পুরানো আধলা ইট ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে  জানান, বন্দরের পুরানো স্থাপনা ভাঙার পর সেখান থেকে এক কোটিরও কিছু বেশি পরিমাণে আধলা ইট পাওয়া গেছে। বিস্তারিত কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন ঢাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

 

বাংলাদেশ স্থলবন্দরের ঢাকা অফিসের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, এসব পুরানো আধলা ইট বাইরে অকশানে বিক্রি করে ভালো মূল্য পাওয়া যায় না। তাই সেগুলো তারা নতুন ইটের সঙ্গে মিশিয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছেন। এতে নির্মাণ কাজে কোনো সমস্যা হবেনা।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.