ইয়ানূর রহমান : যশোরের বেনাপোল পৌর ট্রাক টার্মিনাল ঘিরে চাঁদাবাজি আরও জোরদার হয়েছে। চালকদের অভিযোগ, সেখানে ট্রাক রাখলেও টাকা না রাখলেও টাকা গুনতে হচ্ছে। ট্রাক প্রতি ১শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে। চালকরা জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশে বন্দরের বাইপাস সড়কে তাদের ট্রাক নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। পৌর ট্রাক টার্মিনালের সামনে যেতেই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এদিকে,চালকদের জিম্মি করে প্রভাবশালীচক্রের অবৈধ চাঁদাবাজির প্রতিবাদে বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারী সকল সংগঠন ২৬ এপ্রিল থেকে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশের একটি স-মিলের সামনে বসে আছেন আজিবার রহমান ও রহমত নামের দুই ব্যক্তি। তার মহাসড়কের ওপর পৌরসভার জ্যাকেট গায়ে এক যুবক লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক নিতে চালকদের বাধ্য করা হচ্ছে। ওই ট্রাকগুলো বেনাপোল পৌর ট্রাক টার্মিনালের সামনে পৌঁছাতেই চক্রের সদস্যরা গতিরোধ করছে। এরপর ট্রাকগুলো টার্মিনালে ঢুকানোর জন্য বলছেন চাঁদাবাজরা। চালকরা ট্রাক রাখতে রাজি না হলেও ট্রাক প্রতি ১শ’ টাকা করে দিতে হচ্ছে। চাঁদার টাকা না দিলেই চালকদের মারপিটসহ নানা ধরণের হুমকি দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাক টার্মিনালকে ঘিরে গড়ে ওঠা চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন প্রভাবশালী মোহাম্মদ আলী খান, কাউন্সিলর রাশেদ, আব্দুল মালেক ও আকুল হোসেন।
ঢাকা মেট্রো-ট ১৫-৫২৪০ নম্বর ট্রাকের চালক বশির উদ্দিন জানান, বন্দরের বাইপাস সড়কে জোর করে ট্রাক নিতে বাধ্য করা হয়েছে। টার্মিনালের সামনে যেতেই গতিরোধ করে ১শ’ টাকার স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, টার্মিনালে ট্রাক রাখলেও টাকা না রাখলেও টাকা দিতে হবে। চাঁদাবাজদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে ‘আমরা যেনো মগের মুল্লুকে বাস করছি’। ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৫২৩৫ নম্বর ট্রাকের চালক সাইফুল ইসলাম জানান, এক্সপোর্টের মাল লোড রয়েছে। কোথাও ট্রাক রাখার নিয়ম নেই। সরাসরি বন্দরে আসতে হবে। তারপরেও টার্মিনালে ট্রাক রাখার জন্য চাপাচাপি করা হয়েছে। রাখতে রাজি হয়নি তারপরেও ১শ’ টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলেই খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা অন্য এলাকার চালক বলে মানুষ মনে করছেন না চাঁদাবাজরা। ঢাকা মেট্রো-ট-১৫ ১৫ ৯৩, ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-১২ ৪৪,ঢাকা মেট্রো-ট ১১-৩০০৯ নম্বরের চালকসহ আরও অনেক ট্রাকের চালক একই ধরণের অভিযোগ করেন।
সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি ও বন্দর থেকে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া সচল রয়েছে। এপথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি হয়, আমদানি পণ্য নিতে আসে প্রায় ৪শ’ ট্রাক। রফতানি পণ্য বেনাপোলে প্রবেশ করেই বন্দরের ট্রাক টার্মিনালে ঢোকে। বন্দরের টার্মিনাল চার্জ দিয়ে চলে যায় ভারতে। যে সকল ট্রাক বন্দরে আসে সব ট্রাকই ভারতে ঢুকে যায়। কিন্তু হঠাৎ আমদানি-রফতানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক মহাসড়ক থেকে ধরে নিয়ে ঢোকাচ্ছে পৌরসভার ট্রাক টার্মিনালে। পরে ট্রাক প্রতি ১শ’ টাকা চাঁদা আদায় করে ছাড়পত্র দিচ্ছে। এতে দুই বার টার্মিনালে প্রবেশ করতে যেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষেপনে মারাত্মকভাবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ব্যাহত হচ্ছে।
যে কারণে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করে বলেছেন, একটি কুচক্রী মহল বেনাপোল পৌর ট্রাক টার্মিনালটি বনগাঁর কালিতলা ট্রাক টার্মিনালের মতো চালকদের জিম্মি করে অর্থ বাণিজ্যের ফাঁদ পেতেছে। এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রীতিমতো ফুঁসে উঠেছে বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি, সিএন্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন বন্দর হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫ ও ৮৯১, বেনোপোল সিএন্ড এফ অ্যাাসোসিয়েশন , বেনাপোল, শার্শা নাভারণ মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, ঝিকরগাছা নাভারণ বেনোপোল ট্রাক মালিক সমিতি উল্লেখযোগ্য। চক্রের চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে তারা আন্দোলনে নামবে হুশিয়ারি দিয়েছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, পৌর এলাকাকে যানজটমুক্ত করতে ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তোলা অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ। কিন্তু এই টার্মিনালকে ঘিরে বেশুমার চাঁদাবাজি করা খুবই দুঃখজনক। চালকদের জিম্মি করে টাকা আদায় কখনো মেনে নেয়া যায়না। কারো ইচ্ছা হলে সেখানে ট্রাক রাখবে। কিন্তু সেখানে ট্রাক রাখতে বাধ্য করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন তিনি। টার্মিনালে রাখা এক ট্রাকের চালক জানান, টার্মিনাল খরচ নেয়া হয়েছে ১শ’ টাকা। আর প্রতি রাতে ৩০ টাকা করে নেয়া হয়। পৌর ট্রাক টার্মিনালের টোল ইজারাদার মোহাম্মাদ আলী জানিয়েছেন, কোনো চালককে জিম্মি করে চাঁদা নেয়া হয়না। ট্রাক রাখতেও জোর করা হয়না। টার্মিনালের সামনের রাস্তা থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টিও মিথ্যা দাবি তার। এক প্রশ্নে মোহাম্মদ আলী জানান, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৪২ লক্ষ ১শ’ টাকায় ইজারা নিয়েছেন।
এই বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন খান জানিয়েছেন, পৌর ট্রাক টার্মিনালকে ঘিরে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই ধরণের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে যদি ফের কেউ চাঁদাবাজি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.