ডেস্ক নিউজ:
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৯ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ উদযাপন অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ এবং এ নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত।
সরকারপ্রধান বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা ২১ শতকের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছে। এ সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮.৪০ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৮টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। দক্ষতার কারণে তারা এসব উচ্চ পদ পেয়েছেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলেও জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা ও শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সব শান্তিরক্ষীদের বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের বর্তমান পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামসহ বাংলাদেশের সব শান্তিরক্ষী যাতে আরো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে সেজন্য আমাদের সরকারের সব প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনাদের এ ভূমিকা চিরকাল স্মরণ রাখবে। আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন, বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন এ আমাদের প্রত্যাশা।
করোনা মহামারির মধ্যে বিভিন্ন দেশে এখন অসহিষ্ণুতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে উল্লেখ করে এ সময়ে অত্যন্ত ধীর-স্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য ও আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সেনাকুঞ্জ প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শহীদ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্য ও আহত শান্তিরক্ষীদের প্রতিনিধিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.