ডেস্ক নিউজ:
বায়ু দূষণে বিশ্বের মধ্যে আবারও এক নাম্বারে উঠে এসেছে ঢাকা। প্রথম স্থানে শুধু উঠে এসেছে বললে ভুল হবে অন্য দেশগুলোর তুলনায় বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় আজ দূষণের মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী আজ শনিবার (২১ নভেম্বর) ঢাকায় আজ বায়ু দূষণের মানমাত্রা ৩১৫। যেখানে কলকাতা তৃতীয় অবস্থানে থাকলে সেখানে এই শহরটি মানমাত্রা ১৮৬, মুম্বাইয়ে ১৬৯ আর দিল্লিতে ১১২।
বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আবহাওয়াকে তারা দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন। এখনই দূষন কমাতে পদক্ষেপ না নিলে শীতকালে অর্থাৎ আগামী তিন মানে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শংকা অন্যদিকে বায়ু দূষণের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে মৃত্যুর হারও বেড়ে যাবার শংকা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, এই দূষণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার মূলত চারটি কারণ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে করোনার প্রভাব কাটিয়ে যানবাহনে চলাচল বেড়েছে, বাংলাদেশের আশেপাশের অঞ্চল থেকে দূষিত বাতাস আসছে ঢাকার দিকে। সাধারণত শীতকালে উত্তরের বাতাস আসা শুরু হয়। তার সাথে আসছে দূষিত কণাও। তৃতীয়ত, ঢাকায় খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ বেড়েছে। নির্মান কাজের কারণে ধূলিকণা বাড়ছে এবং চলতি মাসে ইট-ভাটাগুলো চালু হওয়ার কারণেই মূলত এই দূষণ আরও বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, বায়ু দূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালেও আমরা বলি মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। আজ ৩০০, যাকে আমরা দুর্যোগপূর্ণ হিসেব বিবেচনা করি। এটি শীতের কেবল শুরু। শুষ্ক মৌসুমের কারণে আগামী তিনমাস এই ধরনের আবহাওয়া থাকবে। সরকার যদি এখনই বায়ু দূষণ রোধে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আগামী দিনগুলো আরো ভয়াবহ হবে বায়ু দূষণ।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীবাসী, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
কুয়াশাচ্ছন্ন ঢাকাদীর্ঘদিন বায়ুদূষণের মধ্যে থাকলে অন্যদের পাশাপাশি গর্ভবতী নারীর হৃদরোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ-ক্যানসার, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (সিওপিডি), নিউমোনিয়াসহ চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বায়ু দূষনের কারণে এমনিতে ফুসফুসের ক্ষতি হয়। ফুসফুস জনিত ব্রংকাইটিস, হাঁপানিসহ বড় অসুখ যেমন হতে পারে, তেমনি ঠান্ডা-জ্বর, সর্দিকাশি, নিউমোনিয়ার মতো অসুখও হতে পারে। এতে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যায়। এই সময়ের জন্য অনেক সবচেয় ভয়ের কথা হচ্ছে শীতকালে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়বে বলে আমরা আশংকা করছি। এটি মোকাবেলার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে শক্তিশালী ফুসফুস।
তিনি আরও বলেন, এখন বায়ু দূষণের কারণে যদি আগেই আমাদের ফুসফুস আক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে থাকে তাহলে করোনা মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়তে পারে বলে তিনি শংকা প্রকাশ করেন।
এই ঝুঁকি এড়াতে, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, গেলেও মাস্ক ছাড়া বাইরে না যাওয়া, প্রচুর পানি জাতীয় খাবার খাওয়া এবং অবশ্যই ভিটামিন সি এবং ডি জাতীয় খাদ্য তালকায় রাখা জরুরি বলে জানান ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। -বাংলা ট্রিবিউন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.