বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ : শিশু সন্তানের আত্মহত্যা

ইয়ানূর রহমান : আরমান হোসেন নামে এক স্কুলছাত্র আত্মহত্যা করেছে। বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া মা-বাবার সন্তান সে। ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের পল্লীতে।

১২ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশুটি বাবা-মা কারো কাছে আশ্রয় পায়নি। মা আগেই বিয়ে করেছেন। এখন বিদেশ যেতে উদ্যত। আর প্রবাসী বাবা দেশে ফিরে নতুন করে সংসার পাতার আয়োজন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটি গলায় ফাঁস দিয়ে ইহলীলা সাঙ্গ করলো।

শিশুটির মৃত্যুর জন্য তার মা দায়ী করছেন বাবাকে। আর বাবার দাবি, মায়ের ওপর অভিমান করে তার সন্তানটি মৃত্যুর পথ বেছে নিলো।

সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করে। পুলিশ রাতে তার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে।

আরমান হোসেন সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রায়মানিক গ্রামের লিটন হোসেনের ছেলে। বিচ্ছিন্ন হওয়া স্বামী-স্ত্রীর এই হতভাগ্য সন্তান তার নানাবাড়ি বালিয়াডাঙ্গা থেকে বালিয়াডাঙ্গা মান্দারতলা ব্র্যাক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো।

বাবা লিটন হোসেন জানান, ছেলের বয়স যখন দুই বছর, তখন তিনি মালয়েশিয়া যান। তিনি বিদেশ থাকা অবস্থায় স্ত্রী শিল্পী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

‘আমি বিদেশ থাকা অবস্থায় শিল্পীর গর্ভে একটি মেয়ে সন্তান আসে। পরকীয়ার কারণে আমি শিল্পীকে তালাক দিই। কিন্তু ছেলের লেখাপড়াসহ সব খরচ আমি দিতাম। গতকাল সোমবার বিকেলে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে। আমি নিশ্চিত, আরমানের মা শিল্পী কোনো অঘটন ঘটিয়েছে। যার কারণে আমার শিশু সন্তানটি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, অভিযোগ করে বলেন বাবা লিটন।

কিন্তু শিশুটির মা শিল্পী বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশ থাকে। তার অনুপস্থিতিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে নির্যাতন করতো। সেই কারণে আমি তাকে তালাক দিই। মাস দুয়েক আগে লিটন বিদেশ থেকে এসেছে। আমার ছেলে আরমান গতকাল সকালে তার বাবা লিটনের কাছে গিয়েছিল। আরমান শুনে এসেছে তার বাবা লিটন আবার বিয়ে করবে। আরমান তার বাবাকে বিয়ে করতে নিষেধ করলেও লিটন তাতে রাজি হয়নি। লিটন বিয়ে করলে আরমান আত্মহত্যা করবে বলে বাবাকে হুমকিও দিয়েছিল। এর পরে ওই দিন বিকেলে বাড়িতে এসে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়। রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়।’
কোতয়ালী থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, খবর শুনে নিহতের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, ছেলেটির মা শিল্পী কাজের সন্ধানে বিদেশ যাবে। কিন্তু ছেলে আরমান মাকে বিদেশ যেতে বাধা দেয়। ছেলের কথা না শুনে শিল্পী গতকাল দুপুরে বিদেশ যাওয়ার জন্য ঢাকায় রওনা দেয়। বিকেলে ছেলেটি আত্মহত্যা করে। আসলে মা-বাবার দ্ব›েদ্বর কারণে শিশুটি মারা গেল।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.