শৈশবের দূরন্তপনা সবার মনে কাজ করে । সবার শৈশবকাল যদি বলি এ্কই ধরনের আমার মনে হয় ভুল হবে না । সে বড় লোকের হউক বা গরীবের ছেলে। সেই বাল্য জীবনের স্মৃতি এখনো মনে ধারণ করে রেখেছে প্রতিটা মানুষ। বাবার হাত ধরে হাটা , সকালে বাবার সাথে নাস্তার দোকানে গিয়ে পরোটা -ডাল দিয়ে নাস্তা করা, বাবার হাতের দৈনিক ৫টাকা পকেট খরচ। প্রতিদিন স্কুল থেকে আসার সময় ১টাকার ২টা আইসক্রিম নিয়ে দুজনে খাওয়া । ৫টাকার সেই সুইঙ্গাম পকেটে রেখে সময়মতো একটি করে মুখে পুরে দেওয়া, আবার সেই টাকা বাঁচিয়ে দিয়ে সিনেমা দেখা এ যেন এক মধুর জীবন । বাবার সাথে আমার সময় বেশি দিনের নয় আমি যখন এসএসসি দিবো ঠিক ৩ মাস আগে বাবা মারা যান । বাবা পেশায় এলজিইড়ি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সরকারি বাস ভবনে থাকতাম। বাবা আমাকে পছন্দ করতো সেটা বুঝতে পারতাম তিনি মুখে কিছু না বললেও । কারণ হিসাবে বলতে পারি আমি বাবার কাছ থেকে কখনো খরচের জন্য টাকা টাইনি । বাবা নিজেই দিতেন ড়েকে । বাবাকে প্রতি শুক্রবারে আমি গোসল করিয়ে দিতাম । আমি নিজে বাবার পুরো শরীরে সাবান মেখে দিয়ে ভাল করে গোসল করানো ছিল আমার দায়িত্বের মতো । কোন কারণে আমি লুকিয়ে থাকলে বাবা গোসল না করে আমার জন্য অপেক্ষা করতো এমনও সময় গেছে। বাবাকে প্রতি শুক্রবারে ভালভাবে গোসল করানো আমার রুটিনের একটি ছিল । অফিসের একটা সাইকেল ছিল । আক্তার আঙ্কেল বলে একজন স্টোরের দায়িত্বে ছিল । কোন রকম বুঝিয়ে বিকালে সাইকেল নিয়ে বের হলেই বাবা দেখলে অন্য সাইট দিয়ে চাঁদ মিয়া নানাকে (অফিস কর্মচারি হলেও বাবা ওনাকে নিজের পিতার মতো সম্মান করতেন) । দিয়ে সাইকেল নিয়ে আসতেন ।
আমি জানি না জীবন শুধু আমার পরিবর্তন হলো নাকি আমার মতো সবার মনের ভিতরে একই চিন্তা কাজ করে। এইতো কিছুদিন আগের কথা, পকেটে মারবেল নিয়ে স্কুল ছুুটির পর পুরানো কোন বিল্ডিং এর নিচে গিয়ে মারবেল খেলতাম । বিকাল হলেই বন্ধুরা একসাথে মিলে কথা বলতে বলতে পুরো ছোট্র শহরটাকে এক চক্কর দেওয়া রীতিমত রুটিনে থাকতো । রমজান মাসের পুরো একমাস ছুটি থাকায় মারবেল ও ক্রিকেট খেলায় মত্ত থাকা এ যেন জীবনের পরম পাওয়া ।
গান শোনা যখন শুরু করলাম তখন থেকে মনটা যেন আরো হাওয়ায় উঠতে থাকতো । জেমসের বেশ ভক্ত ছিলাম । সেই সাথে হাসানের ক্যাসেট যখন বাজারে আসতে শুরু করলো তার গানও বেশ শুনতাম বড় আওয়াজে। জেমস এর ”যদি কখনো ভুল হয়ে যায় তুমি অপরাধ নিও না” ”ছেলে আমার বড় হবে” , আবার হাসানের ”ও মায়া মায়ারে” এতদিন পরে প্রশ্ন জাগে” এসব গান বেশ শুনতাম লুকিয়ে লুকিয়ে । এমন নয় আবার খালিদ হাসান মিলু রবি চৌধুরী আর আসিফেরে মতো গায়কের গান শুনিনি। আসিফের সেই জনপ্রিয় গান ”ও প্রিয়া তুমি কোথায়”মনে হচ্ছে সেদিনের গান।
বাবা কখনো টেলিভিশন কেনার পক্ষে ছিল না । আমরা যখন বাইরে গিয়ে টিভি দেখা শুরু করি বাবা ১৪” টিভি কিনেছিলেন সিঙ্গার থেকে সাকদাকালো। এন্টেনাসহ ৭ কি ৮ হাজার খরচ হয়েছিল । ও হ্যা টেলিভিশনের কথা যখন উঠলো আরেকটি কথা বলি । তখণ আলিফ লায়লা, কোথাও কেউ নেই , ম্যাকগাইভার ব্যাটম্যান, সুপারম্যানসহ বেশ কয়েকটি সিরিজ ও নাটক বেশ জনপ্রিয় ছিল । আমার এখনো মনে আছে যখন কোথাও কেউ নেই নাটকে বাকের ভাইয়ের ( অভিনেতা আসাদুজ্জামান নুর) ফাঁসি হলো মিতালী ক্লাব থেকে অনেকে কেঁদে কেঁদে বের হয়েছে। কি একটা মজার সময় পার করেছি বাল্যকালের সেই দূরন্তপনায় ।
পরিবারের কোন দায়িত্ব নেই শুধু পুরোটা দিন খেলা আর ঘুরা ছাড়া। খেলা বলতে ক্রিকেট বেশি খেলতাম । স্কুল বন্ধ থাকলে সকাল থেকে ক্রিকেট আর স্কুল চলাকালিন বিকাল থেকে শুরু হতো ক্রিকেট খেলা। খেলায় পারদর্শী না হলেও বাম হাতি বোলার হওয়ার কারণে মোটামুটি একটা ভাব নিতাম । তবে আমাদের কয়েকজন বন্ধু আছে তাদের মধ্যে মাহবুব এর ব্যাটিং ও বোলিং ছিল দূরন্ত। যোগ করতে হয় সুমনের কথা,যাকে আমরা সবাই মজা করে বাইট্টা সমুইন্না বলে ডাকতাম। (রাগ করিস না বন্ধু) তার বোলিং ছিল অসাধারণ । আরেকজন আছে বাবলু । সে এখন বান্দরবান আছে তার বোলিং স্পিট বরার মতো না । আসলে সেদিনগুলোর কথা মনে করলে আবারো ইচ্ছে হয় ফিরে যেতে সেই বাল্য জীবনে । আমার প্রিয় বন্ধুর মধ্যে বাহাদুর অন্যতম। যে আমার বিপদে সবসময় এগিয়ে এসেছে।
আর যার সাথে আমি সবসময় ঝগড়া করতাম আমার আরেক বন্ধু শামসুল আলম। সে এখন সিনিয়র আইনজীবী বান্দরবান জেলার৷
এখন আমরা যেভাবে মোবাইলে আসক্ত তখন মোবাইলের ব্যবহার ছিলই না । কারো সাথে যোগাযোগ করতে হলে চিঠি অথবা টেলিফোন অফিসে গিয়ে তাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যদি যার সাথে যোগাযোগ করছি তার যদি টেলিফোন থাকে। তার মানে এই নয় আমরা তখন স্মার্ট ছিলাম না । আমি প্রথম মোবইল কিনেছিলাম ২০০৩ সারে খুব সম্ভবত। ফিলিপস্ ডিগা । তখন মূল্য ছিল ৩৫ হাজার । মাসুদ রানার তিন গোয়েন্দা থেকে শুরু করে চাচা চৌধুরীর কৌতুক সব ধরণের বই পড়া হতো । এমন নয় হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলনের বই পড়িনি। বই পড়া যেন সেইসময় নেশা ছিল । আমার এমনও সময় গেছে হুমায়ুন আহমেদের একটা গল্পের বই একবারে শেষ করেছি। এমনভাবে যদি স্কুলের বই পড়তাম তবে আরো আগে যেতে পারতাম । আজকে আমার স্বীকার করতে লজ্জা নেই আমি বেশ ফাঁকিবাজ ছিলাম। সময়কে কখনো মূল্যায়ন করিনি।
আমার কয়েকজন বন্ধু ছিল সিনেমা পাগল। বাংলা সিনেমা ৯০ দশকের একটি সিনেমাও বাদ যাইনি আমার ধারনা । এ্যাকশন হিরো রুবেলের লড়াকু থেকে শুরু করে সব শেষ সালমান শাহ রিয়াজের সব ছবি দেখা হয়েছে । লড়াকু ছবিতে নায়ক রুবেলের বড়ভাই সোহেল রানা তার একটি ডায়ালগ ছিল আমি বাইশারির সোহেল রানা। এই বাক্যটা শোনে পুরো সিনেমা হল হাততালি দিতো । এই জীবনে এসে এখন অনেক কথা মনে পড়ে । সিনেমা দেখতাম তা বাবা পছন্দ করতেন না । না জানিয়ে দেখতাম বাবা হয়তো বুঝতো কিন্তু আমাদের বুঝতে দিতেন না তিনি বুঝতে পেছেন আমরা সিনেমাি দেখে আসছি।
ও হ্যা সে সময় টিভিতে সিনেমা দিতো মাসে একটি । কখন দিতো তা জানার জন্য তখন মাসিক টেলিভিশন নামে একটি ম্যাগাজিন বের হতো তা কিনে রেখে দিতাম সূচি দেখার জন্য ।
এমন ভাববেন না সব খারাপ দিকে আমার জীবনের। প্রতিদিন সকালে দৈনিক কর্ণফুলি ও বিকালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার পাঠক ছিলাম আমরা ভাইবোন। বাবা অফিস থেকে আসার আগে আমরা ভাইবোন মিলে একেকজন পাতা আলাদা করে একেক জন একটি করে নিয়ে পড়ে ফেলতাম আমার পাতা শেষ হলে আমারটা দিয়ে বড় আপার কাছ থেকে ঐ পাতাটি নিতাম। পুরো পত্রিকা পড়ার পর আবার আগের মতো ভাজ করে বাবার জন্য রেখে দিতাম। আরো মজার ছিল মাস শেষে সব পত্রিকা কেজি দরে কে আগে বিক্রি করতে পারবে। যে আগে বিক্রি করবে টাকা তার । সেই সময়গুলো বেশ মনে পড়ে ।
কখনো সময়কে গুরুত্ব দিইনি। বাবা কেন আমাদের বকতেন । বাবা কেন আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বুঝিয়ে বলতেন এখন বেশ বুঝে এসেছে, তবে সময় এখন আর নেই । সেই ছোট বয়সের কথায় ও কাজে যদি ফিরে যেতে পারতাম একটা মিনিটও অপেক্ষা করতাম না । জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। অনেক বিলাসী জীবন যাপন করেছি এই ৪০ বছরের জীবনে। তারপরেও বাবার দেওয়া সেই ৫টাকার লোভ এখনো সামলাতে পারি না। বাবার সরকারি চাকরি আর পরিবারে যা আছে তা দিয়ে বেশ ভাল চলে যেত । বাবা কখনো অভাব কি তা আমাদের বুঝতে দেননি। বাবাকে আমি বেশি সময় পাইনি আমি যখণ এসএসসি দিবো ঠিক ৩মাস আগে বাবা মারা যান । এই যতটুকু সময় পেয়েছি বাবার সাথে থাকার এই সময়টুকুই আমার জীবনের শ্রেষ্ট সময়। আমি এখন বেশ ভাল সময় দিয়েই যাচ্ছি,তারপরেও বাবার দেওয়া সেই সময়ের তুলনায় আমার এই ভাল সময় আমার কাছে তুচ্ছ । এখন হাতে স্মার্ট ফোন আছে, তাও অনেক দামি । ঘরে ওয়াইফাই আছে ,রঙ্গিন স্মার্ট টেলিভিশন আছে, আগের সেই কম্পিউটার নয় এখন ল্যাপটপ আছে বেশ আধুনিক । তারপরেও সেই দিনের স্বাদ ভুলতে পারি না । আগের সেই বন্ধুও নেই । আগের মতো আর গান শুনতে ইচ্ছে করেনা । গল্পের বই অনেক সময় হাতে নিলেও পুরোটা পড়া হয়ে উঠে না । সব শেষ এক রাতেই হুমায়ুন আহমেদের দুটি গল্পের বই শেষ করেছিলাম ঢাকায় আমার বড়বোনের বাড়িতে গিয়েছিলাম তখন। তাও প্রায় ১বছর হবে হতে চলেছে । যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু শান্তি পেতে নিজেকে আগের মতো চিন্তাহীন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি ।
মোঃ নেজাম উদ্দিন
গণমাধ্যম কর্মী।
কক্সবাজার
I loved as much as you will receive carried out right here The sketch is tasteful your authored subject matter stylish nonetheless you command get got an edginess over that you wish be delivering the following unwell unquestionably come further formerly again as exactly the same nearly very often inside case you shield this hike