বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব

বান্দরবান প্রতিনিধি
নববর্ষ উপলক্ষে বান্দরবানে বুধবার সকাল থেকে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাংগ্রাই উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সকালে বান্দরবান রাজার মাঠে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের সূচনা করেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলা নববর্ষ উৎসব শুরু হয়েছে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা বৈসু-বৈসুক, বিজু এবং সাংগ্রাই নামে নববর্ষ উদ্‌যাপন করে। বান্দরবানেও বৈসুক, বিজু হলেও ‘সাংগ্রাই’ উৎসব আলাদা মর্যাদা পায়। মারমা জনগোষ্ঠী প্রধান বান্দরবানে সাংগ্রাই হয়ে ওঠে প্রধান উৎসব।

বাংলা বছরের শেষ দিন (চৈত্র সংক্রান্তি) থেকে সাংগ্রাই এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এবারও বাংলা বছরের শেষ দিন বুধবার (১৩ এপ্রিল) সাংগ্রাই উৎসবে মেতে ওঠে মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, ত্রিপুরা, খুমিসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ।

আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব উদ্‌যাপন কমিটি ও উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করে। করোনার কারণে গত দুই বছর বাংলা নববর্ষ, সাংগ্রাই উদ্‌যাপন করা হয়নি। দুই বছর পর উৎসবের আয়োজন তাই নতুন মাত্রা পেয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে বান্দরবান শহরে নতুন নতুন পোশাক পরে নানা বয়সী মানুষ সমবেত হয়। বান্দরবান শহরের রাজার মাঠ হয়ে ওঠে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। সকাল ৮টা নাগাদ রাজার মাঠে বেলুন উড়িয়ে চার দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী ও সাংসদ বীর বাহাদুর উশৈসিং।

সাংগ্রাই উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ‘নববর্ষ পাহাড়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। এর মাধ্যমে আমাদের স্ব স্ব রীতি ও বাঙালিদের নববর্ষ উৎসব পাহাড়কে একত্রিত করে। এ উৎসব একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ নির্মাণ আর পার্বত্য এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অবদান রাখে।’

সাংগ্রাই উৎসবে সকালে রাজার মাঠ থেকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া তরুণীরা
সাংগ্রাই উৎসবে সকালে রাজার মাঠ থেকে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া তরুণীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
এর পর পার্বত্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে শুরু হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মঙ্গল শোভাযাত্রা। রাজার মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেএসআই প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

বান্দরবান কেএসআই পরিচালক মংনুচিং বলেন, সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন এ উৎসবে মিলেমিশে একাকার। পাহাড়ে বাংলা নববর্ষ হয়ে ওঠে সর্বজনীন উৎসব।

এদিকে উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই জানান, বাংলা বছরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে বুদ্ধমূর্তিকে শহরের উজানীপাড়া ঘাটে সাঙ্গু নদীতে স্নান করানো হবে। এর পর সাংগ্রাই এর প্রধান আকর্ষণ মৈত্রী পানি বর্ষণ খেলা শুরু হবে। ১৫ এপ্রিল বিকেলে সাঙ্গু নদীর পাড়ে মৈত্রী পানি বর্ষণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। রাত ৮টায় পাড়ায় পাড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে পিঠা উৎসব চলবে। পিঠা উৎসব ১৬ এপ্রিলও রাতে চলবে। পরে এসব পিঠা বিহারে বিহারে বৌদ্ধ ভান্তে-ভিক্ষুদের বিতরণ করা হবে।

এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বান্দরবানে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। শহরের রাজার মাঠে এসব অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করা হবে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.