বাইশারীর তদন্ত কেন্দ্রের আবারো ইনচার্জের দায়িত্ব নিলেন এস অাই মুসা

 

 

 

আবদুর রশিদ নাইক্ষ্যংছড়ি,বান্দরবান

 

সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য দুর্গম পাহাড়ী জনপদ নাইক্ষ্যংছডি উপজেলার ক্রাইমজোন বাইশারীর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ হিসেবে আবারো দায়িত্বভার নিলেন বান্দরবান জেলার আলোচিত উপ-পরিদর্শক আবু মুসা।

জানা যায়, ২০১৬ সালের আগষ্টের প্রথম দিকে এস আই আবু মুসা বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপরাধ প্রবন বাইশারীতে গত এক বছরে তিনি উল্লেখযোগ্য অপরাধ নিয়ন্ত্রন ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করায় জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে আবারো একই কর্মস্থলে দ্বিতীয়বার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেন। নাইক্ষ্যংছডি থানা ও জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগনের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা বলেন, কোন পুলিশ অফিসার ধারাবাহিক ভাবে কোন কর্মস্থলে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারলে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে তাকে একই কর্মস্থলে পুনঃ বহাল করে থাকেন। সেদিক বিবেচনায় এস আই মুসাকে আবারো একই কর্মস্থলে পরবর্তী এক বছরের জন্য একই দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী জনপদ বাইশারীতে এক বছর আগে আলোচিত ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যা, আ’লীগ নেতাকে জবাই করে হত্যা, অপহরন, ডাকাতি ও বোমা বিস্ফোরন সহ অসংখ্য অপরাধ ঘটলেও সেই আতঙ্কিত জনপদে এস আই মুসা যোগদান করার পর এলাকায় নেমে আসে শান্তির সুবাতাস! এলাকায় অতিরিক্ত টহল, গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে পুলিশী পোস্ট এবং বিশেষ নজরদারি সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকাকে করে চুরি ও ডাকাত মুক্ত। স্থানীয় সুত্র জানায়, গত বছর এস আই আবু মুসা বাইশারীতে আসার পর থেকে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে যা অতীতে কোন সময়ে ছিলনা। বাইশারীর বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,গত এক বছরে বাইশারীতে দুয়েকটি অপহরনের ঘটনা ব্যতীত আর অন্যকোন অপরাধ যেমন চুরি,ডাকাতি, খুন এসবের কিছুই ঘটেনি। কোন অপরাধ ঘটার খবর পেলেই পুলিশ দ্রুত পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। এসব বিবেচনায় ক্রাইমজোন বলে পরিচিত বাইশারীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে । এলাকাবাসী পরিশ্রমী ও দক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তাকে বাইশারীতে পুনঃ দায়িত্ব দেয়ায় বান্দরবান জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

এই এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক জানান “এস আই আবু মুসা আসার পর হইতে চুরি, ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনিনি। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে মামলা- মোকাদ্দমাও কম হয়েছে”।

বাইশারী ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান ” আমার এলাকায় পুলিশের টহল ও ভূমিকা আগের চেয়ে অনেক ভাল। উপজেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বেশ কয়েকবার রেজুলেশন আকারে একথা স্বীকার করা হয়েছে যে বাইশারীতে গত এক বছরে চুরি,ডাকাতি ও খুনের ঘটনা ঘটেনি এবং এজন্য এস আই আবু মুসা সহ সকল পুলিশ সদস্যদেরকে এলাকাবাসীর পক্ষ হইতে সাধুবাদ জানানো হয়েছে”।

স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোছাইন জানান, “গত বছর আগষ্টের আগ পর্যন্ত্য বাইশারীতে চুরি, অপহরন, বোমা নিক্ষেপ ও ৩/৪ জন খুন সহ অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিরাত্রে ডাকাত ডাকাত বলিয়া মাইকিং করা হত। কিন্তু গত বছর আগষ্ট মাসে বর্তমান আইসি এস আই আবু মুসা এই এলাকায় আসার পর হইতে ডাকাত বা ডাকাতি শব্দটা একটিবারের জন্যও শুনিনি। তিনি প্রতিরাত জেগে থেকে বাইশারীবাসীর শান্তিতে ঘুমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত এক বছরে এই এলাকায় একটা চুরি বা ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।”

বাইশারী এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, বাইশারীতে গত এক বছরে ২/৩ টি অপহরনের বিষয়ে শুনেছি। তবে ডাকাতি,চুরি বা খুন হয়েছে এরকম খবর আমি শুনিনি। “

বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস চন্দ্র দাস জানান, “বাইশারীতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে এখন অনেক ভাল। চুরি,ডাকাতি বা খুন এসব আগের মত নেই। তবে অপহরন বিষয়ে মানুষের মাঝে একটু ভয় কাজ করে।”

বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাংগীর আলম বাহাদুর বলেন, “বাইশারীতে গত একবছরে চুরি,ডাকাতি, খুন কিছুই ঘটেনি। শুধু গহীন পাহাডের ভেতর হইতে কয়েকটা অপহরনের ঘটনা ঘটেছিল। বর্তমান আইসি এস আই আবু মুসা প্রতিরাতে এলাকার নিরাপত্তায় প্রচুর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।”

এস আই আবু মুসার সাথে কথা বলে জানা যায়,গত এক বছরে তিনি বাইশারী এলাকাকে অপরাধমুক্ত রাখার আন্তরিক চেষ্টা চালিয়েছেন এবং সে লক্ষ্যে রাত্রি টহল ও স্থায়ী চেক পোস্ট বসিয়ে মানুষের নিরাপত্তা এবং চুরি,ডাকাতি ও খুনের মত জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিনি এলাকায় অপরাধ শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, কাজ করতে গিয়ে ডাকাত -অপহরন সদস্যদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় এমন একটা মহল ছত্রছায়ায় থেকে তার সাফল্যে ও এলাকার শান্তিতে ব্যঘাত ঘটিয়ে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে। ইদগড়-বাইশারী সড়কের অপহরন প্রতিরোধেও রাস্তার পাশের জঙ্গল কাটা ও পুলিশ চেক পোস্ট বসানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। “

পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, এস আই আবু মুসা গত দু’ বছরে লামা থানা, বান্দরবান সদর থানা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে এবং নির্বাচনকালীন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছেন। মামলা তদন্ত, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন ও ভিকটিম উদ্ধার সহ নানা দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের এই পুলিশ উপ-পরিদর্শকের বেশ সাফল্য রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি তৌহিদ কবির এ প্রসঙ্গে বলেন,এস আই আবু মুসা নিশ্চয় দক্ষতা ও সাহসের সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। তা নাহলে সে একটা তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্ব এক বছর ধরে পালন করতে পারতেন না। তাকে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ হিসেবে পুনঃ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এএসপি (লামা সার্কেল) আবদুস সালাম জানান, “বাইশারীর মত ক্রাইম এলাকায় এস আই আবু মুসাকে কিছু বিশেষ বিবেচনায় পুনরায় ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সে অপরাধ নিয়ন্ত্রনে সাফল্য দেখিয়েছে। পুলিশ সুপার মহোদয়ের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর এ ধরনের ইউনিট ইনচার্জের দায়িত্ব অর্পনের বিষয়গুলো নির্ভর করে থাকে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.